Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Dev

তৃণমূল ছাড়ছি না, যাঁরা এ সব বলছেন তাঁরা গুজব রটাচ্ছেন: দেব

নেপাল থেকে ৩৬ জন পরিযায়ী শ্রমিককে দেশে ফিরিয়েছিলেন তিনি। তাঁরা স্বর্ণকার হিসেবে নেপালে কাজ করতেন বলে জানালেন দেব। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং যে সমস্ত আধিকারিক তাঁকে এই কাজে সাহায্য করেছেন তাঁদের সোশ্যাল মিডিয়ায় ধন্যবাদও জানিয়েছেন সাংসদ তথা অভিনেতা।

দেব। ফাইল চিত্র।

দেব। ফাইল চিত্র।

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২০ ১৭:১৫
Share: Save:

তাঁর অফিসে ফোনটা আসে সন্ধের দিকে। ঘাটালের কিছু মানুষ তাঁদের নেতাকে ফোন করে জানাচ্ছেন তাঁরা নেপাল ভারতের সীমান্তে দাঁড়িয়ে আছেন। সঙ্গে গর্ভবতী মহিলা, সন্তান। নেপালে ফেরার পথ নেই, ভারতে ঢোকারও অনুমতি নেই। কোথায় যাবেন তাঁরা? তিনি কি পারবেন সেই মুহূর্তে এ রকম মানুষদের মাথার উপরের ছাদ ফিরিয়ে দিতে? শুটিং ফ্লোরে অভিনয়ের চেয়েও অনেক বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন দেব

নেপাল থেকে ৩৬ জন পরিযায়ী শ্রমিককে দেশে ফিরিয়েছিলেন তিনি। তাঁরা স্বর্ণকার হিসেবে নেপালে কাজ করতেন বলে জানালেন দেব। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং যে সমস্ত আধিকারিক তাঁকে এই কাজে সাহায্য করেছেন তাঁদের সোশ্যাল মিডিয়ায় ধন্যবাদও জানিয়েছেন সাংসদ তথা অভিনেতা। পরবর্তীকালে তালিকাটা লম্বা হল, ২৪৭। নাছোড়বান্দা দেব। তাঁর চেষ্টায় নেপাল থেকে ঘাটাল ফিরলেন আরও ২৪৭ জন পরিযায়ী শ্রমিক। এঁদের জন্য সাতটি সরকারি বাসের ব্যবস্থা করেছিলেন দেব। কয়েক দিন আগে দার্জিলিং জেলার পানিট্যাঙ্কি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন এই পরিযায়ীরা। সকলের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। এর পর থেকেই বাড়ি ফেরার আর্জি নিয়ে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফোন আসতে থাকে তাঁর কাছে।

সাক্ষাৎকার দিতে দিতেও ফোন আসছে ক্রমাগত। কেউ দুবাইয়ে আটকে আছেন তো কেউ কুয়েতে। ‘‘সবটা আমার একার পক্ষে সম্ভবও নয়। তবে এখন আপ্রাণ চেষ্টা করছি বাংলাদেশের সীমান্ত যদি খোলানো যায়। অনেক মানুষ আটকে আছেন।’’

দলের নেতাদের সঙ্গে ঘাটালের সংসদ দেব। নিজস্ব চিত্র।

অতিমারি, লকডাউন, সোশ্যাল মিডিয়ায় চুপ তিনি। পাশে স্ক্রিপ্ট নেই। ছবির হিসেব কষা নেই। মানুষ, বাসস্থান, কোভিড যুদ্ধ জয় করার মন্ত্র ছড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি। আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রথমেই বিভিন্ন প্রান্তে আটকে পড়া মানুষের সঙ্গীন অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন অভিনেতা তথা সাংসদ দেব।

আরও পড়ুন: সঞ্জয় দত্তের স্টেজ-৩ ক্যানসার, যাচ্ছেন আমেরিকা

মন ভাল নেই তাঁর। এক জন নায়ক, প্রযোজক যখন শারীরিক ভাবে সক্ষম এক জন মানুষকে পেটের জ্বালায় রাস্তায় নেমে মাস্ক বিক্রি করতে দেখেন তখন তো তাঁরও মনে হয়, ‘‘আজ নায়ক না হলে আমিও তো সাধারণ মানুষের মতো বাসে চড়তাম। রোজগারের জন্য পথে নামতাম। তা হলে সেই আমি যদি অতিমারির সময় মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে ইনস্টাগ্রামে ঘর পরিষ্কার আর রান্নার ছবি দিই সেটা কি আমার পথ? আমার কাজ?’’ জানেন, নিজের সেলিব্রেশনের সময় নয় এটা। যদিও মানুষের চোখ এখন সারা ক্ষণ সোশ্যাল মিডিয়ায়। ‘‘তাই বলে গান গাইতে, থালা বাজাতে আরম্ভ করব?’’ প্রশ্ন তুলছেন দেব।

সংক্রমণ যখন বাড়ছে তখন শুট শুরুর পক্ষে তিনি নন। ‘‘একটা রিয়্যালিটি শোয়ের বিচারক হওয়ার প্রস্তাব ছিল। আমি করিনি। আমার জন্য আরও চারটে ছেলে কাজে নেমে যদি বিপদে পড়ে! কে নেবে দায়িত্ব? এত দিন অপেক্ষা যখন করলাম, কষ্ট করে আরও দু’ মাস না হয় করলাম’’, সাফ কথা দেবের।

সরকার তো টেকনিসিয়ানদের ভাতা দিতে পারত, তা হলে কাজ করতে হত না, এ কথা শুনেই দেব বললেন, ‘‘আমরা তেমন ডেভেলম্পমেন্ট কান্ট্রির মানুষ নই কিন্তু। পৃথিবীতে কোনও সরকারই কোভিড নিয়ে প্রস্তুত ছিল না। কত জন মানুষকে একটানা সাহায্য করা যায়? কতদিন ধরে?"প্রশ্ন দেবের। এই সময়কে ভিন্ন প্রেক্ষিতে দেখছেন তিনি। "এই সময় কতটা রোজগার করলাম, তার চেয়ে, কত জন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করলাম আর নিজে বাঁচলাম সেটাই আসল।"

লকডাউনের সময় কিন্তু শোনা গিয়েছিল দেব তৃণমূল ছেড়ে দিচ্ছেন! রাজনীতি করবেন না! বিষয়টা কী?

‘‘দু’টো আলাদা প্রশ্ন কিন্তু— দেব রাজনীতি করবে না আর দেব তৃণমূল ছেড়ে দেবে! দেব সে ভাবে কোনও দিন রাজনীতি করেনি। যাঁরা বিরোধী দলে আছেন বা আমার দলে আছেন, তাঁরা সকলেই ভাল করে জানেন, দেব কোনও দিন সে ভাবে রাজনীতি করেনি। কিন্তু যত দিনই রাজনীতি করি না কেন, মানুষ তো অন্তত বলবে দেব কাজ করেছে।’’

সাংবাদিকদের মুখোমুখি সাংসদ দেব। নিজস্ব চিত্র।

দেব বলতে থাকেন, ‘‘দিদি আমায় খুব ভালবাসেন। আমাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্য উনি অনেক কিছু করেছেন। আমার কাছে রাজনীতি করা মানে কাজ করা, কাজের ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া নয়। আর সাংসদ হিসেবে শুধু ঘাটাল কেন, সব মানুষের জন্য কাজ করব আমি, তবে তৃণমূল ছাড়ার প্রশ্ন নেই। যাঁরা এ সব রটাচ্ছেন তাঁরা গুজব রটাচ্ছেন।’’ কিন্তু, তাঁর রাজনীতির পদ্ধতি যে আলাদা সেটা জানাতেও ভোলেননি দেব। ২০১৪-য় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম যখন ঘোষণা করেন তখনও তিনি বিরোধী প্রার্থীর সঙ্গে চা খেতেন, আজও তাই খান।

রাজনীতির প্রসঙ্গেই ঘাটালের তৃণমূল সাংসদের স্পষ্ট অভিমত, এখন করোনা অতিমারির সময়। এখন অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের সময় নয়।’’

রাজনীতির পাশাপাশি দেব ইন্ডাস্ট্রি নিয়েও সজাগ। জানেন, মানুষ সকাল থেকে রাত টেলিভিশন দেখে দেখে বোর হয়ে যাচ্ছে। বাংলা ছবি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে পর্যাপ্ত অর্থ পাবে না, ফলে বাংলা ছবি সিনেমা হলেই মানুষ দেখতে চাইবেন বলে বিশ্বাস করেন দেব। ‘‘খুব শিগগিরি এমন দিন আসবে হয় ভ্যাক্সিন চলে আসবে নয়তো করোনা থাকলেও মানুষ সেটা নিয়ে সিনেমা হলেই আসবে। মানুষ অপেক্ষা করে আছে কবে রাস্তায় নামবে। খেতে যাবে। তখন যেন স্বাধীনতা দিবস! মুক্তির সুখ। সে দিন কার্নিভাল হবে। মানুষ নাচবে। গাইবে। প্রতি দিন যেন দুর্গাপুজো হবে!’’ উচ্ছ্বাস ঝরে পড়ে দেবের গলায়।

আরও পডু়ন: অমিতাভের বিপরীতে ‘ড্রিম প্রজেক্ট’ থেকে বাদ দেওয়ার দাবি, কেরিয়ারে একটাও হিট ফিল্ম নেই রিয়ার​

দুর্গাপুজো নিয়ে কী ভাবছেন দেব? ‘‘এখন সব বিষয় নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। তবে এখন কোনও উৎসব নিয়েই রাজনীতি করা উচিত নয়। ভ্যাক্সিন আসার জন্যই অপেক্ষা করা উচিত।’’

করোনা যুদ্ধ থেকে সাংসদের কাজ, সব কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও লকডাউন পরবর্তী সময়ে রুক্মিণীর সঙ্গে কি প্রেম চলছে নীরবে? রুক্মিণী প্রসঙ্গ উঠতেই দেবের জবাব: ‘‘আমার সাক্ষাৎকারে এই প্রসঙ্গ আসবেই, না? অতিমারি এই দিকটা বদলাতে পারেনি!’’

রোজ রুক্মিণীর সঙ্গে দেখা হচ্ছে?

‘‘এখন তো লকডাউন নেই। রুক্মিণীর সঙ্গে দেখা হচ্ছে। আর প্রেম নিয়ে জানতে চাইছিলেন তো? এ বছরেও আমি রুক্মিণীকে রাখী পরাইনি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Dev TMC Politics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy