সময়ের আগেই গরমে হাঁসফাঁস দশা। রোদের যা তেজ, তাতে খানিক ক্ষণ বাইরে থাকলেই শরীরে অস্বস্তি হচ্ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে উত্তাপের পারদ। সেই সঙ্গে গলা শুকিয়ে খটখটে হয়ে যাচ্ছে। বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে ব্যাগে জলের বোতলটি ঢোকানোর কথা সব সময় মনে থাকে না। অগত্যা দহনজ্বালায় প্রাণ জুড়োতে কেউ খান ডাবের জল, তো কেউ চুমুক দেন লেবুর জলে। এই গরমে রাস্তায় ডাব বিক্রিও বেড়ে গিয়েছে। লেবু বা পুদিনার জলও বিক্রি হচ্ছে দেদার। কচি ডাবের মিষ্টি জল তেষ্টা তো মেটায়ই, শরীর তরতাজাও করে দেয় নিমেষে। লেবুর জলে চুমুক দিলেই শরীরের অস্বস্তি দূর হয়। এখন কথা হল, এই তীব্র গরমে ডাবের জল বেশি উপকারী না কি লেবুর জল? কারা কোনটি খেলে বেশি উপকার পাবেন?
ডাবের জলে ভরপুর খনিজ
ডাবের জলে থাকে পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের মতো খনিজ পদার্থ । অতিরিক্ত পরিশ্রমের পর ক্লান্ত শরীরকে চাঙ্গা করতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ডাবের জল। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও ডাবের জল খুব উপকারী।
ডাবের জলে কোনও ফ্যাট নেই। ফলে ওজন বৃদ্ধির কোনও চিন্তাও নেই। যারা ওজন নিয়ে সচেতন, খাবার খুব মেপে খান, তাঁরা এই পানীয় নিশ্চিন্ত মনে খেতেই পারেন। পেট ঠান্ডা থাকবে। ডাবের জল হার্ট ভাল রাখতেও সাহায্য করে। এর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ক্লান্তি ও ঝিমুনি কমায়, শরীর চনমনে করে তোলে।
আরও পড়ুন:
ডিটক্স পানীয় লেবুর জল
লেবুর জল ভিটামিন সি-তে পরিপূর্ণ, যা শরীর থেকে টক্সিন বা দূষিত পদার্থ বার করে দিতে পারে। ওজন কমানো থেকে পেট ভাল রাখা, সবেতেই উপকারী লেবুর জল। রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, হার্ট ও কিডনি ভাল রাখে। লেবুর জল পরিমিত পরিমাণে খেলে হজমশক্তিও উন্নত হয়।
ডাবের জল না লেবুর জল— কারা কোনটি খাবেন?
শরীরে জলশূন্যতার লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ডাবের জল খেলে উপকার পাবেন। কারণ ডাবের জল শরীরে ইলেকট্রোলাইটসের ঘাটতি পূরণ করবে খুব তাড়াতাড়ি। শরীরের আর্দ্রতা ধরে রাখতে ডাবের জলের জুড়ি মেলা ভার।
যদি গরমে সতেজ ও তরতাজা হতে চান, তা হলে লেবুর জল ভাল। খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শরীর চনমনে হয়ে উঠবে। ভিটামিন সি রোদের তেজ থেকে শরীরকে রক্ষা করবে।
ডাবের জল ও লেবুর জল দুই পানীয়ই গরমে খুবই উপযোগী। যাঁরা ওজন কমাতে চাইছেন, তাঁরা সকালে খালি পেটে লেবুর জল খেতে পারেন, আর বেলার দিকে খেতে পারেন ডাবের জল। এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে, গরমে ডিহাইড্রেশনের ভয়ও থাকবে না।
তবে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। ডাবের জলে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম আছে। যাঁদের কিডনির সমস্যা আছে তাঁরা ডাবের জল খাবেন না। নিয়মিত ডাবের জল খেতে শুরু করলে শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে 'হাইপারক্যালিমিয়া' হতে পারে। ফলে শরীরে খনিজ উপাদানগুলির ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে।ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে ডাবের জল না খাওয়াই ভাল।
ফুসফুসের রোগ বা সিস্টিক ফাইব্রোসিস থাকলে ডাবের জল খাওয়া যাবে না।
আবার গ্যাস-অম্বলের সমস্যা যাঁদের বেশি, অ্যাসিড-রিফ্লাক্স হয়, তাঁরা খালি পেটে কখনওই লেবুর জল খাবেন না। এতে সমস্যা আরও বাড়বে। দাঁতের সমস্যা আছে অনেকেরই। দাঁত বা মাড়িতে সংক্রমণ থাকলে বা দাঁতের ব্যথার ওষুধ খেলে লেবুর জল খাওয়া যাবে না। ত্বকের অ্যালার্জি-জনিত সমস্যা থাকলে, কিডনির সমস্যাতেও লেবুর জল না খাওয়াই ভাল।