‘জাতিস্মর’
চন্দননগরের লাইব্রেরি ছেড়ে ‘জাতিস্মর’য়ের কুশল হাজরাকে কি এ বার লস এঞ্জেলেসের ডলবি থিয়েটারে ঘুরতে দেখা যাবে?
নাকি ‘কুইন’য়ের রানি এ বার প্যারিস থেকে দিল্লি ফেরার আগে ডিট্যুর করে আসবেন হলিউড হয়ে?
বা ‘রাম-লীলা’ তাদের গোলিয়োঁ কা রাসলীলা ভুলে ভালবাসার মূর্ছনা শুনিয়ে আসবেন অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের দরবারে?
অস্কার দৌড়ে এখন এরা সবাই হাজির। আর এক মাসের মধ্যেই ঘোষিত হবে ভারত থেকে কোন ছবিকে অস্কারে পাঠানো হবে। সে তালিকায় আপাতত বাংলা থেকে রয়েছে একটি ছবি। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘জাতিস্মর’। জমা পড়েছে বাঙালি পরিচালক সোমশুক্ল দাস পরিচালিত ‘স্যান্ড ক্যাসল’ ছবিটিও। মনোনয়ন পাঠানোর শেষ তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর। তার পর জুরি মেম্বাররা ফিল্মগুলো দেখে ঠিক করবেন কোন ছবিটা অস্কারে পাঠানোর উপযুক্ত। আশা করা যাচ্ছে পুজোর আগেই সেই ঘোষণাটা হয়ে যাবে।
ইতিমধ্যে ন’টা ছবির মনোনয়ন এসে গিয়েছে ফিল্ম ফেডারেশনের দফতরে। সে তালিকায় যেমন রয়েছে ‘জাতিস্মর’, ঠিক সে ভাবেই রয়েছে রজনীকান্ত অভিনীত ‘কোচাদইয়ান’। ইতিমধ্যে কঙ্গনা রানাওত অভিনীত ‘কুইন’য়ের মনোনয়ন জমা পড়েছে।
আপাতত রয়েছে তিনটে মরাঠি ছবি। তার মধ্যে আছে শ্রীহরি সাথে পরিচালিত ‘এক হাজারাছি নোট’ আর নাগরাজ মনজুলে পরিচালিত ‘ফ্যান্ড্রি’। বলিউড অভিনেতা রীতেশ দেশমুখ প্রযোজিত ‘ইয়েলো’ ছবিটিও রয়েছে প্রতিযোগিতায়। মহেশ লিমায়ে পরিচালিত এই ছবিটি একটি সত্যি ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। অনেককে খানিকটা আশ্চর্য করেই বাসু ভাগনানিও তাঁর প্রযোজিত বলিউড ছবি ‘ইয়াংগিস্তান’ ছবিটিকেও পাঠিয়েছেন! শোনা যাচ্ছে যে আলিয়া ভট্ট-বরুণ ধবন অভিনীত ‘টু স্টেটস্’ও থাকছে এই দরখাস্তের তালিকায়। আর হয়তো থাকবে হনসল মেহতার ‘শাহিদ’ আর ‘সিটিলাইটস্’। এটা খুবই বিরল যে একই পরিচালকের দু’টো ছবি একসঙ্গে এ রকম একটা প্রতিযোগিতায় থাকতে চলেছে। হন্সলকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, “দু’টো ছবির প্রযোজক আলাদা। দু’টো ছবিকেই পাঠানোর কথা। তবে সব কিছুই নির্ভর করবে জুরিদের উপর।” কিন্তু নিজের দু’টো ছবির মধ্যে কোনটা অস্কারে যাওয়ার বেশি উপযুক্ত বলে তাঁর ব্যক্তিগত ধারণা? “তা হলে বলব ‘শাহিদ’। ‘সিটিলাইটস’ একটা অ্যাডাপটেশন। তবে ওটা ভীষণ ভারতীয় একটা ছবি। দু’টো ছবিই আমার সন্তানের মতো। সেখানে আমি কী করে চুজ করব?” প্রশ্ন তাঁর।
অন্যান্য আর কোন ভারতীয় ছবি অস্কার-দৌড়ে থাকতে পারে, সে নিয়ে তাঁর মত চাইলে হন্সল জানান, “আমার মনে হয় ‘আঁখো দেখি’ ছবিটাও বেশ ভাল। তবে জানি না কী হবে।”
‘শাহিদ’, ‘কুইন’ আর ‘ফ্যান্ড্রি’ এই তিনটে ছবিই সৃজিতের বেশ পছন্দের। তবে স্বাভাবিক ভাবেই স্বীকার করছেন যে ভারতের অস্কার-দৌড়ে থাকার জন্য তাঁর ছবির যোগ্যতাও কম নয়। বলছেন, “ফাইনাল নমিনেশন পাওয়াটা পরের ব্যাপার। কিন্তু এ খবরটা শুনে দারুণ লাগছে। সত্যি বলতে কী যদি ভারতকে ঠিক ভাবে তুলে ধরতে হয়, তা হলে আমার মতে ‘জাতিস্মর’কে যোগ্য প্রতিনিধি হিসেবে ধরা যায়। কম রিসোর্সে তৈরি খুব উচ্চমানের এই ছবির এমন একটা ব্যাপার রয়েছে যেটা ‘শাহিদ’, ‘কুইন’ বা ‘ফ্যান্ড্রি’তে নেই। ওগুলোর অন্য বিশেষত্ব রয়েছে। বিশেষ করে ‘শাহিদ’য়ের। ওটা এ সময়ের একটা গুরুত্বপূর্ণ ছবি বলেই মনে করি আমি।” কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে যে শাজি এন করুণের মালয়ালম ছবি ‘স্বপ্নম’ এর জন্যও মনোনয়ন পাঠানো হতে পারে। এক শিল্পীর সমস্যা নিয়ে তৈরি এই ছবি।
এনএফডিসি-র তরফ থেকে ইরফান-তিলোত্তমা সোম অভিনীত ‘কিস্সা’ ছবিটির জন্যও মনোনয়ন পাঠানোর কথা ভাবা হচ্ছে। তবে এই তালিকায় ছবি পাঠাতে গেলে সেটাকে বাণিজ্যিক ভাবে ১ অক্টোবর ২০১৩ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪-র মধ্যে রিলিজ করতে হয়। ‘কিস্সা’ এখনও মুক্তি পায়নি। “তবে আমরা চেষ্টা করছি যাতে এর মধ্যেই ছবিটা মুক্তি পায়,” বলছেন এনএফডিসি-র জেনারেল ম্যানেজার বিক্রমজিত্ রায়।
তবে কোন ছবি অস্কারে পাঠানোর জন্য দরখাস্ত করতে পারে, তা নিয়ে অনেকেরই মনে প্রশ্ন রয়েছে। ‘রাম লীলা’ যে ধরনের ছবি, সেই একই ঘরানার ছবি নিশ্চয়ই ‘ইয়াংগিস্তান’ নয়। আবার বলিউডি গান-নাচ সমেত ‘টু স্টেটস্’ থেকে ‘শাহিদ’ একদম অন্য ঘরানার ছবি। কী ক্রাইটেরিয়া থাকে এই ছবি পাঠানোর জন্য? “ছবির রিলিজ ডেট-টা একটা ব্যাপার। ছবিটি প্রাথমিক ভাবে ভারতীয় কোনও ভাষায় তৈরি হওয়াটা প্রয়োজনীয়। ভারতীয় সংস্কৃতি রিফ্লেক্ট করাটা দরকার। আর ছবির কলাকুশলীদের বেশির ভাগ ভারতীয় হওয়াটাও প্রয়োজনীয়,” বলছেন ফিল্ম ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার সেক্রেটারি সুপর্ণ সেন।
প্রতি ছবির জন্য মনোনয়ন পাঠাতে লাগে ৫০ হাজার টাকা। জুরি মেম্বারদের কাছে যেটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, তা হল ছবির সঙ্গে যুক্ত প্রযোজকের ক্ষমতা আছে কিনা সে ফিল্মকে অস্কার জুরিদের কাছে নিয়ে গিয়ে দেখানোর। পুঁজির জোরের সঙ্গে দরকার পরিচিতিও। বড় বড় স্টুডিয়োর ক্ষেত্রে এটা বিশেষ সমস্যা না হলেও অল্প বাজেটের ছবির ক্ষেত্রে এটা একটা বড় ধরনের চাপ তো বটেই। রিলায়্যান্স এন্টারটেনমেন্টের চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার শিবাশিস সরকার বলছেন, “বছরে অন্য অনেক ছবি প্রযোজনা করলেও আমাদের মনে হয় ‘জাতিস্মর’ ছবিটার এমন কিছু গুণ আছে, যার জন্য ওটা অস্কার-দৌড়ে থাকার যোগ্য। ইতিহাস রয়েছে, ভারতীয় সত্তা রয়েছে, এ দেশের গান রয়েছে। জুরি মেম্বাররা যদি এই ছবিটা সিলেক্ট করেন, তা হলে আমাদের তরফ থেকে ছবিটাকে বিদেশে প্রোমোট করার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করব।”
গত বছর ‘লাঞ্চবক্স’ ছবিটা নিয়ে প্রচুর বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল অস্কার প্রসঙ্গে। বিতর্ক গড়িয়ে ক্ষমা চাওয়া সব কিছুই হয়েছিল খুল্লমখুল্লা। এখনও পর্যন্ত কোনও জুরি মেম্বার ঠিক হয়নি। “আর কিছু দিনের মধ্যে জুরি মেম্বারদের তালিকাও আমরা ঠিক করে ফেলব। ১১ থেকে ১৭ জন মেম্বার থাকবেন জুরিতে। আমরা আশা করছি
আরও বেশ কিছু এন্ট্রি আসবে। তার মধ্যে থাকতে পারে কিছু পঞ্জাবি আর কোঙ্কনি ছবিও,” সুপর্ণ জানান।
এর আগে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘শব্দ’ও পাঠানো হয়েছিল প্রাথমিক বাছাইয়ের জন্য। এখনও ‘অপুর পাঁচালি’র জন্য মনোনয়ন জমা
পড়েনি। তবে কৌশিকের ইচ্ছে রেগুলেশন অনুযায়ী ছবিটা পাঠানো হোক।
এখন শুধু কিছু সপ্তাহের অপেক্ষা। কার ভাগ্যে অস্কার-দৌড় লেখা আছে, এখন সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy