দিনভর পরিশ্রমের পরে কারও যেমন দু’চোখের পাতা দ্রুত ভারী হয়ে আসে, কারও আবার হয় এর উল্টোটা। আলো বন্ধ করে, দু’চোখ বুজে শুয়েও ঘুম আসতে চায় না। কারও আবার ঘুম এলেও মাঝরাতে ভেঙে যায়।
ঠিকমতো ঘুম না হলে, তার প্রভাব পড়ে শরীর এবং মেজাজে। কাজে মন বসানোও কঠিন হয়ে যায়। এ নিয়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে গবেষণাও চলছে। তবে, ঘুম আনতে অনেকে ঘরোয়া টোটকাও বেছে নেন। কেউ বলেন হলুদ-দুধ খেলে ঘুম ভাল হয়। কেউ বলেন, আখরোট, কলাও এই ব্যাপারে সহায়ক হতে পারে। তবে ঘুম আনতে পাতে রাখতে পারেন কুমড়ো বীজও।
কুমড়োর বীজ স্বাস্থ্যের জন্য ভাল, জানেন অনেকেই। পুষ্টিবিদের মতে ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম, জ়িঙ্ক এবং ভিটামিন বি-র মতো উপাদানগুলি ঘুম আনতে সাহায্য করে। শরীরে এই উপাদানগুলির অভাব হলে ঘুমের সমস্যা শুরু হয়। সেরোটোনিন ও মেলাটোনিনের মতো হরমোনের অভাবেও অনিদ্রার সমস্যা শুরু হয়। পুষ্টিবিদ রিদ্ধিমা খামসেরা বলছেন, ‘‘কুমড়োর বীজে এমন বেশ কিছু উপাদান রয়েছে, যা ঘুম আনতে সাহায্য করে।
ম্যাগনেশিয়াম: স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত এবং শিথিল করে ঘুম আনতে সাহায্য করে ম্যাগনেশিয়াম। শরীরের প্রতি দিনের প্রয়োজনীয় ম্যাগনেশিয়ামের ৪০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব মাত্র ২৮ গ্রাম কুমড়োর বীজ থেকেই।
ট্রিপটোফ্যান: কুমড়োর বীজে রয়েছে ট্রিপটোফ্যান নামক একটি উপাদান, যেটি আসলে এক প্রকার অ্যামাইনো অ্যাসিড। ঘুমের চক্র নিয়ন্ত্রণ করে সেরোটোনিন এবং মেলাটোনিন নামক দু’টি হরমোন। ট্রিপটোফ্যান সেরোটোনিন ক্ষরণে সাহায্য করে। এই সেরোটোনিন রূপান্তরিত হয় মেলাটোনিন-এ। ঘুম আনতে মেলাটোনিনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
জ়িঙ্ক: এই খনিজ ট্রিপটোফ্যানকে সেরোটোনিনে রূপান্তরিত করে। সেরাটোনিন আবার মেলাটোনিনের উৎপাদনে সাহায্য করে। মেলাটোনিন ঘুম এবং জাগরণের শারীরিক চক্রটিকে নিয়ন্ত্রণ করে। সেই কারণে শরীরে জ়িঙ্কের ঘাটতি হলে ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড: ফ্যাটি অ্যাসিড প্রদাহ কমাতে এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। ঘুমের সঙ্গে মস্তিষ্কের যোগ গভীর। পরোক্ষে এই উপাদানও ঘুমের পক্ষে সহায়ক।
পুষ্টিবিদ রিদ্ধিমা বলছেন, কুমড়োয় রয়েছে গ্লাইসিন নামে এক ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড, যেটি দ্রুত ঘুম আনার পাশাপাশি গভীর ঘুমের সহায়ক হয়। অতীতে গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গ্লাইসিন শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে ঘুমের ইঙ্গিত দেয়। উদ্বেগ কমাতেও সাহায্য করে এই উপাদান।
কী ভাবে কুমড়ো বীজ খাবেন?
কিডনি, লিভারের সমস্যা না থাকলে একজন সুস্থ এবং প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ দিনে ২৮-৩০ গ্রাম কুমড়ো বীজ খেতে পারেন। বীজ শুকনো কড়ায় নেড়েচেড়ে নিয়ে স্ন্যাক্স হিসাবে অথবা স্মুদিতে মিশিয়ে খাওয়া যায়। স্যুপে ছড়িয়ে বা কুমড়ো বীজের মাখনও খেতে পারেন।