15 women who helped to shape Indian Constitution dgtl
স্বাধীনতা দিবস
Indian Constitution: স্বাধীন ভারতের সংবিধান তৈরিতে যে ১৫ জন মহিলার ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য
সংগৃহীত প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২২ ০৯:০১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
১৮৫৮ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত ভারতীয় উপমহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলই ছিল ব্রিটিশ রাজশক্তির প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে। এই সময় দেশকে বিদেশি শাসকদের হাত থেকে চিরতরে মুক্ত করতে এক জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। ১৯৪৭-এর ১৫ আগস্ট ভারত অধিরাজ্য ও পাকিস্তান অধিরাজ্যের স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে এই আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতের সংবিধান গৃহীত হলে ভারতকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতান্ত্রিক রূপে ঘোষণা করা হয়।
০২১৭
স্বাধীনতা অর্জনের পরে ভারত শাসনের জন্য প্রয়োজনীয় আইনের নীতি ও রূপরেখাগুলি এই সংবিধানে ঘোষিত হয়। সংবিধান কার্যকরী হওয়ার দিন থেকে ভারত ব্রিটিশ রাজশক্তির অধিরাজ্যের পরিবর্তে পূর্ণ স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়। মোট ৩৮৯ জনের কঠিন পরিশ্রমের পরে রচনা হয় সংবিধান। এঁদের মধ্যে ছিলেন ১৫ জন মহিলা, সংবিধান রচনায় যাঁদের অবদান অনস্বীকার্য।
০৩১৭
আমু স্বামীনাথন: আমু স্বামীনাথনের জন্ম এক উচ্চ বর্ণের হিন্দু পরিবারে। ১৯১৭ সালে উইমেন’স ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশন গঠন করা হয়। এরপর ১৯৪৬-এ ইনি মাদ্রাজ থেকে কন্সটিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হন। ইনি ১৯৫২-তে লোকসভায় ও ১৯৫৪-এ রাজ্যসভায় নির্বাচিত হন।
০৪১৭
দক্ষিণী বেলায়ুদান: ১৯১২-এর ৪ জুলাই দক্ষিণী বেলায়ুদান জন্মগ্রহন করেন। স্বাধীনতা-পূর্ব যুগের এক মহিয়সী দলিত নেত্রী ছিলেন তিনি। দলিতদের বঞ্চনার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন দক্ষিণী বেলায়ুদান। ১৯৪৫-এ কোচিনের আইন পরিষদের সদস্য হন তিনি। এরপর ১৯৪৬ -তে কন্সটিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত করা হয় তাঁকে।
০৫১৭
বেগম আইজাজ রসুল: মালেরকোটার রাজপরিবারের মেয়ে বেগম আইজাজ রসুল। কন্সটিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলির একমাত্র মুসলমান মহিলা সদস্য ছিলেন ইনি। ২০০০-এ পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত করা হয় তাঁকে।
০৬১৭
দুর্গাবাঈ দেশমুখ: প্রথম জীবন থেকেই, দুর্গাবাই ভারতীয় রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। ১২ বছর বয়সে, তিনি ইংরেজি ভাষায় শিক্ষাদানের প্রযোগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে স্কুল ছাড়েন। মেয়েদের জন্য হিন্দি শিক্ষা প্রচারের জন্য, তিনি রাজামুন্দ্রিতে বালিকা হিন্দি পাঠশালা শুরু করেছিলেন। ইনি ছিলেন একজন ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী, আইনজীবী, সামাজিক কর্মী এবং রাজনীতিজ্ঞ। তিনি ভারতের সংবিধান পরিষদ এবং ভারতের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ছিলেন। ১৯৩০-এ লবন আন্দোলনে অংশ নেন দুর্গাবাঈ দেশমুখ। ১৯৩৬-এ অন্ধ্র মহিলা সভা তৈরি করেন। ইনি সংসদ এবং প্ল্যানিং কমিশনের সদস্য ছিলেন। ১৯৭৫-এ পদ্মবিভূষণ সম্মানে ভূষিত করা হয় তাঁকে।
০৭১৭
হংসা জিভরেজ মেহেতা: ১৮৯৭-এর ৩ জুলাই বরোদাতে জন্মগ্রহণ হংসা জিভরেজ মেহেতার। ইংল্যান্ডে সাংবাদিকতা ও সমাজবিদ্যায় শিক্ষালাভ করেন তিনি। একদিকে যেমন তিনি একজন সংস্কারক, সমাজসেবী ছিলেন, অন্যদিকে লেখিকাও ছিলেন তিনি। শিশুদের জন্য গুজরাটি ভাষায় লিখেছেন অনেক বই। বহু ইংরেজি বইও অনুবাদ করেন তিনি। ১৯৪৫ থেকে ১৯৬০-এর মধ্যে তিনি দেশের বিভিন্ন পদে সামলেছিলেন।
০৮১৭
কমলা চৌধুরী: রাজ পরিবার ছেড়ে ১৯৩০-এ আইন অমান্য আন্দোলনে অংশ নেন কমলা চৌধুরী। ৫৪তম অধিবেশনে অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির সভাপতি ছিলেন তিনি। এরপরে লোকসভার সদস্যা হন তিনি।
০৯১৭
লীলা রায়: লীলা রায় ছিলেন পেশায় সাংবাদিক। রাজনৈতিক আন্দোলনে জড়িয়ে ছিলেন ওচপ্রোতভাবে। ১৯২১-এ তিনি কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে বি.এ. পাশ করেন। পরীক্ষায় তিনি মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং পদ্মাবতী স্বর্ণ পদক লাভ করেন। তখনকার পরিবেশে সহশিক্ষার কোনও ব্যবস্থা ছিল না বলে লীলা রায়ের মেধা ও আকাঙ্ক্ষা বিচার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভাইস চান্সেলর ডঃ হার্টস তাঁকে পড়ার বিশেষ অনুমতি প্রদান করেন। তিনিই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এমএ ডিগ্রিধারী। ইনি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন নেত্রী ছিলেন। ১৯৪১-এ নেতাজির অন্তর্ধানের পর তিনি ও তার স্বামী অনিল রায় উত্তর ভারতে ফরওয়ার্ড ব্লক সংগঠনের দায়িত্ব নেন। তিনি মহিলা সমাজের মুখপত্র হিসেবে ১৯৩১ -এর মে মাসে “জয়শ্রী” নামে একটি মাসিক পত্রিকা বের করেন। ১৯৪৭ সালে জাতীয় মহিলা সমিতি গঠন করেন তিনি।
১০১৭
মালতী চৌধুরী: বৃটিশ ভারতের কলকাতার এক অবস্থাপন্ন ব্রাহ্মপরিবারে জন্ম মালতী চৌধুরীর। তিনি ছিলেন মহাত্মা গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। বিশিষ্ট সর্বোদয় নেত্রী ও সমাজসেবী ছিলেন তিনি। মহাত্মা গান্ধীর প্রভাবে তিনি ১৯৩০-এ অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। এরপর গ্রেফতার হয়ে ভাগলপুর সেন্ট্রাল জেলে প্রেরিত হন। ১৯৩২ -এ হাজারিবাগ জেলে ছিলেন তিনি। ৪২ এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনেও অংশ নিয়ে কারাবাস করেছেন মালতী চৌধুরী।
১১১৭
পূর্ণিমা বন্দ্যোপাধ্যায়: পূর্ণিমা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন এলাহাবাদের ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সম্পাদক। ৩০ ও ৪০-এর দশকে উত্তরপ্রদেশে স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন পূর্ণিমা বন্দ্যোপাধ্যায়।
১২১৭
রাজকুমারী অমৃত কউর: ভারতের প্রথম স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন রাজকুমারী অমৃত কৌর। দশ বছর কাজ করেন তিনি। এছাড়াও একজন বিখ্যাত গান্ধিবাদী, মুক্তিযোদ্ধা এবং সামাজিক কর্মী হিসেবে কাজ করেন তিনি। যে সংগঠনটি ভারতের সংবিধান প্রণয়ন করেছিল, কাউর ছিলেন তার সদস্য। রাজা হরনাম সিং, গোপালকৃষ্ণ গোখলে সহ অন্যান্য কংগ্রেস (আই এন সি) নেতাদের আস্থাভাজন ছিলেন। ১৯১৯-এ, মুম্বইতে মহাত্মা গাঁধীর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করার পরে, ১৯২৭-এ, তিনি অল ইন্ডিয়া উইমেন'স কনফারেন্স প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪২ সালে, তিনি ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নেন, এবং ফের জেলে যান। ১৯৪৫ এবং ১৯৪৬ সালে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসাবে জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা সম্মেলনে যোগ দেন।
১৩১৭
রেনুকা রায়: আইসিএস সতীশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায় ও চারুলতা মুখোপাধ্যায়ের কন্যা রেনুকা রায়। লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স থেকে স্নাতক হন তিনি। এরপর ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৬ পর্যন্ত সেন্ট্রাল লেজিস্লেটিভ অ্যাসেম্বলির সদস্য হন রেনুকা রায়। এছাড়াও ১৯৫২-৫৭ পর্যন্ত তিনি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য ছিলেন তিনি।
১৪১৭
সরোজিনী নাইডু: সরোজিনী নাইডু ১৯০৫-এ বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯১৫-তে অল ইন্ডিয়া ন্যাশনাল কংগ্রেসে যোগ দেন তিনি। তিনি সমগ্র ভারতে সভা সমাবেশ করে নারী মুক্তি, শ্রমিক অধিকার রক্ষা ও জাতীয়তাবাদের সমর্থনে তাঁর বার্তা প্রচার করেন। তিনি ১৯১৬-তে বিহারে নীল চাষীদের অধিকারের দাবিতে প্রচারাভিযানে অংশ নেন। ১৯১৭ সালে নারীর ভোটাধিকারের দাবিতে অ্যানি বেসান্তকে সভাপতি করে উইমেন ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হলে নাইডু এই সংগঠনের সদস্য হন। ১৯২০ সালের ১ অগস্ট তিনি মহাত্মা গাঁধীর অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
১৫১৭
সুচেতা কৃপালীনি: সুচেতা কৃপালীনি ছিলেন একজন ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনিই ছিলেন ভারতের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৭ পর্যন্ত তিনি ভারতের উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৪২-তে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নেন তিনি। এছাড়াও তার আগে ১৯৪০-তে কংগ্রেসের মহিলা শাখা তৈরি করেন সুচেতা কৃপালীনি।
১৬১৭
বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিত: বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিত সম্পর্কে ছিলেন জওহরলাল নেহরুর বোন, ইন্দিরা গাঁধীর পিসি ও রাজীব গাঁধী পিসি-ঠাকুমা। একজন ভারতীয় কূটনৈতিক ও রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন প্রথম ভারতীয় নারী ক্যাবিনেট মন্ত্রী। ১৯৩৭ তে তিনি যুক্তপ্রদেশের প্রাদেশিক আইনসভায় নির্বাচিত হন। ১৯৪৬-এ তিনি যুক্তপ্রদেশ থেকে ভারতের গণপরিষদে নির্বাচিত হন। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৪ পর্যন্ত মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ছিলেন। ১৯৭৯ তে তিনি রাষ্ট্রসংঘ মানবাধিকার কমিশনের ভারতীয় প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত হন।
১৭১৭
অ্যানি ম্যাস্কারিন: কেরলের ক্যাথলিক পরিবারে জন্মগ্রহন করেন তিনি। তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নিয়ে ১৯৩৯-৪৭ সালের মধ্যে বহুবার কারাবাস করতে হয়েছে তাঁকে। ১৯৫১-এ কেরল থেকে প্রথম মহিলা সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৪৯ থেকে ১৯৫০ পর্যন্ত তিনি স্বাস্থ্য ও বিদ্যুৎমন্ত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন।