সান্দাকফু বেড়াতে গিয়ে একাধিক পর্যটকের মৃত্যুর খবর সাম্প্রতিক সময়ে শিরোনামে এসেছে। শুধু সান্দাকফু নয়, অধিক উচ্চতার যে কোনও জায়গায় এমন ঘটনা খুব বিরল নয়। বেড়াতে গিয়ে শরীর খারাপ বা মৃত্যুর মতো দুর্ঘটনা কখনওই কাম্য নয়। বিশেষ করে পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়ার আগে কিছু সাবধানতা যে কোনও বয়সের লোকের মেনে চলা উচিত। যেহেতু সমতল থেকে পাহাড়ে বেড়াতে গেলে পর্যটকরা অল্প সময়ের মধ্যে অনেকটা অল্টিটিউড বা উচ্চতায় পৌঁছন, শরীর তার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সময় কম পায়। তাই সবচেয়ে আগে মাথায় রাখা উচিত, সময় হাতে নিয়ে, শরীরকে সইয়ে তবেই উঠতে হবে পাহাড়ে।
যা যা মেনে চলতেই হবে
পাহাড়ের অধিক উচ্চতায় বেড়াতে গেলে বয়স যা-ই হোক, কিছু বিষয় মাথায় রাখা দরকার। তার মধ্যে অন্যতম হল—
আগাম সতর্কতা
পাহাড়ে গিয়ে কার শরীর খারাপ হবে, কার নয়, তা আগে থেকে অনুমান করা সম্ভব নয়। তবে যাঁরা ইতিমধ্যেই কোনও না কোনও শারীরিক সমস্যার মধ্যে রয়েছেন কিংবা বয়স অনেকটাই বেশি, তাঁদের ক্ষেত্রে সতর্কতা বেশি নেওয়া প্রয়োজন। তবে সব বয়সি পর্যটকেরই নিয়ম মেনে চলা উচিত। মেডিসিনের চিকিৎসক ডা. অরুণাংশু তালুকদার বললেন, ‘‘শ্বাসকষ্ট শুধু বয়স্কদের হবে, কমবয়সিদের হবে না, এমন ধারণা ভুল। উচ্চতা বাড়লে অক্সিজেনের ঘনত্ব কমে আসে বাতাসে। শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। সেই নির্দিষ্ট ব্যক্তির সহ্যশক্তি কতটা, তার উপরে নির্ভর করে অসুস্থতার মাত্রা। শরীর চেষ্টা করে যেটুকু অক্সিজেন পাওয়া যাচ্ছে, তা দিয়ে ব্রেন, হার্ট, কিডনিকে সচল রাখতে। সে সময়ে মুভমেন্ট কমিয়ে আনতে হবে। চেষ্টা করতে হবে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব লো অল্টিটিউডের কোনও জায়গায় নেমে আসতে।’’
সাবধানের মার নেই
নিয়মিত ট্রেকিং টুরে নিয়ে যান ঋদ্ধ দত্ত। তাঁর কথায়, ‘‘ইদানীং দার্জিলিং থেকে লোকে সান্দাকফু সাইট সিয়িং করে চলে আসছেন। আগে যেখানে দিনকয়েক ধরে ট্রেক করে সান্দাকফু পৌঁছনো যেত, সেই জায়গা এখন সুগম হয়ে যাওয়ায় অনেক সাধারণ পর্যটকই নিয়মকানুনের ধার ধারেন না। আমরা দিঘায় গিয়ে যা যা করি, সান্দাকফু-তে গিয়েও যদি তা-ই করি, তা হলে ফল যা হওয়ার তা-ই হবে। যাঁরা খারাপ ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই সরাসরি ট্রাভেল করেছেন। ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি শ্বাসকষ্ট উপেক্ষা করেই থেকে গিয়েছিলেন, সময় থাকতে নীচে নেমে আসেননি। শরীর যখনই জানান দেবে, তখনই সাবধান হতে হবে।’’
বিপদের লক্ষণ
শরীর খারাপের এতটুকু লক্ষণ দেখা দিলেই সাবধান হোন। অপেক্ষাকৃত নিচু কোনও জায়গায় নেমে আসার ব্যবস্থা করতে হবে। অল্টিটিউড সিকনেসের কিছু প্রাথমিক লক্ষণ হল—
যথাযথ ভাবে অ্যাক্লাইমেটাইজ় না করলে এই লক্ষণগুলি দেখা দিতেই পারে। সেই কারণে পাহাড়ে ওঠার আগে কম উচ্চতার অংশে এক-দু’ দিন থাকতেই হবে। ডা. তালুকদারের কথায়, ‘‘হঠাৎ করে অল্টিটিউড গেন করলে বডি কন্ডিশনিং করার সময় পায় না। যেমন, যাঁদের ছোট ছোট হার্ট অ্যাটাক বা ইসকিমিয়া হয়েছে, তাঁদের হার্টের সহ্যশক্তি তুলনামূলক ভাবে বেশি হয়। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কার শরীর, কী ভাবে সাড়া দেবে, তা ব্যক্তিবিশেষের উপরে নির্ভর করে। তাই বিশ্রাম নিয়ে ধীরে ধীরে অল্টিটিউড গেন করাই ভাল।’’
হাই-অল্টিটিউড এরিয়ায় যাওয়ার আগে অনেকেই ওষুধ খেয়ে নেন, মাথা যন্ত্রণা, গা-বমি ভাব এড়ানোর জন্য। অনেক সময়ে এই ধরনের ওষুধ ব্রেন সেলকে অ্যাক্টিভ রাখলেও শরীর যদি মানিয়ে নিতে না পারে, রোগী ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়বেন।
নিয়ম মেনে চললে, সাবধান থাকলে অধিকাংশ সময়েই কোনও অসুবিধে ছাড়াই দিব্যি বেড়িয়ে আসা যায় উঁচু পাহাড়ে। তাই ভয় না পেয়ে বরং সতর্কতা অবলম্বন করুন, আর ব্যাকপ্যাক গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy