খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও শরীরচর্চার প্রতি অনীহা— এই সব কারণেই ঘরে ঘরে এখন কোলেস্টেরলের রোগী বাড়ছে। আর কোলেস্টেরল বাড়তে শুরু করলেই, আরও নানা রকম অসুখবিসুখ বাসা বাঁধতে থাকবে। কড়া বিধিনিষেধ জারি হবে খাওয়াদাওয়ায়। কোলেস্টেরল থাকলে অনেক কিছুই খাওয়া যায় না।কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেকেই রোজের খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেন দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার। এই অভ্যাস কি ভাল?
কোলেস্টেরল বাড়ার সঙ্গে দুধ না খাওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই, এমনটাই জানালেন পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী। তিনি জানান, দুধ বা দুগ্ধজাত খাবারে যদি অ্যালার্জি না থাকে, তা হলে দুধ খাওয়া যেতেই পারে। তবে এমন দুধ খাবেন না যাতে ফ্যাটের মাত্রা বেশি। উচ্চ কোলেস্টেরল থাকলে ডবল টোনড দুধ বা ফ্যাট ছাড়া যে দুধ পাওয়া যায়, তা খাওয়াই ভাল। চিজ়, মিল্কমেড জাতীয় খাবার না খাওয়াই ভাল। তবে পনির খাওয়া যেতেই পারে।
আরও পড়ুন:
শরীরে খারাপ ও ভাল দুই প্রকারের কোলেস্টেরল থাকে। খারাপ কোলেস্টরলকে বলা হয় ‘লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন’ (এলডিএল) এবং ভাল কোলেস্টেরলকে বলা হয় ‘হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন’ (এইচডিএল)। এটি খারাপ কোলেস্টেরলকে শোষণ করে এবং শরীর সুস্থ রাখে। হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়। তাই শরীরে এইচডিএল-এর সঠিক মাত্রা বজায় রাখা জরুরি। দুধ শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। অনেকেই আছেন, যাঁরা ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয় দুধ এড়িয়ে চলেন, তবে গবেষণা বলছে পরিমিত মাত্রায় দুধ খেলে ওজন বাড়ে না। দুধ থেকে তৈরি ঘি খাওয়াও শরীরের জন্য ভাল। তবে দিনে দু'চামচের বেশি ঘি না খাওয়াই ভাল। পরিমিত খেলে শরীরে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ঢুকবে, যা টক্সিন দূর করবে।
পুষ্টিবিদ জানাচ্ছেন, কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড যদি বেশি থাকে, তা হলে উদ্ভিজ্জ দুধ খেলে ভাল হয়। আমন্ড মিল্ক, ওট্ মিল্ক, কোকোনাট বা সয়া মিল্ক খেলে পুষ্টিও হবে, ওজনও বাড়বে না। উপরি পাওনা হল, হজমের সমস্যা দূর হবে। গরুর দুধে যতটা প্রোটিন থাকে, উদ্ভিজ্জ দুধে ততটা থাকে না। এই ধরনের দুধে প্রোটিনও দ্বিতীয় শ্রেণির। তবে ক্যালশিয়াম ও ভিটামিন ডি ভরপুর মাত্রায় থাকে। তা ছাড়া এই ধরনের দুধ সহজপাচ্য, ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকায় ওজন কমাতে চাইছেন যাঁরা, তাঁদের জন্য আদর্শ।
সয়া মিল্কে ভিটামিন ডি, ক্যালশিয়াম, ভিটামিন বি১২, আয়রন থাকে। ওট্স বা অন্য দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার এতটাই ফাইবারসমৃদ্ধ হয়, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এই ধরনের দুধে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি থাকে। তাই হার্টের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনির সমস্যা থাকলে উদ্ভিজ্জ দুধ খাওয়াই বেশি ভাল।