স্ট্রোক প্রতিরোধে মাস্টারস্ট্রোক!
সুরেশবাবুকে দেখে অবাক ওঁর সহকর্মীরা। সপ্তাহ খানেক আগেই অফিসের ক্যান্টিনে চা সিগারেট হাতে জমিয়ে আড্ডা দিলেন, আর এর মধ্যেই এই অবস্থা! নিজে উঠে বসার ক্ষমতাটুকুও নেই। করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন ফ্যালফ্যাল করে। মাত্র ৪৭ বছরেই এক স্ট্রোকেই এই হাল!
স্ট্রোকের কবলে পড়ে শয্যশায়ী জীবন কাটানোর এমন ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়। ব্রেন স্ট্রোক এমনই মারাত্মক অসুখ। অথচ একটু সচেতন হলেই এই রোগের হাত এড়ানো যায় অনায়াসে।
প্রতি দশটি মৃত্যুর একটি হয় স্ট্রোকের কারণে। আর পঙ্গুত্বের জন্য ঘরবন্দি হয়ে বাকি জীবন কাটানোর পিছনেও একটিই কারণ, তা হল ব্রেন স্ট্রোক। একটু সতর্ক হলেই এই মারাত্মক রোগটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই প্রত্যেকেরই উচিত স্ট্রোকের কারণ ও তা প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা।
নিয়মিত চেক আপ আর সতর্কতা মেনে রোজকার জীবনযাত্রায় কিছু বদল আনলে আচমকা মারাত্মক স্ট্রোকের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। এ বার জেনে নেওয়া যাক, কী কী কারণ স্ট্রোক ডেকে আনতে পারে।
বেঁচে থাকার জন্যে আমাদের প্রতিটি কোষের প্রয়োজন অক্সিজেন-সমৃদ্ধ রক্ত। মস্তিষ্কের কোষও তার ব্যতিক্রম নয়। বিভিন্ন কারণে মস্তিষ্কের রক্তবাহী ধমনীর পথ সংকীর্ণ হয়ে গেলে বা সেখানে মেদের স্তর জমে রক্ত চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলে মস্তিষ্কের কোষ অক্সিজেনের অভাবে নিস্তেজ হতে হতে অকেজো হয়ে যায়। এই ব্যাপারটাই হল স্ট্রোক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ২০০০ সালের পর নানা সমীক্ষায় উঠে এসেছে ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সি লোকেরা সবচেয়ে বেশি ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন।
কোন কোন লক্ষণ দেখলে সতর্ক হবেন?
১) আচমকা শরীরের ভারসাম্য বিগড়ে যাওয়া।
২) হঠাৎ এক চোখে বা দুই চোখেই দৃষ্টি হারিয়ে ফেলা।
৩) মুখের এক দিক বেঁকে যাওয়া।
৪) কথা বলতে গিয়ে কথা জড়িয়ে যাওয়া।
৫) বাহুতে ব্যথা হওয়া।
চিকিৎসকদের মতে, এই সব লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে নিকটবর্তী ভাল হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে যেতে হবে। স্ট্রোক হওয়ার পর তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় রোগী সঠিক চিকিৎসা পেলে সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা বেশি। তাই সময় একেবারেই নষ্ট করা যাবে না।
কেন বাড়ে ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি?
১) খিদে পেলেই প্যাকেটবন্দি নোনতা কুকিজ, বা চিপ্স নিজেও যেমন খাচ্ছেন, শিশুকেও কিনে দিচ্ছেন অনবরত। কিন্তু এ সবে মিশে থাকা অতিরিক্ত নুন যে নিঃসাড়ে স্ট্রোক ডেকে আনছে, তা কি জানেন? অতিরিক্ত নুনের প্রভাবে রক্তচাপ বাড়ে এবং তা মস্তিষ্কে রক্ত সংবহনে বাধা দেয়। ফলে আজই রাশ টানুন অতিরিক্ত নুন মেশানো খাবারে।
২) প্রাতরাশে নিয়মিত সিরিয়াল জাতীয় খাবার খেতে পছন্দ করেন অনেকে। এই সব সিরিয়ালে কিন্তু অতিরিক্ত চিনি থাকে। তা ছাড়া রোজের ডায়েটে অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার যেমন মিষ্টি, কেক, কুকিজ, পেস্ট্রি রাখাও ভাল না। এতেও বাড়ে স্ট্রোকের ঝুঁকি।
৩) ‘দ্য ল্যানসেট’-এ প্রকাশিত ২০১৯-এর একটি গবেষণা বলছে, মদ্যপান করেন না ও স্বাস্থ্যকর খাবার খান তাঁরা স্ট্রোকের থেকে অনেকটাই নিরাপদে থাকেন। তুলনামূলক ভাবে মদ্যপায়ীরা রয়েছেন বিপদে।
৪) শরীরে ভিটামিন সি-এর কোনও অভাব পড়ছে কি না, সে দিকেও কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে। হেমোরহ্যাজিক স্ট্রোককে ডেকে আনে এই ভিটামিনের ঘাটতি। পাতে রাখুন ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার।
৫) একটু-আধটু ব্যথাবেদনা হলেই মুঠো মুঠো বেদনানাশক ওষুধ খান? এতে থাকা স্টেরয়েড ভাস্কুলার ডেথ, হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মতো অসুখের আশঙ্কাকে বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুণ। কাজেই অতিরিক্ত এ সব খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা পরিত্যাগ করুন আজই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy