অবসর জীবন বাঁচুন আনন্দে। ছবি: সংগৃহীত।
কর্মব্যস্ততার দিনগুলিতে মন একটু ছুটির জন্য হাঁসফাঁস করে। আবার কাঙ্ক্ষিত সেই ছুটি যখন জীবনে এসে যায়, তখন মন আবার ব্যস্ততা চায়। এ দিকে অবসর জীবন মানেই দীর্ঘ ছুটি। জীবনের এতগুলি বছরের এত দৈনন্দিন রুটিন, কাজের চাপ শেষ হয়ে যায় এক নিমেষে।
প্রথম কয়েকটি দিন ছুটি উপভোগ করলেও, অনেকেরই মনে চেপে বসে একাকিত্ব। অশক্ত শরীর, তার উপর আচমকা বাইরের জগৎ থেকে সরে আসা, মনের উপর চাপ তৈরি করে। বিশেষত মানুষটি যদি একলা হন, তখন সমস্যা হয় আরও বেশি। তবে পরিবার থাকলে কিছুটা সময় অন্য ভাবে কাটতে পারে।
অবসর জীবন মানেই কি হতাশায় বাঁচা? তার চেয়ে দৈনন্দিন যাপন একটু বদলে নিন। নতুন অভ্যাস তৈরি করে বাঁচুন প্রাণ ভরে। এত দিন কাজের চাপে যদি জীবনসঙ্গীকে সময় না দিতে পারেন, তবে এখন দু’জনে মিলে নতুন করে আনন্দে কাটান।
দৈনন্দিন রুটিন
অফিস হোক বা ব্যবসা, কর্মজগৎ মানেই জীবনের একটা নিজস্ব ছন্দ থাকা। অবসর জীবনে প্রবেশ করলে ফাঁকা সময়ে মানুষ হাঁপিয়ে ওঠে। তাই, এই সময়ের জন্য নিজের মতো রুটিন তৈরি করে নিন। অলস ভাবে দিন কাটানোর চেয়ে, কিছুটা সময় অন্তত নতুন কিছু করতে পারেন।
সকালে উঠে শরীর চর্চার পাশাপাশি বাজার করতে যান। খাওয়াদাওয়া ঘড়ি ধরে করার চেষ্টা করুন। বিকেলের দিকটা বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে, হাঁটাহাঁটি ও গল্প করুন। এরই মধ্যে কিছুটা সময় রাখুন, আপনার ভাল লাগার কাজের জন্য। বই পড়া, রান্না করা, ঘরের কাজে জীবনসঙ্গীকে সাহায্য করা সমস্ত কিছুই যেন দৈনন্দিন জীবনে জুড়ে থাকে।
শরীর চর্চা
বয়স হলে শরীর অশক্ত হবে। গায়ে-গতরে ব্যথা হবে। রক্তচাপ, শর্করার মাত্রা ওঠানামা করবে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে শরীরচর্চা করলে শরীর কিন্তু সুস্থ থাকবে। সকালে উঠে কর্তা-গিন্নিতে বেরিয়ে পড়তে পারেন হাঁটতে। হাঁটা শরীরের জন্য কতটা ভাল সকলেই জানেন। দেখবেন, হাঁটতে গিয়ে নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হবে। গল্পে, আড্ডায় দিন শুরু হবে বেশ। চাইলে যোগসন প্রশিক্ষণ নিতে পারেন, যেতে পারেন ‘লাফিং ক্লাবে’-ও।
নতুন কিছু শেখা
অলস ভাবে সময় না কাটিয়ে নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করুন। নতুন ভাষা শিখতে পারেন, চাইলে ফটোগ্রাফি শিখতে পারেন, কোনও বাদ্যযন্ত্র বাজাতে শিখতে পারেন। শেখার কোনও বয়স হয় না। আর বয়স হয়েছে বলেই অপেক্ষাকৃত তরুণদের সঙ্গে কিছু শিখতে গিয়ে লজ্জাও পাবেন না। এ ছাড়াও কারও শখ থাকে বাগানের, কারও বা ছবি আঁকার। কারও আবার সঙ্গীত চর্চার। সেগুলিই নতুন করে চর্চা করতে পারেন। যে ভাল লাগা কাজের চাপে হারিয়ে গিয়েছিল, তাতে মন দিন।
পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান
বহু পরিবারে যেমন বয়স্ক দম্পতি নিজেরাই থাকেন, তেমন কোথাও সঙ্গে থাকেন নাতি-নাতনিরাও। খুদেদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটান। সম্ভব হলে নাতি বা নাতনিকে স্কুল পৌঁছতে যান বা নিয়ে আসুন। তারা সাঁতার, নাচ, গান, আঁকা অনেক কিছুই শেখে, তেমন কোথাও নাতি-নাতনিকে নিয়ে যাওয়া বা প্রয়োজনে আনতে যাওয়ার প্রস্তাব আপনি নিজেই দিতে পারেন। এতে খুদের সঙ্গে আপনার সম্পর্কও ভাল হবে, বেশ কিছুটা ভাল সময় কাটবে দু’জনেরই। অবসর জীবনে সাংসারিক কাজেও পাশের মানুষটিকে সাহায্য করুন। তবে যদি আপনি একলা হন, সঙ্গীও না থাকে, তবে নিজের মতো করে বন্ধুবান্ধব তৈরি করুন।
সমাজের জন্য ভাবনা
আপনার মূল্যবান সময় কিন্তু সামাজিক কাজেও দিতে পারেন। দুঃস্থ শিশুদের পড়ানো বা তাঁদের আঁকা শেখানো, সামাজিক উন্নয়নে কাজ করা, কোনও সেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। এ ছাড়াও আপনার নিজের ভাল লাগা থাকলে, পত্রিকা প্রকাশ, নাটক ও সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গে যোগ দিয়ে কাজ করতে পারেন। পাড়ার পুজোর দায়িত্বেও ভাগ করে নিতে পারেন।
অবসরে খেলা
মস্তিষ্ক সচল রাখতে দাবা, সুডোকু, শব্দছকের মতো খেলায় মন দিন। বন্ধুবান্ধব ডেকে এনে বা নাতি-নাতনির সঙ্গেই দাবা বা ক্যারম খেলতে পারেন।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
এই বয়সে কিন্তু যখন তখন শরীর খারাপ হতে পারে। তাই স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা খুব জরুরি। বিশেষত রক্তচাপ মাপা, রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকলে শরীরের বিশেষ খেয়াল রাখা, নিজের দায়িত্বেই করতে হবে।
ভ্রমণ
ঘোরা-বেড়ানোর শখ থাকলে কর্তা-গিন্নি মিলে বেরিয়ে পড়ুন। ভ্রমণ পিপাসু মানুষের জীবনে সবচেয়ে উপভোগ্য মনে হবে এটাই। এখন অনেক সংস্থা বয়স্কদের নিয়ে ভ্রমণ করেন। একা যেতে ভরসা না হলে, তেমন কোনও ভ্রমণ সংস্থার সঙ্গে ঘুরে আসতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy