তেল-ঝাল-মশলার বালাই নেই। সহজপাচ্য খাবার যা পেটে সয়, তার মধ্যে ইডলি পছন্দের তালিকায় উপরেই রয়েছে। যতই দক্ষিণী খাবার হিসেবে পরিচিতি থাকুক না কেন, ইডলি কিন্তু আঞ্চলিক গণ্ডি পেরিয়ে, দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বাকি দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে অনেক দিনই। বাঙালিরা অবশ্য ছোট ছোট তুলতুলে নরম গোলপানা ইডলি দেখেই অভ্যস্ত। এর বাইরেও কিন্তু রকমারি ইডলি হয়। খাস কর্নাটকেই এমন এক ধরনের ইডলি তৈরি হয়, যা দেখলে জিভে জল আসবেই। বড় গোল থালার মতো সে ইডলির নাম 'থাট্টে ইডলি'। স্বাদও সাধারণ ইডলির চাইতে কিছুটা আলাদা।
ইডলির যে এই রকমফের, তার পিছনেও গল্প আছে। বলা হয়, আগে তামিল দেশে যে ইডলি বানানো হত, তা তৈরি করা হত কলাইয়ের ডালের ছোট মণ্ডের সঙ্গে মরিচগুঁড়ো, জিরেগুঁড়ো আর হিং মিশিয়ে। অনেকে আবার বলেন, ইডলির জন্ম এ দেশেই নয়। ইডলি জন্মেছিল ইন্দোনেশিয়াতে। সে দেশের হিন্দু রাজারা যখন এ দেশে আসতেন, সঙ্গে আসতেন তাঁদের রাঁধুনিরাও। রান্নার উপকরণ গেঁজিয়ে সঙ্গে নিয়ে আসতেন তাঁরা। যে রান্নাটি তাঁরা করতেন, তার নাম ছিল ‘কেডলি’। পরে যা ইডলিতে রূপান্তরিত হয়। রাঁধুনিদের সেই পাকা হাত ধরেই ইডলি এ দেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আবার বেশ কিছু নথি বলছে, আরব বণিকদের হাত ধরেই নাকি ইডলি এ দেশে আসে।
সে যা-ই হোক, ইডলিকে নিজেদের রুচিমতো নানা ভাবে গড়ে নিয়েছে দক্ষিণের রাজ্যগুলি। যেমন তামিলনাড়ুর কাঞ্চিপুরম ইডলির ঘরানা কিছুটা আলাদা। চালগুঁড়ো, হিং, জিরে, মরিচ আর দইয়ের মাঠা দিয়ে একটা মিশ্রণ তৈরি হয় প্রথমে। সেটাকে গেঁজিয়ে তৈরি হয় ইডলি। কাঞ্চিপুরমের ইডলির বেশ নাম আছে। আর কর্নাটকের যে ইডলি বিখ্যাত, সেটিই হল থাট্টে ইডলি। বেঙ্গালুরুতে বলা হয় ‘প্লেট ইডলি’। গোটা একটা থালাজোড়া বিশাল বপু ইডলি, যা স্বভাবে খুবই নরম, পেঁজা তুলোর মতো। কন্নড় ভাষায় থাট্টে কথার মানেই হল থালা। সেখান থেকেই এমন নামকরণ।

থাট্টে ইডলি। ছবি: সংগৃহীত।
বেঙ্গালুরুর কিছু বিশেষ জায়গা এই থাট্টে ইডলির জন্য বিখ্যাত। বাংলায় যেমন শক্তিগড়ের ল্যাংচা, বর্ধমানের সীতাভোগ ও মিহিদানা, ঠিক তেমনই থাট্টে বা থালা-ইডলির নামডাক বেশি বেঙ্গালুরুর টুমকুর ও বিদাদি এলাকায়। সেখানে অফিসযাত্রীরা কাজের ফাঁকে টিফিন করতে বেরিয়ে জমিয়ে থাট্টে ইডলি খান। সকালের জলখাবারেও এই ইডলি খাওয়া হয়। সেখানকার লোকজনেরাই বলেন, টিফিনে থাট্টে ইডলি খেয়ে নিলে বেশ অনেক ক্ষণ পেট ভর্তি থাকে। বারে বারে খিদে পায় না। আবার হাইওয়েতে রাস্তার ধারেও এমন ইডলি তৈরির স্টল বেশি চোখে পড়ে। লম্বা দূরত্ব পাড়ি দিতে হয় যাঁদের, তাঁরা এমন বড়সড় ইডলি দিয়েই টিফিন সেরে নিতে পছন্দ করেন।
ইডলিকে যতই প্রাদেশিক খাবার বলা হোক না কেন, বাঙালি বাড়ির গৃহিনীরাও কিন্তু এখন ইডলি রান্নার কৌশল শিখে গিয়েছেন। সুগার-প্রেশারের রোগীদের সকালে তেল জবজবে পরোটা বা লুচি না দিয়ে, বরং পাতে ইডলি বা দোসাই দেওয়া হচ্ছে অনেক বাড়িতে। ছোটদের টিফিনবাক্সেও উঁকি দিচ্ছে ইডলি। থাট্টে ইডলি রান্না কঠিন নয়। কেবল উপকরণের হেরফের মাত্র।
থাট্টে ইডলি
উপকরণ
দেড় কাপ চাল
১ চামচ সাবুদানা
আধ কাপ বিউলির ডাল
২ চা চামচ চিঁড়ে
২ চামচ মেথি দানা
প্রণালী
চাল, সাবু দানা ভিজিয়ে রাখতে হবে ৫-৬ ঘণ্টা। ছোট ছোট পাত্রে চিঁড়ে, ডাল ও মেথি দানাও ভিজিয়ে রাখতে হবে। এর পরে মিক্সিতে সমস্ত উপকরণ দিয়ে ভাল করে বেটে নিন। এই মিশ্রণ একটি কাচের পাত্রে ঢেলে তা ঢেকে রাখুন আরও ঘণ্টা ছয়েক। যদি থাট্টে ইডলি খেতে চান, তা হলে আগের দিন থেকে পরিকল্পনা করলেই ভাল। কারণ, চাল-ডাল মাখা রাতভর ভিজিয়ে রাখলে তা সু্ন্দর ভাবে গেঁজিয়ে উঠবে।
এর পরে মিশ্রণটিতে সামান্য নুন দিয়ে ভাল করে ফেটিয়ে নিন। একদম মিহি মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। ইডলি তৈরির জন্য ইডলি স্টিমার নিতে পারেন। না থাকলে মাঝারি মাপের থালায় ঘি মাখিয়ে তাতে মিশ্রণ ঢেলে দিন। যে ক’টি বানাতে চান, তা আলাদা আলাদা থালায় ঢালতে হবে। ইডলি সেই মাপেরই তৈরি হবে। এ বার একটি বড় পাত্রে জল গরম করে তাতে থালাগুলি বসিয়ে দিতে হবে। ১০-১৫ মিনিট ভাপে সেদ্ধ হলে, নামিয়ে নিন। দেখবেন, খুব নরম স্পঞ্জের মতো ইডলি তৈরি হয়েছে। থালাতে যে পরিমাণ ব্যাটার ঢালবেন, ততটাই পুরু হবে এই ইডলি। খাওয়ার সময়ে উপরে আর একটু ঘি ছড়িয়ে নিতে হবে।
নারকেলের চাটনির জন্য
উপকরণ
১ কাপ নারকেলকোরা
২-৩ কোয়া রসুন
১ ইঞ্চির মতো আদা কুচিয়ে নেওয়া
১ চা চামচ জিরেগুঁড়ো
আধ চামচ বিউলির ডাল
আধ চামচ ছোলার ডাল
২-৩টি কারিপাতা
২টি কাঁচালঙ্কা
আধ কাপ জল
নুন স্বাদমতো
প্রণালী
নারকেল, আদা, রসুন, জিরে, বিউলির ডাল, ছোলার ডাল, কারিপাতা, কাঁচালঙ্কা ও নুন দিয়ে ভাল করে ব্লেন্ড করে নিন। চাটনি কতটা ঘন করবেন, সেই অনুযায়ী মাপমতো জল দিন। এ বার একটি প্যানে তেল গরম করে তাতে সর্ষে, কারিপাতা ও শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিন। হালকা ভেজে নিয়ে কারিপাতা ও শুকনো লঙ্কা গুঁড়িয়ে চাটনির উপর দিয়ে দিন। ইডলির সঙ্গে পরিবেশন করুন।