বলা হয়, মানব সভ্যতার ইতিহাসে গান হল সবচেয়ে সুন্দর সৃষ্টি। গান মানুষকে কখনও কাঁদায়, কখনও হাসায় আবার কখনও গানে গানে প্রেমে পড়েন অধিকাংশ মানুষ। যুগের সঙ্গে সঙ্গে অনেক নতুন নতুন গান প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু দেশাত্ববোধক গানের গুরুত্ব এতটুকুও কমেনি। মানুষের সবচেয়ে বেশি মন ছুঁয়ে যায় দেশাত্মবোধক গানগুলি। তা বাংলা হোক কিংবা হিন্দি। এক সময় বিপ্লবীদের মনোবল বাড়াতে অস্ত্র হিসেবে কলম হাতে তুলে নিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ থেকে নজরুল। আসুন দেখে নিই দেশাত্মবোধক কয়েকটি গানের সম্ভার যা শুনলে ফের নতুন করে দেশপ্রেমের স্ফুলিঙ্গ ছুটবে।
১. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা কয়েকটি দেশাত্মবোধক গান
প্রত্যক্ষভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ না করলেও পরোক্ষভাবে গান, লেখা, কবিতার মাধ্যমেই লড়াই চালিয়েছিলেন রবি ঠাকুর। সেই সময় দেশের অনেক বড় বড় নেতা যেমন গাঁধীজি, নেতাজি, পণ্ডিত জহরলাল নেহেরু কবিগুরুর আশ্রম, বিশ্ববিদ্যালয় শান্তিনিকেতনে গিয়েছেন। দেশের এই পরিস্থিতি থেকে কী ভাবে দেশবাসীকে উদ্ধার করা যায় সেই নিয়ে নানা বিষয়ে তিনি মতামত দিতেন। ব্রিটিশ সরকার থেকে কবিগুরুকে নাইট উপাধি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জালিয়ানওয়ালাবাগে জেনারেল ডায়ার নিরীহদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। তার প্রতিবাদেই নাইট উপাধি ত্যাগ করেন তিনি। এই পর্যায়ে মোট ৪৬টি গান লেখেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। যেমন,
- আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি
- ও আমার দেশের মাটি/ তোমার পরে ঠেকাই মাথা
- এবার তোর মরা গাঙে বান এসেছে/ জয় মা বলে ভাসা তরী
- যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে
- তোর আপন জনে ছাড়বে তোরে, তা ব’লে ভাবনা করা চলবে না
- নিশিদিন ভরসা রাখিস হবেই হবে
- আমি ভয় করব না, ভয় করব না
- আপনি অবশ হলি তবে
- আমরা মিলেছি আজ মায়ের সাথে
- আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে
এছাড়াও আরও অনেকগুলি দেশাত্মবোধক গান ও রচনা লেখা রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের।
২. কাজী নজরুল ইসলামের লেখা দেশাত্মবোধক গান
কাজী নজরুলকে বলা হয় বিদ্রোহী কবি। কারণ ওনার বেশিরভাগ লেখা, কবিতা ও গানে থাকত বিদ্রোহের ফলকরাশি। এছাড়া তিনি নিজেও সরাসরিভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনে সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যে কারণে জেলেও যেতে হয় তাঁকে। ব্রিটিশ সরকার এক সময়ে তাঁর গান কবিতা নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু আটকানো যায়নি তাঁকে। দেখে নেওয়া যাক কাজী নজরুলের লেখা কয়েকটি বিখ্যাত দেশাত্মবোধক বাংলা গান —
- কারার ওই লৌহ কপাট
- জাগো অনশন বন্দি
- জাতের নামে বজ্জাতি
- ওরে আজ ভারতের নব যাত্রাপথে
- আমরা শক্তি আমরা বল, আমরা ছাত্রদল
- বলো ভৈ মা ভৈ
- আমার শ্যামলা বরণ বাংলা মায়ের রূপ দেখে যা
৩. দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের লেখা দেশাত্মবোধক গান
দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ছিলেন একাধারে নাট্যকার, গীতিকার ও সুরকার। তাঁর গানগুলিকে বলা হত দ্বিজেন্দ্রগীতি বলা হয়। তার লেখা কয়েকটি দেশাত্ববোধক গান হল —
- আমার ভারত
- ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা
- যে দিন সুনীল জলধি হইতে উঠিল জননী ভারতবর্ষ
- পতিত দ্বারিনি গঙ্গে
- ভারত যাত্রী প্রবাহিত রাত্রি
৪. অতুলপ্রসাদ সেনের লেখা দেশাত্মবোধক গান
অতুলপ্রসাদ সেন আসলে পেশায় ছিলেন একজন আইনজীবী। তবে পেশার বাইরে তার নেশা ছিল গান লেখা ও তাতে সুর দেওয়া। তাঁর রচিত সমস্ত গানেই ছিল তীব্র দেশপ্রেম। দেশের উদ্দেশ্যে তাঁর লেখা কয়েকটি গান হল —
- উঠ গো ভারত লক্ষ্মী, উঠ আদি জগত জন পুজ্যা
- হও ধরমেতে ধীর, হও করমেতে বীর, হও উন্নত শির নাহি ভয়
- বল বল সবে শত বীণা বেনু রবে, ভারত আবার জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে
- দেখ মা আবার দুয়ার খুলে গলে গলে এনু মা তোর হিন্দু মুসলমান দুই ছেলে
- মোদের গরব মোদের আশা আ মরি বাংলাভাষা
৫. সলিল চৌধুরীর লেখা ও গাওয়া দেশাত্মবোধক গান
দেশে যখন টানটান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঠিক সেই সময় একাধিক দেশাত্মবোধক গান লিখেছিলেন সলিল চৌধুরী। এই গানগুলিতে সুরও দিয়েছিলেন তিনি। তার লেখা কয়েকটি দেশাত্মবোধক গান দেখে নেওয়া যাক —
- ঢেউ উঠেছে কারা টুটেছে
- কারার দুয়ার ভাঙো, ভাঙো ঐক্যের বজ্র কঠিন হাতে
- আগে চলো আগে চলো
- ভাঙো ভাঙো ভাঙো ভাঙো কারা
- বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা
এই প্রতিবেদনটি সংগৃহীত এবং ‘সাধের স্বাধীনতা’ ফিচারের একটি অংশ