পোষ্য কখন সন্তান হয়ে ওঠে, তা শুধু পোষ্যপ্রেমীরাই বোঝেন। মিনু ছিল লেখিকা তসলিমা নাসরিনের এমনই এক চারপেয়ে সন্তান। টানা ২২ বছর এই মার্জার সন্তানই তসলিমার জীবনের ওঠাপড়ার সাক্ষী ছিল। শনিবার সকালে সেই মিনু চিরকালের মতো চলে গেল লেখিকাকে ছেড়ে। নিজেই সমাজমাধ্যমে জানালেন তিনি।
ধবধবে সাদা রঙের উপর ধূসর ছোপ। মিনুর চোখের রঙে ছিল সবুজ আভা। জানুয়ারি মাসেও মিনুর একগুচ্ছ ছবি ভাগ করে নিয়েছিলেন তসলিমা। সঙ্গে আদরের কন্যাসম পোষ্যকে নিয়ে তসলিমা লিখেছিলেন দীর্ঘ একটি পোস্ট। বেড়ালের ২২ বছর বয়স মানুষের ১০৪ বছরের সমান। তাই গত কয়েক বছর অসুস্থতার মধ্যে কেটেছে মিনুর। কিন্তু তার গায়ে হাত বুলিয়ে দিলেই গড়গড় আওয়াজ বলে দিত, মিনু আরাম পাচ্ছে। লিখেছিলেন তসলিমা।
বার্ধক্যজনিত বেশ কিছু রোগ জাঁকিয়ে বসেছিল মিনুর ভিতর। তবে পোষ্যসন্তানের সুস্থতার কথা মাথায় রেখে সব রকম ব্যবস্থা বাড়িতেই করেছিলেন তসলিমা। বয়সের কারণেই বেশ কিছু চিকিৎসা তিনি করাতে পারেননি। কারণ অস্ত্রোপচার করতে গেলে জ্ঞান ফেরার সম্ভাবনা তেমন ছিলই না।
তিনি পোস্টে লিখেছিলেন, “মাস দুয়েক আগে কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে মিনুর বমি হত। ডিহাইড্রেশনে ভুগেছে। আড়াই কিলোগ্রাম ওজন কমে গিয়েছে। স্যালাইন দিতে হয়েছে। এখন সেই সব সমস্যা নেই। এখন সে দিব্যি আছে। তিন বছর তাকে খাইয়ে দিতে হয়েছে , অথচ এখন নিজেই খাচ্ছে। জলও বেশ খাচ্ছে। ডিহাইড্রেশন নেই। স্যালাইন দিতে হচ্ছে না। ভাল খেয়ে খেয়ে কমে যাওয়া ওজন সম্ভবত ফিরিয়ে আনতে চাইছে।”
আরও পড়ুন:
তসলিমা আরও লিখেছিলেন, “তার (মিনু) জন্য ২৪ ঘণ্টা হিটার চলে। কাল অদ্ভুত কাণ্ড। গভীর রাতে বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল। রেফ্রিজারেটর চলছে না, আলো নেই, পাখা নেই, জল পরিশোধনকারী যন্ত্র বন্ধ, ওয়াইফাই বন্ধ। অথচ তার হিটারখানা চলছে। শুধু হিটারখানাই চলছে, আর কিছু চলছে না। মিনুর প্রতি সদয় ইলেকট্রিসিটিও।”
অসুস্থতার জন্য মিনুর ঘরেই পাকাপাকি ভাবে থাকতে শুরু করেছিলেন তসলিমা। অসুস্থ হয়ে পড়লেও প্রবীণ মার্জারকন্যা কখনওই নির্দিষ্ট জায়গার বাইরে শৌচকর্ম করেনি। কষ্ট করে হলেও নির্দিষ্ট জায়গাতেই করত শৌচকর্ম। নির্দিষ্ট জায়গাতেই খাওয়াদাওয়া ও ঘুমোনোর ব্যবস্থাও ছিল। তবে শরীরে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছিল। যন্ত্রণায় কষ্টও পেয়েছিল সে। তসলিমা লিখেছিলেন, “ওর প্রচণ্ড যন্ত্রণা হয়, সে যন্ত্রণা দেখতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু যখন বিছানায় আমার পাশে শুয়ে থাকে, আর গলদেশে আঙুল বুলিয়ে দিলে ওর গড়ড়ড় গড়ড়ড় শব্দ শুনে মনে হয় এই সুখটুকুর জন্য হয়তো তার আরও কিছু দিন বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করছে। আমি তো ওর সুখে কোনও বাধা হতে পারি না। ওর জীবন, ওর জীবন।”
কিন্তু ২২ ফেব্রুয়ারি সেই বেঁচে থাকার ইচ্ছেয় ইতি টেনেছে মিনু। তসলিমার পোস্টে তাঁর ও মিনুর অনুরাগীরা শোকপ্রকাশ করেছেন।