অনেক ক্ষণ অপেক্ষার পর একটা বাস পেল নির্ণয়। বিরোধী দলের ডাকা হরতাল আজ। তাই বেসরকারি গাড়ি চলছে না। সরকারি গাড়ি দু-চারটে চলছে রাস্তায়। তাই যে বাসগুলো আসছে প্রতিটি বাসেই ভীষণ ভিড়। যে করেই হোক এই গাড়িতে উঠতেই হবে। নইলে অফিসে সময় মতো পৌঁছতে পারবে না। এই ভাবতে ভাবতে ঠেলাঠেলি করে বাসে উঠে কোনও রকমে পেছনের দিকে একটি সিট পেল। পাশেই আর এক ভদ্রলোক বসলেন। যাই হোক বাসভর্তি লোক নিয়ে জেলা শহরের দিকে রওনা হল ড্রাইভার। পাশের ভদ্রলোক নির্ণয়ের উদ্দেশে করে বলছেন, যতভোগান্তি এই আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের। তার উপর যদি সরকারি কর্মচারী হই। বিরোধী দলের ডাকা বন্ধে আমাদের কাজে উপস্থিত হতেই হবে, ১০০ শতাংশ অ্যাটেনডেন্স। আর আমরা তো হুকুমের চাকর, সরকারি নির্দেশ অমান্য করার উপায় নেই। যত্তসব! নির্ণয় ওই ব্যক্তির দিকে একটু তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে সায় দিল। ঠিক তখনই নির্ণয়ের চোখে পড়ল ভদ্রলোকটির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা খুব সুন্দর একটি মেয়ের দিকে। মেয়েটির পরনে আকাশি-সাদা ছাপা সুতির শাড়ি, সাদা ব্লাউজ, বাঁ হাতে কালো ফিতের ঘড়ি আর ডান হাতে একটি মোটা চুড়ি। কপালে কালো টিপ। স্ট্রেট করা চুল। বাসের উপরের রডে এক হাত দিয়ে কাঁধে একটি ব্যাগ ধরে ভিড়ের চাপে খুব কষ্টে মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে। এই দেখে নির্ণয়ের মন পুলকিত হল আবার লজ্জিত বোধও করল। কিন্তু কিছু করার উপায় নেই, বাস একটু খালি না হলে সে যে উঠে মেয়েটিকে বসতে দেবে সেই পরিস্থিতিও নেই। অগত্যা নিজে নিজেই সঙ্কোচ বোধ করতে থাকল। পাশের ভদ্রলোক সরকার, সিস্টেম, বিরোধী দল, গট আপ এ সব নিয়ে বলেই যাচ্ছেন। কিন্তু নির্ণয়ের কানে সে সব কথা স্পষ্ট পৌঁছাচ্ছে না। নিজেই মনে মনে আনন্দিত হচ্ছে আর মেয়েটিকে সুযোগ বুঝে দেখছে।
পরবর্তী বাসস্ট্যান্ড আসতেই কিছু লোক নেমে গেল। নির্ণয়ের পাশে বসে থাকা ভদ্রলোকটিও নেমে গেলেন। সিট ফাঁকা হতেই মেয়েটি নির্ণয়ের পাশে বসল। নির্ণয় বিশ্বাস করতে পারছে না বিষয়টি। এত সুন্দর মনের মতো একটি মেয়ে ওর পাশে সহযাত্রী হয়ে বসেছে। এটা যেন স্বপ্নের থেকে কিছু কম নয় ওর কাছে। আর এ রকম যে এর আগে ঘটেনি তা নয়। যাত্রাপথে অনেক মেয়েই পাশে বসেছে কিন্তু এ রকম এর আগে ও কোনও দিন অনুভব করেনি। মেয়েটি পাশে বসতেই নির্ণয় আরও একটু সতর্কিত ভাবে চেপে বসল। তবুও মেয়েটির শরীরের উত্তাপ আঁচ করতে পারছিল। পাশে বসার পর মেয়েটির দিকে ও আর তাকাতে পারছে না। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ভাবছে কিছু জিজ্ঞেস করবে কি না। আবার যদি মেয়েটি কিছু ভাবে। ভাবে, থাক কিছু বলব না। চুপ করেই থাকি। বুকের ভেতরটা যেন লাফাচ্ছিল নির্ণয়ের। হাত-পা জড়োসড়ো হয়ে আসছিল। সেই সঙ্গে হালকা একটা পারফিউমের সেন্ট পাচ্ছিল মেয়েটির শরীর থেকে। এই সব চলতে চলতে হঠাৎ মেয়েটি নির্ণয়কে জিজ্ঞেস করল, ‘‘আপনি কোথায় নামবেন?’’ নির্ণয় গলাটা একটু পরিষ্কার করে বলল, ‘‘এই তো বাসস্ট্যান্ডের আগের মোড়েই নেমে যাব।’’ নির্ণয় আর ফিরে জিজ্ঞাসা করতে পারল না আপনি কোথায় যাবেন? নির্ণয় ভাবছে মেয়েটি কি আমাকে বোকা ভাবল, তাই নিজেকে একটু সাহস জুগিয়ে মেয়েটিকে কিছু বলতে যাবে এমন সময় বাস কন্ডাক্টরের আওয়াজ দিল, ‘‘কদমতলা… কদমতলা...’’
মেয়েটি উঠে সামনের দিকে গেল। বাস থামল। মেয়েটি নেমে গেল। আর নির্ণয় তাকিয়ে রইল অজ্ঞ দৃষ্টিতে জানালা দিয়ে। যেন ওর ভেতরেই হরতাল ডেকেছে সেল্ফ কনফিডেন্স।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy