Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Koel Mullick

নারীকেন্দ্রিক ছবি বাহবা পেলেও বিপণন করতে নাজেহাল কেন?

কোয়েল, মিমি ও ঋতাভরী

কোয়েল, মিমি ও ঋতাভরী

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৪৬
Share: Save:

ছবিতে দেব বা জিৎ থাকলে টেলিভিশনের স্যাটেলাইট রাইটস বাবদ দু’-আড়াই কোটি টাকা নিশ্চিত। অঙ্কুশকে নিলে সেই অঙ্কটা দু’য়ের কাছাকাছি। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের নামে এখনও দেড় কোটি টাকা মিলবে। আবীর চট্টোপাধ্যায়, যিশু সেনগুপ্ত এক কোটি নিশ্চিত করতে পারেন। কিন্তু অভিনেত্রীদের ক্ষেত্রে টাকার অঙ্কটা বেশ কম। নামের জোরে টেলিভিশনের স্বত্ব বাবদ ৬০-৭০ লক্ষ টাকার বেশি পান না নায়িকারা।

ছবি তৈরি এবং তার বিপণন অনেকটাই বদলেছে। শুধু বক্স অফিসের উপরে ভরসা না করে, স্যাটেলাইট এবং ডিজিটাল রাইটস মিলিয়েই লাভের লক্ষ্য স্থির করেন প্রযোজকেরা। কিন্তু নায়িকাকেন্দ্রিক ছবি বিক্রি করতে সমস্যা হয় প্রযোজকের। কারণ টেলিভিশন রাইটসের চুক্তিতে মহিলাপ্রধান ছবির গুরুত্ব অনেকটাই কম।

পরিস্থিতি যেমন

সম্প্রতি এক নতুন প্রযোজক তাঁর প্রথম ছবির জন্য চ্যানেল কর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন। ইন্ডাস্ট্রির এক নামী নায়িকাকে নিয়ে ছবি করছেন। কিন্তু স্যাটেলাইট রাইটসের অঙ্ক শুনে আঁতকে উঠেছিলেন প্রযোজক। তাঁকে বলা হয়, ছবিতে নামী নায়ক থাকলে টাকার অঙ্ক অবশ্যই বাড়ত।

মিমি চক্রবর্তী, নুসরত জাহানের মতো নায়িকা থাকলে সে ছবি ৫০-৬০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রস্তাব পায়। পাওলি দাম বা স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে তা ৩০ লক্ষ টাকার মতো। উল্টো দিকে বনি সেনগুপ্তর ছবি স্বত্ব বাবদ ৭০-৮০ লক্ষ টাকা পায়। কোয়েল মল্লিকের ছবির দর ৬০ লক্ষ টাকার কাছাকাছি। যেহেতু তাঁর নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা আছে, তাই অনেক সময়ে গোটা পাঁচেক ছবি প্যাকেজ করে দাম নির্ধারণ হয়।

নায়িকারা কী বলছেন

পারিশ্রমিকের বৈষম্য নিয়ে নায়িকারা অনেক দিনই সরব। কিন্তু টেলিভিশন রাইটসের ব্যাপারে তাঁরা খুব একটা ওয়াকিবহাল নন। অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘পুরুষতান্ত্রিক ইন্ডাস্ট্রিতে মহিলাপ্রধান ছবি কম হয়। তার উপরে অভিনেত্রীদের পারিশ্রমিকও কম। অনেকে মনে করেন, ভাল চরিত্র দিচ্ছেন এই ঢের। বেশি টাকা কেন দেবেন? টাকা বাড়ানো নিয়ে জোরাজুরি করলে ছবি হাতছাড়া হবে। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে স্যাটেলাইট রাইটসের ক্ষেত্রে কী পরিস্থিতি, তা বোঝাই যাচ্ছে।’’

একটা সময়ে নারীকেন্দ্রিক ছবি তবু খানিক বেশি হত। সত্যজিৎ রায় পরপর নারীপ্রধান ছবি করেছেন। সেই প্রসঙ্গ টেনেই কোয়েল মল্লিক বললেন, ‘‘বাংলায় ‘দহন’, ‘পারমিতার একদিন’-এর মতো স্বতন্ত্র ছবি হয়েছে। মাঝে কমে গেলেও ফের ট্রেন্ড শুরু হয়েছে। হিন্দি ইন্ডাস্ট্রি লক্ষ করুন। নারীকেন্দ্রিক ছবি সংখ্যায় বেশি হলে টিভির রাইটসের অঙ্কও বাড়বে।’’

ঋতাভরী চক্রবর্তীর ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’ বক্স অফিসে সফল। কিন্তু নায়িকার নিজস্ব অভিজ্ঞতা অন্য রকম। ঋতাভরী বলছিলেন, ‘‘নিজের প্রোডাকশন শুরু করতে চাই। ছবির বিপণনের দিকটা খতিয়ে দেখার জন্য চ্যানেলগুলোর সঙ্গে স্যাটেলাইট রাইটসের বিষয়ে কথা বলেছিলাম। তাতে বুঝতে পারলাম, নারীকেন্দ্রিক ছবি বিক্রি করা সহজ নয়। নায়িকা নন, নায়ক কে সেই প্রশ্নটাই বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’’ ‘পরিণীতা’র পরিচালক রাজ চক্রবর্তীও মেনে মিলেন নারীকেন্দ্রিক ছবির স্বত্বের নেপথ্যে অনেক শর্ত থাকে। ‘‘দেড় কোটি টাকায় ‘পরিণীতা’ বিক্রি করেছিলাম। এখানে অনেক রকম ইকুয়েশন থাকে। সব নারীকেন্দ্রিক ছবি এই অঙ্কের টাকা না-ও পেতে পারে।’’ আসলে পরিচালক, প্রযোজনা সংস্থা, ব্যক্তিগত সমীকরণেরও প্রভাব আছে।

চ্যানেলের মত

জ়ি এন্টারটেনমেন্ট এবং এন্টারপ্রাইজ়ের ক্লাস্টার হেড (ইস্ট) সম্রাট ঘোষের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, টেলিভিশন স্বত্বের ক্ষেত্রে নারীকেন্দ্রিক ছবি কোণঠাসা কেন? তাঁর বক্তব্য, ‘‘এ ক্ষেত্রে কয়েকটা বিষয় ভাবতে হবে। মহিলাকেন্দ্রিক ছবি ক’টা তৈরি হয়? আর তার মধ্যে ক’টা ছবি ভাল? দর্শক ভাল ছবি দেখতে চান। তাঁদের চাহিদা বুঝে আমাদের ছবি নির্বাচন করতে হয়।’’ গত দু’-এক বছরে ‘মুখার্জিদার বউ’, ‘পরিণীতা’, ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’ বক্স অফিসে সফল। যদিও চ্যানেল কর্তাদের মতে, বক্স অফিস আর টিআরপি দুটো আলাদা খেলা। বক্স অফিসে সফল ছবি, ছোট পর্দায় ভাল রেটিং দেবে এমন না-ও হতে পারে। ‘হরিপদ ব্যান্ডওয়ালা’ সিনেমা হলে চলেনি কিন্তু এর টিভি রেটিং হাই। প্রেক্ষাগৃহে না চলা দেব-জিতের ছবিও বড় অঙ্কের টিভি রাইটস পায়, কারণ সারা বছর তা ভাল টিআরপি দেয়। ‘‘আমাদের সব ধরনের ছবি রাখতে হয়। দেব-অঙ্কুশের ছবির পাশাপাশি ‘পরিণীতা’ও কিনেছি,’’ বললেন সম্রাট।

এক প্রযোজকের কথায়, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে হিন্দি প্রযোজকেরা বড় হিরোর ছবি ধরে রেখেছেন। কিন্তু ‘দুর্গামতী’, ‘শকুন্তলা দেবী’ ওটিটিতে ছেড়ে দিলেন। নারীকেন্দ্রিক ছবি নিয়ে যতই আলোচনা হোক, ব্যবসার ক্ষেত্রে নায়কপ্রধান ছবিতেই আস্থা প্রযোজক মহলের।’’ হিন্দিতে নারীকেন্দ্রিক ছবির একটা ঢেউ এসেছে। সেই ধাক্কায় বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে পালাবদলের প্রত্যাশায় অভিনেত্রীরা।

(টাকার অঙ্ক আনুমানিক ও ইন্ডাস্ট্রি সূত্রে পাওয়া)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy