সুরের ছোঁয়ায় এই গান বাঙালির মন জিতে নিয়েছে।
গত এক মাস ধরে ভারতের অলিতে গলিতে অনবরত বেজে চলেছে শ্রীলঙ্কার প্রেমের গান ‘মানিকে মাগে হিঠে’। নেটমাধ্যমে গানের গায়িকাকে নিয়ে তুমুল কৌতূহল। কে এই ইওহানি ডি’সিলভা? কেন ভাষা না জেনেই তাঁর গানে মজলেন অমিতাভ বচ্চন থেকে পাড়ার রকে বসা যুবকটিও? ইতিমধ্যেই গানের সঙ্গে রিল ভিডিয়ো বানিয়েছেন মধুমিতা সরকার, নীল ভট্টাচার্য সহ একাধিক জনপ্রিয় তারকা। শুধু সুরের ছোঁয়ায় যে গান জিতে নিয়েছে বাঙালির মন সেই গান কি এ বার পুজো প্যান্ডেল মাতাবে? জানতে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল লোপামুদ্রা মিত্র, ইমন চক্রবর্তী, শোভন গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে।
কী বলছেন তাঁরা?
লোপামুত্রা মিত্র শুরুতেই জানিয়েছেন, কানের পক্ষে ভীষণ আরামদায়ক শ্রীলঙ্কার এই গান। একই সঙ্গে গানের পরতে পরতে জড়ানো ভাল লাগা। সহজ সুরে বাঁধা এই গান এক বার শুনলেই মনে হচ্ছে আরও এক বার শুনি। তার পরে আরও এক বার। সেই জায়গা থেকে সবাই ঘুরেফিরে গানটি শুনছেন। আর এ ভাবেই শ্রীলঙ্কার গণ্ডি পেরিয়ে সেই গান রাজত্ব চালাচ্ছে ভারতেও। ইদানিং দুর্গাপুজোয় প্যান্ডেলে অন্য ভাষার গান বাজতে শোনা যায়। রমরমিয়ে ভোজপুরী গান চলে। সেই জায়গা যদি সিংহলি গান দখল করে? আনন্দিত কণ্ঠে লোপামুদ্রার দাবি, ‘‘খুব খুশি হব তা হলে। ভোজপুরী গানের দাপটে কান পাতা দায় হয় একেক সময়। অসম্মান না করেই বলছি, অনেক গানের ভাষা এবং চিত্রায়িত দৃশ্য বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে মেলে না। সেই জায়গায় এই গান ভীষণ পেলব, রোম্যান্টিক। তাই সন্ধ্যায় পুজো প্যান্ডেলে বাজলে একটুও খারাপ লাগবে না।’’
বান্ধবী স্বস্তিকা দত্ত প্রথমে এই গানের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছেন তাঁর, এমনটাই দাবি শোভন গঙ্গোপাধ্যায়ের। ‘‘স্বস্তিকা গানের প্রতি ছত্র ধরে মানে বুঝিয়ে দিয়েছে। গানটিতে এক প্রেমিক আকুল ভাবে মান ভাঙানোর চেষ্টা করেছেন তাঁর প্রেমিকার,’’ জানিয়েছেন শিল্পী। শুনতে শুনতে কোথাও যেন নিজের সত্তাকে খুঁজে পেয়েছেন তিনি। স্টার জলসার ‘সুপার সিঙ্গার ৩’-এর আবহ এবং সঙ্গীতের দায়িত্বে থাকা শোভনের দাবি, ঘুম ভাঙলেই তিনি সেটে। গাড়িতে যেতে আসতে বা ফেসবুক করার সময় মাঝেমধ্যে সিংহলি ভাষায় গাওয়া এই প্রেমের গান শুনে একঘেয়েমি কাটান। এই গান কি পুজো প্যান্ডেল মাতানোর মতো? শোভনের দাবি, ‘‘যাঁরা ধীর ছন্দের নরম গান পছন্দ করেন, তাঁরা শুনতে চাইবেন এই গান।’’ তাঁর মতে, ঢাকের হাল্কা বোলের সঙ্গে এই গান মিশিয়ে দিতে পারলে অন্য আবেশ তৈরি হতেই পারে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে।
‘‘প্রথম দিন শুনেই ‘মানিকে মাগে হিঠে’র প্রেমে পড়ে গিয়েছি’’, আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে অকপটে জানিয়েছেন ইমন চক্রবর্তী। ভিন্ন ভাষার এই গানের প্রতি প্রেমের কারণও জানিয়েছেন। শিল্পীর কথায়, একটা গান এত সহজ সরল হতে পারে, না শুনলে বোঝা যায় না। ‘‘যা খুব সহজ-সরল, তার প্রতি মানুষের আকর্ষণ বরাবরের। এই জন্যেই এই গান কান পেতে শুনছেন অমিতাভ বচ্চন। আবার আমার পাড়ার ছোকরাও,'’বললেন তিনি। ইমনের আরও যুক্তি, সহজ গানকে সহজতর করে দিয়েছেন শিল্পী ইওহানি ডি’সিলভা। গান আর গায়কি একাকার হতেই নিজের দেশ ছেড়ে অন্য দেশেও বাঁধভাঙা জনপ্রিয়তা পেয়েছে ‘মানিকে মাগে হিঠে’। শিল্পীর আরও বক্তব্য, এই গান পুজো প্যান্ডেলে অবশ্যই বাজা উচিত। তা হলেই সব দেশের সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটবে।
সিংহলি গানের সারল্যে মুগ্ধ জাতীয় পুরস্কারজয়ী অনুপম রায়ও। গানের সুরের পাশাপাশি তিনি জোর দিয়েছেন, গায়কির উপরেও। অনুপমের দাবি, ''ইওহানি ডি’সিলভা স্বর অন্যদের মতো নয়। এক দম আলাদা। সেই জন্য এত ভাইরাল।'' পাশাপাশি এও জানিয়েছেন, সুরকারেরা নতুন গান তৈরির সময় এই ধরনের 'ইউনিক' কণ্ঠ খোঁজেন। যা এক বার শুনলেই শ্রোতাদের মনে গেঁথে যাবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি লগ্নজিতা চক্রবর্তীর নাম করেন। বলেন, ''লগ্নজিতা এই ইউনিকনেসের জন্যই প্রথম গান 'বসন্ত এসে গেছে' থেকেই জনপ্রিয়।'' বাংলার পুজো প্যান্ডেলে এই গান কতখানি মানাবে? শিল্পীর মতে, খুব খারাপ লাগার কথা নয়। গানকে কখনই দেশ-কাল-পাত্রে সীমাবদ্ধ করা উচিত নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy