‘গুলাবো সিতাবো’-দেব-জিৎ-শিবপ্রসাদ
নওয়াজ়উদ্দিন সিদ্দিকির পরে ওটিটিতে অমিতাভ বচ্চন ও আয়ুষ্মান খুরানা! অমিতাভের ৫১ বছরের দীর্ঘ কেরিয়ারে প্রথম বার হলের বদলে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাবে তাঁর ছবি ‘গুলাবো সিতাবো’। গত কয়েক দিন ধরেই হিন্দি ইন্ডাস্ট্রির কম বাজেটের কিন্তু তারকাখচিত ছবির ওটিটি রিলিজ়ের কথা চলছে। করোনা ও তার জেরে লকডাউনের কারণে গোটা বিশ্বে হলে ছবিমুক্তির বিষয়টি অনিশ্চয়তার মুখে। তবে এই দুর্দিনে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ধুন্ধুমার ব্যবসা বাড়িয়েছে। তাই হল রিলিজ়ের অপেক্ষায় না থেকে হিন্দি ছবি ডিজিটালের পথে হাঁটতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে টলিউড কি সেই সাহস দেখাবে?
আগামী দিনে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির পরিস্থিতি কেমন হবে, তা কারও কাছে এখনও অবধি স্পষ্ট নয়। তাই এই মুহূর্তে টলিউডের অনেকেই ডিজিটালের শরণাপন্ন হতে চাইছেন না। যদিও ইন্ডাস্ট্রির অন্দরের খবর, স্ট্রিমিং জায়ান্ট নেটফ্লিক্স, অ্যামাজ়ন, জ়ি ফাইভ, ডিজ়নি প্লাস হটস্টারের তরফে ছবি রিলিজ়ের প্রস্তাব গিয়েছে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, সুরিন্দর ফিল্মস, এসভিএফ, রাজ চক্রবর্তীর কাছে। যদি কোনও স্ট্রিমিং পোর্টালের সঙ্গে হলে রিলিজ় পাওয়া বাংলা ছবির এক্সক্লুসিভ চুক্তি হয়, তবে এক কোটি টাকা পর্যন্তও দর ওঠে। কিন্তু ছবির যদি স্যাটেলাইট রাইটস থাকে, তবে দর কমে যায়। ইন্ডাস্ট্রির গুঞ্জন, টলিউডের প্রযোজনা সংস্থাগুলি এখন এই দরাদরিতেই ব্যস্ত।
উইন্ডোজ় প্রযোজিত ‘লক্ষ্মী ছেলে’ এবং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায় পরিচালিত ‘বেলাশুরু’ মুক্তির জন্য তৈরি। শিবপ্রসাদ বলছিলেন, ‘‘হলে ছবি রিলিজ়ের ক্ষেত্রে দুটো বিষয় কাজ করে। এক, প্রযোজকের ঘরে টাকা উঠে আসা। দুই, ছবি বৃহত্তর দর্শকের কাছে পৌঁছনো। ওটিটি প্ল্যাটফর্মের বিস্তৃতি নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ভাল টাকা পেলে ছবি ওটিটিতে দিতে আপত্তি থাকার কথা নয়। হিন্দি ছবির সংখ্যা এত বেশি যে, কয়েকটা ডিজিটালে মুক্তি পেলে সকলের জন্যই ভাল।’’ তার মানে উইন্ডোজ়ের ছবি কি ওটিটিতে মুক্তি পাবে? ‘‘এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি,’’ সাবধানী উত্তর তাঁর। রাজ চক্রবর্তীর ‘ধর্মযুদ্ধ’-এর জন্য ওটিটি রিলিজ়ের প্রস্তাব থাকলেও পরিচালক হল রিলিজ়ের পক্ষেই মত দিচ্ছেন। রাজের আশঙ্কা অন্যত্র, ‘‘যদি একটি ভাল ছবি হলে রিলিজ় করে এবং দর্শক না পায়, তবে হলগুলি এমনিও বসে থাকবে। কারণ শুটিং বন্ধ এখন। তাই পরিচালক হিসেবে হল বাঁচানো গুরুদায়িত্ব। ওটিটি একটি বিকল্প মাত্র। সেখানে কাজ করব ঠিকই। তা বলে টাকা পেলেই ওটিটিতে ছবি দিয়ে দেব, এটা ঠিক নয়।’’
আরও পড়ুন: দু'শরও বেশি দেশে ‘গুলাবো সিতাবো’ ডিজিটালি মুক্তি পাওয়ার চ্যালেঞ্জে আমি গর্বিত: অমিতাভ
বাংলার দুই নামী প্রযোজনা সংস্থা শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস এবং সুরিন্দর ফিল্মস এই পরিস্থিতিতে কী ভাবছে? এসভিএফ-এর বক্তব্য অনুযায়ী, গত কয়েক মাসে চার গুণ সাবস্ক্রিপশন বাড়িয়েছে তাদের স্ট্রিমিং পোর্টাল হইচই। নতুন কনটেন্ট নিয়েও ভাবছে এসভিএফ। নতুন ছবির ওটিটি রিলিজ় নিয়ে চিন্তাভাবনা চললেও সিদ্ধান্তে পৌঁছয়নি এসভিএফ। লকডাউনের পরবর্তী চাহিদা দেখেই নতুন সিরিজ় ‘কেস জন্ডিস’ এনেছে তারা। সংস্থার বেশ কিছু ছবির শুটিং ও পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ বাকি।
সুরিন্দর ফিল্মসের নিজস্ব ওটিটি আড্ডাটাইমসের ভিউয়ারশিপ ততটাও নয় যে, সেখানে ছবি রিলিজ় করে লাভ হবে। তবে সংস্থার কাছে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘ফেলুদা ফেরত’ সিরিজ়টি আছে, যা পোস্ট প্রোডাকশনের জন্য আটকে। এই সিরিজ়টি দিয়ে সাবস্ক্রাইবার বাড়ানোর চেষ্টায় সংস্থা। পোস্ট-প্রোডাকশন স্টুডিয়ো খোলার অনুমতি আসায় সিরিজ়ের কাজ শেষ করার কথা ভাবছে সুরিন্দর ফিল্মস।
বাংলার দুই সুপারস্টার জিৎ ও দেবের নিজস্ব প্রোডাকশনের ছবিও রয়েছে পাইপলাইনে। দেবের প্রযোজনায় ‘হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী’র ওটিটি রিলিজ়ের কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ছবি রিলিজ় করতে আপত্তি নেই, যদি দাম ঠিকঠাক পাই। এ বছর আদৌ কোনও ছবির হল রিলিজ় সম্ভব কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। একটা শোয়ের পর হল স্যানিটাইজ়েশন, নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে বসা... এই পুরো কাঠামোটা তৈরি করা সহজ নয়।’’
দেব অভিনীত ‘টনিক’-এর মুক্তি করোনার কারণে পিছিয়ে গিয়েছে। সেই ছবির প্রযোজক অতনু রায়চৌধুরী (সহ-প্রযোজক দেব) ওয়েব রিলিজ়ের ঘোর বিরোধী। ‘‘বাংলা ছবির মার্কেট ছোট। ওটিটি রিলিজ় হলে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি এখানে বন্ধ হয়ে যাবে। যাঁরা এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তাঁরা খুব ভুল ও অনুচিত কাজ করছেন,’’ বললেন তিনি।
তারকা দেবের জৌলুস ছবির ওটিটি রিলিজ়ে কমে যাবে না? ‘‘আমার ছবির যদি ওয়েব রিলিজ় হয়, তা ট্রেন্ড তৈরি করবে ঠিকই, কিন্তু তা কতটা সফল হয়, সেটাই আসল। লকডাউন উঠে গেলে ও মানুষের মন থেকে ভয় দূর হলে, দর্শক বেশি করে হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে চাইবেন। কারণ হলের মজা কোনও দিন বাড়িতে আসবে না,’’ বললেন সাংসদ-অভিনেতা।
অন্য দিকে করোনার কারণেই লন্ডনে শুটিং বাকি রেখে ফিরতে হয়েছে জিৎকে। তাঁর প্রযোজনার অন্য একটি ছবি ‘সুইৎজ়ারল্যান্ড’-এর ডাবিংয়ের কাজ বাকি। তাই অভিনেতা বললেন, ‘‘আগে ডাবিংয়ের কাজ শেষ হোক। তার পরে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’’
‘মিতিন মাসি’ ছবির প্রযোজক নীলরতন দত্ত অবশ্য মুম্বইয়ের ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ছবি বিক্রির চেষ্টার কথাটি স্বীকার করলেন। বললেন, ‘‘আমার দুটো ছবি ‘ষড়রিপু টু’ এবং ‘মায়াকুমারী’র ওয়েব রিলিজ়ের কথা ভাবছি। তার জন্য কথাও চলছে। তবে ছবি বিক্রি করা সম্ভব হবে কি না, তা অনিশ্চিত। ওটিটি প্ল্যাটফর্মের হিন্দি ছবির দিকে ঝোঁক বেশি। তাই ছবি বিক্রি করতে পারলে ভাল, না পারলে হলে রিলিজ় করবে।’’
বাংলার হল মালিকেরাও এই পরিস্থিতিতে দিশেহারা। নবীনা সিনেমার কর্ণধার নবীন চৌখানির মতে, ‘‘বলিউডের ট্রেন্ড এখানে চলবে না। ওটিটিগুলো বাংলা ছবি কিনতে কতটা আগ্রহী, সে প্রশ্নও রয়েছে।’’ আবার প্রিয়া সিনেমার কর্ণধার অরিজিৎ দত্ত বললেন, ‘‘সিঙ্গল স্ক্রিনে এমনিতেই শোয়ের সংখ্যা কম। টিকিটের রেটটা হয়তো আর একটু কম রাখতে পারি। তবে সমস্যা সকলেরই হবে।’’ বৃহস্পতিবার ‘গুলাবো সিতাবো’র অনলাইন রিলিজ়ের ঘোষণার পরে আইনক্সের তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। সেই বিবৃতি অনুষায়ী, এই ধরনের সিদ্ধান্তে সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ এবং প্রযোজকদের পারস্পরিক বিশ্বাসের সম্পর্কেও চিড় ধরছে।
হিন্দি ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে বাংলার কখনও তুলনা চলে না। বিশেষত, যেখানে বাংলায় সিঙ্গল স্ক্রিনের সংখ্যা দিনে দিনে তলানিতে ঠেকছে। বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভেবে বাংলার প্রযোজকেরা অনলাইনের হাত ধরবেন কি না, তার দিকে তাকিয়ে ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িত অসংখ্য মানুষ।
আরও পড়ুন: দাড়ি-বিভ্রাটে কার্তিক আরিয়ান
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy