প্রতীকী ছবি।
করোনার বিপদ এখনও পুরোপুরি কাটেনি। তার মধ্যেই বাংলার আকাশে ডেঙ্গির কালো মেঘ। স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, করোনায় দৈনিক সংক্রমণের হার তলানিতে ঠেকেছে। কিন্তু মশাবাহিত রোগের ক্ষেত্রে পজ়িটিভিটির হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য ভবনও।
বর্ষাকালে ডেঙ্গির প্রকোপ প্রতি বছরই বাড়ে। প্রশ্ন হল, তা হলে গত দু’বছর সে ভাবে ডেঙ্গিরপ্রকোপ দেখা যায়নি কেন? চিকিৎসক মহলে এ বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে। একাংশের মতে, করোনায় আক্রান্তদের শরীরে যে প্রাকৃতিক অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছিল, তা ডেঙ্গিকেও প্রতিহত করেছে। এ বার করোনার সংক্রমণ কমতেই মাথাচাড়া দিচ্ছে ডেঙ্গি। অন্য মতটি হল, বিষয়টি আদৌ তা নয়। করোনার সময়ে জ্বর হলেই কোভিড পরীক্ষায় বেশি জোর দেওয়া হচ্ছিল। তাই জ্বরের রোগীদের সিংহভাগই ডেঙ্গি পরীক্ষা করাননি। এখন আবার মশাবাহিত রোগের প্রকোপ হু হু করে বাড়তে থাকায় ঘটছে ঠিক উল্টো। অর্থাৎ, সিংহভাগ রোগীই ডেঙ্গি পরীক্ষার উপরে জোর দিচ্ছেন, কোভিড পরীক্ষায় নয়। শহরের এক চিকিৎসকের কথায়, “ডেঙ্গি ও কোভিড, দুটোই হয়েছে, এমন রোগীও কয়েক জনকে পেয়েছি। বিষয়টি কিন্তু একেবারেই অস্বাভাবিক নয়।”
সংক্রামক রোগের চিকিৎসক যোগীরাজ রায়ের মতে, কোভিড রেসপিরেটরি ভাইরাসের আক্রমণে হয়। আর ডেঙ্গি হল ‘ভেক্টর-বোর্ন ডিজ়িজ়’। দু’টির মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই। ঠান্ডা পড়লেইমশাবাহিত রোগের প্রকোপ কমবে। তাঁর কথায়, “কোভিড ডেঙ্গিকে প্রতিরোধ করেছে, তেমনটা নয়। আসলে করোনার সময়ে মানুষ অনেক বেশি সচেতনতার পরিচয় দিয়েছেন। বাইরে কম বেরিয়েছেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থেকেছেন। তাই মশাবাহিত রোগের প্রকোপও কম ছিল। এখন তো সে সব আর মানার বালাই নেই।” স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, কোভিডের পজ়িটিভিটি রেট এখন ঘোরাফেরা করছে তিনথেকে চার শতাংশের মধ্যে। আর সেখানে গত অগস্ট থেকে প্রতি সপ্তাহেই ডেঙ্গির পজ়িটিভিটি রেট ঊর্ধ্বমুখী। অগস্টের শেষের দিকে যেখানে রাজ্যে ডেঙ্গি সংক্রমণের পজ়িটিভিটি রেট ছিল চার শতাংশ, সেখানে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে তা হয়েছিল ১৩ শতাংশ। অক্টোবরের একেবারে গোড়ায় তা কিছুটা কমে প্রায় ১১ শতাংশে দাঁড়ায়। যদিও পুজোর মরসুমে ডেঙ্গি পরীক্ষা কম হওয়ার ফলেই পজ়িটিভিটির লেখচিত্র অল্প নিম্নমুখী হয়েছে বলে দাবি চিকিৎসকদের।
কোভিডের অ্যান্টিবডি ডেঙ্গিকে প্রতিহত করতে পারছে, এমন দাবি করে গত বছর কয়েকটি গবেষণাপত্রও প্রকাশিত হয়েছে। ইমিউনোলজিস্ট দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, “এগুলি সবই গবেষকদের পর্যবেক্ষণ। তবে ওই পর্যবেক্ষণগুলি ছিল ডেঙ্গির সেরোটাইপ ডেং-১ ও ২-র ক্ষেত্রে। কিন্তু এখন রাজ্যে ডেং-৩-র প্রকোপ বেশি। আর যদি ধরেও নেওয়া হয়, ডেং-১ ও ২-র ক্ষেত্রে কোভিডের অ্যান্টিবডি কাজ করেছে, তা হলেও সেটা করোনা আক্রান্ত হয়ে তৈরি হওয়া প্রাকৃতিক অ্যান্টিবডি। প্রতিষেধক নেওয়ার ফলে তৈরি অ্যান্টিবডি নয়।”
আবার ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদারের কথায়, “ওই পর্যবেক্ষণগুলি পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত সত্য প্রমাণিত না হলেও, ভারত, ইজরায়েল, ব্রাজ়িল ও সিঙ্গাপুরের গবেষকদের নিরীক্ষণে একটি বিষয় উঠে এসেছে। তা হল, ডেঙ্গি ও কোভিডের ভাইরাসের মধ্যে ক্রস-রিঅ্যাক্টিভিটি, অর্থাৎ অ্যান্টিবডির সঙ্গে বিক্রিয়ায় সাযুজ্য রয়েছে।” তাঁর মতে, তাই এদের মধ্যে কিছুটা হলেও পারস্পরিক সুরক্ষা প্রদানের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কোভিড চলে গিয়ে ডেঙ্গি বৃদ্ধিতে সত্যিই সহায়তা করল কি না, সেটাও গবেষণার বিষয় হতে পারে।
কোনও একটি ভাইরাসের প্রকোপে যখন অতিমারি পরিস্থিতি চলে, তখন অন্য ভাইরাস চাপা থাকে বলেই পর্যবেক্ষণ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। এই বিষয়কচিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের কথায়, “সাধারণ ভাবে কোনও সংক্রমণের ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা ও রোগের গুরুতর আকার ধারণ করার আশঙ্কা যখন বৃদ্ধি পায়, তখন সেই রোগের পরীক্ষা করানোর প্রবণতাও বেড়ে যায়। সাধারণ মানুষ থেকে চিকিৎসকেরা কোভিডের চেয়ে ডেঙ্গির পরীক্ষাই বেশি করাচ্ছেন। তাই আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি মিলছে। কোভিডের থেকেও এখন চিকিৎসকেরা ডেঙ্গি নিয়ে বেশি চিন্তিত, কারণ তা রোগীদের অনেককেই সঙ্কটজনক করে তুলছে।” তাঁর মতে, চলতি মরসুমে ডেঙ্গিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিহত করার পাশাপাশিই মনে রাখতে হবে, করোনা কিন্তু নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। তাই পজ়িটিভিটি রেট এখন কম দেখা গেলেও ওই রোগকে অবহেলা করা ঠিক হবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy