—প্রতীকী ছবি।
মেনোপজ় হওয়ার প্রায় বছরদুয়েক পরে হঠাৎ রক্তপাত শুরু হয়েছে রক্তিমার। প্রথমে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন তিনি। পরে বন্ধুর পরামর্শে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে দেখেন একটা বিনাইন পলিপ দেখা দিয়েছে। রক্তিমার ঘটনা থেকে কিছু প্রশ্ন উঠে আসে। মেনোপজ়ের পরেও ব্লিডিং কি আশঙ্কাজনক? এর পিছনে কী কী কারণ থাকতে পারে? দেখা যাক বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন—
ব্লিডিংয়ের কারণ দেখা জরুরি
গাইনিকোলজিস্ট চন্দ্রিমা দাশগুপ্ত বললেন, “৪৫ থেকে ৫২ বছর পর্যন্ত মেনোপজ়াল এজ ধরা হয়। কোনও মহিলার ৪৫ বছর বয়সের পরে যদি পিরিয়ডস এক বছর পর্যন্ত বন্ধ থাকে, সেটাকে মেনোপজ় হিসেবে ধরা হয়। মেনোপজ়ের পরে ব্লিডিং হওয়াটা কখনওই স্বাভাবিক নয়। কারণ ইউটেরাসের ভিতরের চামড়াটা (লাইনিং) পাতলা হয়ে আসে। শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনও আর নিঃসরণ হয় না। ফলে পিরিয়ডসও আর হয় না। মেনোপজ়ের পরে ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ ইউটেরাইন ক্যানসারের সম্ভাবনা কম হলেও থাকতে পারে।”
এই প্রসঙ্গে আর একটি দিক উল্লেখ করলেন গাইনিকোলজিস্ট ডা. অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়, “মেনোপজ়ের পরে অর্থাৎ পোস্ট মেনোপজ়ালে (ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার ১ বছর পরে) অনেকে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নেন। সে ক্ষেত্রে থেরাপি শুরু হওয়ার ছ’মাস পর্যন্ত একটুআধটু ব্লিডিং হতে পারে। কিন্তু হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি শুরু হওয়ার ছ’মাস পরেও যদি নন-সাইক্লিকাল ব্লিডিং দেখা যায়, চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।।”
এ ছাড়াও কিছু কারণে ব্লিডিং হতে পারে। পলিপ বা নন-ক্যানসারাস গ্রোথ থাকতে পারে ইউটেরাসের মধ্যে। তা থেকে রক্তপাত হতে পারে। অ্যাট্রোপিক ভ্যাজাইনাইটিস বা অ্যাট্রোপিক এন্ডোমেট্রাইটিস হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভ্যাজাইনা বা ইউটেরাসের চামড়া পাতলা হয়ে গিয়ে ইনফ্ল্যামেশন হয়। তা থেকেও ব্লিডিং হতে পারে। তবে এগুলো অতটা চিন্তার নয়। কোনও গ্রোথ দেখা গেলে পরীক্ষা করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা শুরু করতে হবে। এ ছাড়াও এন্ডোমেট্রিয়াল হাইপারপ্লেশিয়া, সার্ভাইকাল পলিপস, সার্ভাইকাল ক্যানসার, ওভারিয়ান ক্যানসারের ফলেও পোস্ট-মেনোপজ়াল পিরিয়ডে রক্তপাত হতে পারে।
রোগনির্ণয়
ট্রান্সভ্যাজাইনাল আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান: ইউটেরাসের মধ্যে কোনও গ্রোথ আছে কি না, তার লাইনিং কতটা মোটা, এগুলো পরীক্ষা করা হয়। প্রি-মেনোপজ়াল মহিলাদের তুলনায় পোস্ট-মেনোপজ়াল মহিলাদের মধ্যে এন্ডোমেট্রিয়াল থিকনেস কম হয়। এই পরীক্ষায় যদি এন্ডোমেট্রিয়াল থিকনেস ৫ মিলিমিটারের কম আসে, তা হলে ক্যানসারের আশঙ্কা থাকে না। কিন্তু থিকনেস ৫ মিলিমিটারের বেশি হলে তখন রোগনির্ণয়ের জন্য বাকি পরীক্ষা শুরু করতে হবে।
এই প্রসঙ্গে একটি বিশেষ দিক উল্লেখ করলেন ডা. অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়, “স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত মহিলারা দীর্ঘদিন ধরে ট্যামক্সিফেন নিলে তাঁদের এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসারের আশঙ্কা বাড়ে। ট্যামক্সিফেনের দরুন এন্ডোমেট্রিয়ামে অন্য পরিবর্তনও হতে পারে যা, আল্ট্রাসাউন্ড করে বোঝা না-ও যেতে পারে। তাই পোস্টমেনোপজ়াল ব্লিডিং হলে, এমন রোগীদের ক্ষেত্রে আল্ট্রাসোনোগ্রাফির সঙ্গে হিস্টেরোস্কপি ও বায়পসি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মহিলাদের ঘুম পাড়িয়ে ভ্যাজাইনা দিয়ে এন্ডোস্কপি করার মতো ছোট ক্যামেরা ঢুকিয়ে সন্দেহজনক জায়গা থেকে বায়পসি স্যাম্পল নিতে হয়। রিপোর্ট তিন রকম আসতে পারে। একটা বিনাইন বা নন-ক্যানসারাস, সে ক্ষেত্রে ভয়ের কিছু নেই। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে হাইপারপ্লাশিয়া বা অন্য কারণ দেখা দেয়, সে ক্ষেত্রে ক্যানসারের সম্ভাবনা থাকতে পারে। আর তৃতীয় ক্ষেত্রে ক্যানসার ধরা পড়তে পারে।” তখন হিস্টেরেক্টমি করে ইউটেরাস, ওভারি ও লিম্ফ নোডসও বাদ দিতে হয়।
ডা. চন্দ্রিমা দাশগুপ্ত বললেন, “এ ক্ষেত্রে আর-একটা দিক খেয়াল রাখতে হবে। পোস্ট-মেনোপজ়াল ব্লিডিং শুধু ইউটেরাস সংক্রান্ত নয়, সার্ভিক্সে কোনও গ্রোথ থেকে হচ্ছে কি না, সেটাও আমরা ক্লিনিক্যালি পরীক্ষা করে দেখি। সে রকম কোনও গ্রোথ যদি ধরা পড়ে, সে ক্ষেত্রে বায়পসি করতে হবে।”
আগাম সচেতনতা জরুরি
একটা বয়সের পর থেকে মহিলাদের রুটিন চেকআপ করা জরুরি। এতে রোগনির্ণয় ঠিক সময়ে হয়, ফলে আরোগ্যের পথও সহজ হয়। কিছু পরীক্ষা করার পরামর্শ দিলেন চিকিৎসকরা। তিন বছরে এক বার সার্ভাইকাল প্যাপস্মিয়ার করার পরামর্শ দিলেন ডা. চন্দ্রিমা দাশগুপ্ত। ৬৫ বছর বয়স অবধি তিন বছর বাদে-বাদে প্যাপস্মিয়ার করা হলে সার্ভিক্সে কিছু হলে ধরা পড়বে।
ডা. অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, বছরে একটা ট্রান্স-ভ্যাজাইনাল সোনোগ্রাফি করতে হবে। আর ব্রেস্ট ক্যানসার দেখার জন্য দু’বছরে একটা ম্যামোগ্রাম করার কথাও বলা হয়।
পেরি-মেনোপজ়ের সময় থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন চন্দ্রিমা ও অভিনিবেশ দু’জনেই। মেনোপজ়াল স্বাস্থ্য সম্পর্কে মহিলাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি। এ সময়ে শারীরিক ও মানসিক নানা পরিবর্তন দেখা দেয়। অনেকের হট ফ্লাশ দেখা দিতে পারে, হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির দরকার পড়তে পারে। ডা. অভিনিবেশ বললেন, “মেনোপজ়ের পরে হঠাৎ করে হাড় থেকে ইস্ট্রোজেন সাপোর্ট চলে যায় বলেই কিন্তু অস্টিয়োপোরেসিসের সম্ভাবনা বাড়ে, পায়ে ব্যথা হয়, নি রিপ্লেসমেন্ট দরকার পড়ে। সে ক্ষেত্রে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি কার্যকর।”
তাই মেনোপজ় ও পোস্ট-মেনোপজ়াল সময়কাল নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি। আর পোস্ট-মেনোপজ়াল ব্লিডিং শুরু হলে তা অবহেলা করবেন না। চিকিৎসাঠিক সময়ে শুরু করলে আরোগ্য মিলবে দ্রুত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy