Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

সালাম রংবাজি

মশালা মুভি, তা সে বলিউডের হোক অথবা তামিল-তেলেগু টলিউডের অথবা কলকাতার টলিপাড়ার, একরকম রংবাজিরই নামান্তর!

dev and koel

dev and koel

অনির্বাণ চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৪ ২১:৪১
Share: Save:

মশালা মুভি, তা সে বলিউডের হোক অথবা তামিল-তেলেগু টলিউডের অথবা কলকাতার টলিপাড়ার, একরকম রংবাজিরই নামান্তর! সেই রংবাজি থাকে নায়কের রঙচঙে পাতলুনে, নায়িকার নজরকাড়া মেক-আপে, খলনায়কের নিষ্ঠুরতায়, চোখা চোখা সংলাপে, আর মারামারিতে তো একশোবার। গানের সুরে-কথায় আর নাচের ছন্দেও থাকে। এইসব মিলিয়ে যে ছবি তৈরি হয়, সরাসরি সেটাকে রংবাজি বলে বাজারে চেনান না কেউই। রাজা চন্দ এই দিক থেকে দেখলে ষোল আনার ওপরে আঠেরো আনা সৎ। সুরিন্দর ফিল্মস-এর প্রযোজনায় তিনি যে রংবাজির প্যাকেজটি এবারের পুজোয় দর্শককে উপহার দিলেন, তার নামও তিনি সরাসরিই রাখলেন ‘রংবাজ’। কোনও লুকোছাপা রাখলেন না তাঁর ছবির বক্তব্যে। এমনকি, ছবি শুরু করার আগে এও জানিয়ে রাখলেন, ছবির কাহিনিভাগের জন্য তিনি দক্ষিণী ছায়াছবি-পরিচালক পুরী জগন্নাথ-এর কাছে কৃতজ্ঞ। পুরী জগন্নাথের ২০০৭ সালের ‘চিরুথা’ ছবিকে অনুসরণ করেই তৈরি হয়েছে দেব-কোয়েল অভিনীত রাজা চন্দর ‘রংবাজ’।

মজার ব্যাপার, ছবিটায় গুরুত্বপূর্ণ সব চরিত্রই যে যার নিজের মতো করে রংবাজ। এর পিছনে হাত রয়েছে চিত্রনাট্যকার এন কে সলিল-এর। তাঁর লেখা সংলাপের মাহাত্ম্যে নায়ক রাজ রংবাজ; নায়িকা মধুরিমাও কম যায় না রংবাজিতে। খলনায়ক লাকি ভাই রংবাজ তো বটেই। ভীষণ শরীর খারাপ, ওষুধ ছাড়া শরীর টেকে না- এসব বলতে বলতেই স্বভাবজাত রংবাজিতে সে চাকু চালিয়ে দেয় নায়কের অটো-চালক বাবার পেটে। মার শরীরে অবশ্য শুধুমাত্র চাকু ঢুকিয়েই ক্ষান্ত থাকে। আর ফেলে রেখে যায় বাচ্চা নায়ককে। পরিচালককে ধন্যবাদ, যতটুকু প্রয়োজন, ঠিক ততটুকুই ভায়োলেন্স দেখিয়ে নায়কের রংবাজ হয়ে ওঠার প্রেক্ষাপটকে দেখিয়েছেন তিনি। যেমন এই খুনোখুনির দৃশ্যে, তেমনই জুভেনাইল জেলেও। এই রংবাজি অন্ধকার দিকের; আলোর দিকের রংবাজিটাও নেহাত মন্দ নয়।

ছবির যে আলোকিত রংবাজি দর্শককে আনন্দ দেবে, সেটা রাজ আর মধুরিমার রসায়নের রংবাজি। মধুরিমার সঙ্গে আর্চি কমিকস-এর ভেরোনিকার বেশ মিল রয়েছে। সে বড়লোক বাবার আদুরে মেয়ে; সে কারণেই রংবাজ। সাত-পাঁচ ভাবনাচিন্তা না করেই সে কাজ করে। মনে যা আসে, মুখে সেটা বলে ফেলতেও সময় নেয় না। অন্য দিকে, রাজ সাত ঘাটের জল খেয়ে বড় হতে হতে চুপচাপ হয়ে গেছে। বিপ্রতীপ স্বভাব সাধারণত পরস্পরকে আকর্ষণই করে। ঠিকভাবে তৈরি করতে পারলে সেই রসায়ন উপভোগ্যও হয়। রাজা চন্দর ছবিতেও হয়েছে। দেব-কোয়েল জুটির রসায়ন দর্শককে হতাশ করেনি। বরং, নাচে-গানে-অভিনয়ে-অ্যাকশন দৃশ্যে খুবই সাবলীল পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছেন দেব-কোয়েল। তাঁদের এই রসায়নকে আরও জমাটি করেছে জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবির গান। দেব-কোয়েল জুটি মানেই সাধারণত জিৎ-এর সঙ্গীত পরিচালনায় মিকা-আকৃতির একটা গান থাকবে- এটাই ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই দেব-কোয়েলের গলায় মিকা-আকৃতির গান কোনও দিনই ফ্লপ করেনি। এবারেও ‘তুই আমার হিরো’ ভালই বাজার জমিয়েছে।

তবে রাজা চন্দ যে ব্যাপারে সবচেয়ে রংবাজি দেখালেন, সেটা শ্যুটিং স্পট নিয়ে। অনেক দিন হল, বাংলা ছবির অনেকটাই, কখনও বা পুরোটাই শ্যুট হয়েছে বিদেশে। কিন্তু মশালা ছবি পুরোপুরি হয়নি। মশালা ছবিতে সাধারণত গানগুলোই বিদেশে শ্যুট হতে দেখে দর্শক অভ্যস্ত। ‘রংবাজ’-এর কাহিনি পুরোটাই ঘোরাফেরা করেছে ব্যাংককে; গানের বেলায় ইতালিতেও। ব্যাংককের আকাশচুম্বী বাড়ির মাথায় মারামারি, গলিপথ আর জলপথ দিয়ে চেজিং শৈলেশ অবস্তীর ঝকঝকে সিনেম্যাটোগ্রাফি আর রবিরঞ্জন মৈত্রর সম্পাদনার গুণে দেখতে দিব্যি লাগবে। এই মুহূর্তে কলকাতার প্রেক্ষাগৃহগুলোতে মশালা ছবি খুব একটা ভাল কিছু চলছে না। তাই একটা সন্ধেবেলা রংবাজি করতে চাইলে টিকিট কেটে ‘রংবাজ’ দেখতে ঢুকে পড়াই যায়। খুব খারাপ সময় কাটবে না।

অন্য বিষয়গুলি:

dev koel cinema
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy