অম্বল, গলা-বুক জ্বালার সমস্যা এখন ঘরে ঘরে। ঝোলে-ঝালে-অম্বলে খেয়ে বাঙালির চোঁয়া ঢেকুর আর বুক জ্বালার সমস্যা চিরদিনই রয়েছে। অম্বল হলেই মুঠো মুঠো অ্যান্টাসিড বা সকালে খালি পেটে পিপিআই অর্থাৎ ওমিপ্রাজোল গোত্রের ওষুধ খেয়ে ফেলাটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গিয়েছে অনেকেরই। সকালে উঠে একটি খেয়ে নিলেই ব্যস! যত অনিয়মই হোক না কেন, তার পর সারা দিন আর কষ্ট নেই৷
অম্বলের সমস্যা কমাতে চটজলদি সমাধানই খোঁজা হয়। তারই ফলে এই জাতীয় ওষুধের অপব্যবহার শুরু হয়েছে৷ এর মাশুল গুনতে হচ্ছে নানা ভাবে। ওষুধও রেজ়িস্ট্যান্স হয়ে উঠছে দিনে দিনে। সেই সঙ্গেই অপুষ্টি, রক্তাল্পতা, ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতির কারণও হয়ে উঠছে। প্রকোপ বাড়ে অস্টিওপোরোসিসের। তাই ওষুধ না খেয়ে ভেষজ উপায়েই অম্বল কমানোর কথা বলছেন চিকিৎসকেরা। সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর হতে পারে পেয়ারা পাতার চা।
শুনতে অবাক লাগছে তো! পেয়ারার অনেক গুণ। ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে ভরপুর পেয়ারা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কয়েক গুণে বাড়াতে পারে। ‘নিউট্রিশন অ্যান্ড মেটাবলিজ়ম’ নামক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্র অনুসারে, পেয়ারা পাতার রসে এমন কিছু উপাদান থাকে যা গ্যাস-অম্বল, বদহজম এমনকি অ্যাসিড রিফ্লাক্স ও আলসারের সমস্যারও সমাধান করতে পারে। অ্যান্টাসিড জাতীয় ওষুধের প্রায় চার গুণ বেশি ক্ষমতা রয়েছে পেয়ারায়।
আরও পড়ুন:
খেয়াল করে দেখুন, একটা সময়ে যখন ওষুধের এত আধিক্য ছিল না, তখন পেটে ব্যথা হলে বা দাঁতের যন্ত্রণা হলে পেয়ারা পাতা চিবোতে বলতেন বাড়ির বড়রা। জীবাণু সংক্রমণ কমাতেও পেয়ারা পাতা ফোটানো জল খাওয়া হত। ডায়েরিয়ার পথ্যই ছিল পেয়ারা পাতা ফোটানো জল। পেয়ারা পাতায় ফাইবার ও ফেনোলিক নামে এক ধরনের উপাদান থাকে যা রক্তে শর্করার মাত্রাও কমায়। ডায়াবেটিকদের জন্যও উপকারী পেয়ারা পাতা। শরীরের প্রদাহ কমাতেও এর ভূমিকা রয়েছে।
বদহজম বা অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা যদি নিয়মিত ভোগাতে থাকে, তা হলে সকালে খালি পেটে পেয়ারা পাতার চা খেতেই পারেন। কী ভাবে বানাবেন জেনে নিন।
পেয়ারা পাতার চা
উপকরণ
৩-৪টি পেয়ারা পাতা
আধ চা চামচ চা পাতা
দেড় কাপ জল
১ চা চামচ মধু বা গুড়
প্রণালী
পেয়ারা পাতাগুলিকে ভাল করে ধুয়ে নিন। এ বার জল বসিয়ে তাতে পাতাগুলি দিয়ে ৫-১০ মিনিট ফোটাতে হবে। পাতা ফুটে জলের রং বদল হলে, তাতে রোজের চা খুব অল্প করে দিন। এ বার গ্যাস বন্ধ করে চা ঢেকে রাখুন কিছু ক্ষণ। কোনও রকম মিষ্টি ছাড়াই এই চা খাওয়া ভাল। না হলে গুড় বা মধু মেশাতে পারেন।
এই প্রতিবেদন সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা। পেয়ারা পাতার যতই গুণ থাক, অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা বাড়াবাড়ি রকম থাকলে এই পাতার চা খাবেন কি না, তা চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের থেকে জেনে নিতে হবে।