অনুষ্কা শর্মা থেকে শুরু করে শ্রদ্ধা কপূর, মানসিক রোগ নিয়ে বলিউডে কাদের ছুতমার্গ নেই?
মানসিক অবসাদের স্বীকার আমরা কম বেশি সকলেই হই, কিন্তু গুরুত্ব দিই ক’জন? শরীর-স্বাস্থ্যের যেমন খেয়াল থাকে, তেমনই খেয়াল থাকুক মানসিক স্বাস্থ্যেরও। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে আরও এক বার সচেতনতার বার্তা দিচ্ছেন তারকারা। আলিয়া ভট্ট থেকে শুরু করে করণ জোহর, মানসিক অসুস্থতা কাটিয়ে কী ভাবে আবার মূলস্রোতে ফিরেছেন? রইল সেই অনুপ্রেরণার গল্প।
অনুষ্কা শর্মা
উদ্বেগ থাকেই। মন কাহিল হলে পড়তে পারে চাপে। কিন্তু জট ছাড়িয়ে আবার মূলস্রোতে ফিরতে লাগে উপযুক্ত শুশ্রূষা। যা নিয়ে সব সময়েই মানুষকে সচেতন করে আসছেন অভিনেত্রী অনুষ্কা শর্মা। তিনি নিজেও ভুক্তভোগী। এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “পেটব্যথা করলে ডাক্তারের কাছে ছুটছেন আর এটা লুকিয়ে রাখছেন? আমার নিজেরই উদ্বেগের সমস্যা রয়েছে। তার চিকিৎসাও করাই। ওষুধ খাই মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে। কেন বলছি? কারণ এটা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়। শারীরিক সমস্যা। যে কারও হতে পারে। আমার পরিবারে অনেকেই অবসাদজনিত সমস্যায় ভোগেন। আরও মানুষ এ নিয়ে কথা বলুন যাতে বাকিরাও খোলামেলা ভাবে আলোচনা করতে পারেন তাঁদের সমস্যা নিয়ে। এতে লজ্জার কী আছে? আমি নিজের লক্ষ্য বানিয়েছি একে। কেউ যেন আমার চারপাশে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলতে দ্বিধা না করেন, সেটাই দেখতে চাই।”
শ্রদ্ধা কপূর
উদ্বেগের সমস্যা তাঁরও ছিল। বহু দিন ধরে মানসিক অবসাদের সঙ্গে লড়াই করেছেন শ্রদ্ধা কপূর। এ দিকে জানতেনই না, তাঁর সমস্যাটা আসলে কোথায়। অভিনেত্রী বলেন, “শুরুতে কিছুই বুঝতে পারিনি। উদ্বেগ বাড়ছিল। মনে হয় ‘আশিকি’-র পর পরই শারীরিক সমস্যা শুরু হল। এমন একটা যন্ত্রণা হচ্ছিল যার জন্য শরীরে কোনও কিছু দায়ী নয়। সব পরীক্ষা করিয়েও কোনও গণ্ডগোল পাওয়া যায়নি। ভাবছিলাম এটা কী হচ্ছে? কেন হচ্ছে?” তার পর অভিনেত্রী বোঝেন মানসিক ভাবে নিজেকে অবহেলা করেছেন দীর্ঘ দিন। এ তারই ফল। শ্রদ্ধার কথায়, “নিজের একটা অংশ হিসাবে মনকে গুরুত্ব দিতে হবে। তার যত্ন নিতে হবে। ভালবাসতে হবে নিজেকে। মানসিক অবসাদ হোক বা উদ্বেগ, আগে নিজেকে বুঝতে হবে আপনি কে। ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন।”
দীপিকা পাড়ুকোন
মানসিক অবসাদে ভুগে দীর্ঘ কাল বিষণ্ণ ছিলেন দীপিকা পাড়ুকোন। রণবীর সিংহকে স্বামী হিসাবে পেয়েও তিনি সুখী হতে পারছিলেন না। সে সময় অভিনেত্রীর মা উজ্জ্বলা পাড়ুকোন মনোবিদের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন মেয়েকে। ‘লিভ লাভ লাফ’ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা দীপিকা জানান, দেশের মানসিক স্বাস্থ্য, বিষণ্ণতা নিয়ে উদ্বিগ্ন তিনি। তাঁর সংগঠনও সেই লক্ষ্যেই কাজ করে চলেছে। নিজের হতাশা কাটাতে যেমন চিকিৎসা করিয়েছিলেন অভিনেত্রী, বাকিদেরও সে নিয়ে সচেতন করতে চান। বলেন, ‘‘আমি কোনও কারণ ছাড়াই ভেঙে পড়তাম। এমন দিন ছিল, যখন আমি ঘুম থেকে উঠতে চাইতাম না। শুধু ঘুমিয়ে থাকতাম কারণ, ঘুম বাস্তব ছেড়ে পালানোর সেরা উপায়। আমি আত্মহত্যার কথাও ভাবতাম মাঝেমাঝে।’’ কিন্তু বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তা এড়াতে যথাসম্ভব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করতেন। এখনও করেন। দীপিকার কথায়, ‘‘আমার বাবা-মা বেঙ্গালুরুতে থাকেন। তাঁরা যখনই আমাকে দেখতে আসেন, আমি সেই সাহসী মেয়েটা হয়ে যাই। সব সময় বাবা-মাকে দেখাতে চাই যে, ভাল আছি।’’
করণ জোহর
তালিকায় রয়েছেন করণ জোহরের মতো আসর-জমানো সঞ্চালকও। তাঁর আত্মবিশ্বাসী, প্রানোচ্ছ্বল ব্যক্তিত্বের মাঝেও পড়েছে মানসিক অসুস্থতার ছায়া। ওষুধ খেতে হত তাঁকেও। নিয়মিত থেরাপি করিয়েছেন। সেই ঘটনা সবার সামনে বলেছিলেন করণ। তাঁর কথায়, “যখন অ্যাংজাইটি অ্যাটাক হয়েছিল, ভেবেছিলাম হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে। একটা মিটিংয়ের মধ্যে ছিলাম। উঠে বেরিয়ে চলে আসি ‘বিশেষ দরকার’ বলে। সোজা ডাক্তারের কাছে যাই। তিনিই বলেন আমার হার্ট অ্যাটাক নয়, অ্যাংজাইটি অ্যাটাক হয়েছে। তার পরই মনোবিদের কাছে গেলাম। সেই প্রথম বুঝলাম, ভিতরে চলতে থাকা মানসিক জট ঠিক সময়ে না খুললে তা বড়সড় শারীরিক সমস্যা হিসাবে ধরা দেয়।”
আলিয়া ভট্ট
সদাহাস্যময়ী ২৯ বছরের নায়িকার মধ্যেও দেখা দিয়েছিল সংশয়। সমস্যাটা ঠিক কোথায়? বুঝতে সময় লেগেছিল। বছর তিনেক আগে মানসিক অসুস্থতার শিকার হয়েছিলেন আলিয়া ভট্ট। অভিনেত্রী বলেন, “সব সময় নিজেকে বুঝিয়ে যেতাম এই কষ্টটা কাজের চাপে হচ্ছে। এখন আমি খুব ক্লান্ত তাই হচ্ছে। আমি যন্ত্রণা পুষে রাখলাম। উদ্বেগ নিয়েই কাজ করে গিয়েছি দিনের পর দিন। তার পর এক দিন বুঝলাম।” আলিয়ার পরামর্শ, “নিজেদেরই স্বীকার করতে হবে যে আমরা ভাল নেই। তখন থেকেই খোঁজা শুরু হবে, কী ভাবে ভাল থাকব।”
অতিমারির সময়ে সব থেকে কঠিন ছিল মন ঠিক রাখা। চিকিৎসার জন্য ডাক্তার মিললেও দিনরাত মানসিক উদ্বেগ, আতঙ্কের মোকাবিলা করা সমাজের সব স্তরের মানুষকে যেন ঝড়ের রাতে একই নৌকায় তুলে দিয়েছিল। সে সময় নেটদুনিয়ায় সংযোগ বজায় রেখেছিলেন অনেকেই। তারকা থেকে সাধারণ— একযোগে মানসিক অবসাদ মোকাবিলার চেষ্টা দেখা গিয়েছিল বিশ্ব জুড়ে। প্রতি বার যখন কোনও তারকা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করেন, সেই বার্তা সমাজকে প্রভাবিত করে। ছড়িয়ে যায় বিভিন্ন স্তরে। সেই নিরন্তর ছড়িয়ে পড়াকে উৎসাহ জোগাতে ১০ অক্টোবর দিনটিকে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস হিসাবে চিহ্নিত করেছে হু (ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেশন)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy