Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
Bengali Cinema

টলি তারকারা দলে দলে এখন রাজনীতিতে, ছবিতে তার প্রতিফলন কোথায়?

বিগত কয়েক বছরের বাংলা ছবির ধারা পর্যবেক্ষণ করলে পুরোদস্তুর ‘রাজনৈতিক’ ছবি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

‘ঘরে বাইরে আজ’ ছবির দৃশ্য

‘ঘরে বাইরে আজ’ ছবির দৃশ্য

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০৮
Share: Save:

কলেজ ক্যাম্পাস থেকে সোশ্যাল মিডিয়া... বাঙালির রাজনৈতিক সচেতনতা জাহিরের প্ল্যাটফর্মের অভাব নেই। সমাজ ও তার মানুষের রাজনৈতিক মননশীলতা এক সময়ে প্রতিফলিত হত সেলুলয়েডেও। তবে বিগত কয়েক বছরের বাংলা ছবির ধারা পর্যবেক্ষণ করলে পুরোদস্তুর ‘রাজনৈতিক’ ছবি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ২০১৯-এ বাংলা রাজনৈতিক ছবি, অপর্ণা সেনের ‘ঘরে বাইরে আজ’ এবং অনীক দত্তের ‘ভবিষ্যতের ভূত’। বরং গত ক’বছরে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগদানের সংখ্যা বেড়েছে টলিউডের শিল্পীদের।

এর পাশে বলিউডকে রাখলে সেখানে ছবিটা উল্টো। গত কয়েক বছরে হিন্দি ছবির ইন্ডাস্ট্রিতে একের পর এক রাজনীতি বিষয়ক ও ব্যক্তিত্বদের নিয়ে ছবির বহর বেড়েছে। আর সেখানে যাঁরা রাজনীতিতে আসছেন, তাঁদের সিনেমায় কেরিয়ার অস্তমিত। টলিউড ও বলিউডের এই তুলনায় কোনও পক্ষকে আদৌ কি ‘আদর্শ’ বলে ধরা যায়? তবে দুই ইন্ডাস্ট্রির পর্দার ‘রাজনীতি’ উসকে দিচ্ছে অন্য অনেক প্রশ্ন।

রাজনৈতিক ছবি বানাতে এখনকার বাঙালি পরিচালকদের অনীহা কেন? পরিচালক সুদেষ্ণা রায় এই অভিযোগ মানতে অস্বীকার করলেন। ‘‘রাজনীতি মানেই প্রাতিষ্ঠানিক বা মঞ্চের রাজনীতি নয়। সমাজ-পরিবারের অন্তর্নিহিত রাজনীতিও এখনকার বাংলা ছবিতে ফুটে উঠেছে। আর ‘ঘরে বাইরে আজ’-এর পাশাপাশি ‘গোত্র’কেও আমি রাজনৈতিক ছবি বলব। রাজ চক্রবর্তীর আগামী ছবি ‘ধর্মযুদ্ধ’ও সে অর্থে রাজনৈতিক। ‘গুমনামী’ও তা-ই।’’ পরিচালক অরিন্দম শীলের কাছে এই প্রশ্ন রাখা হলে তিনি বলেন, ‘‘মৃণাল সেনের ‘কলকাতা ৭১’-এর মতো ছবি এখন হয় না। হিন্দি ছবির কথা তুললে অনেক বছর আগে প্রকাশ ঝা ‘গঙ্গাজল’ বানিয়েছিলেন। তার পরে হিন্দিতেও তেমন কাজ হয়নি। তার দায় শুধু পরিচালকদের নয়, রাষ্ট্রেরও। চারদিকে এত ভয়ের বাতাবরণ যে, স্পষ্ট কথা কেউ সাহস করে বলতেই পারছে না।’’ পরিচালক এটাও মনে করিয়ে দিলেন, এখনকার হিন্দি ছবিগুলি ঠিক অর্থে ‘রাজনৈতিক’ নয়। বরং অনেক বেশি প্রোপাগান্ডাধর্মী।

২০১৯-এ মুক্তি পাওয়া হিন্দি ‘রাজনৈতিক’ ছবির সংখ্যাটা নেহাত কম নয়— ‘উরি’, ‘দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’, ‘ঠাকরে’, ‘দ্য তাসকেন্ট ফাইলস’, ‘পিএম নরেন্দ্র মোদী’, ‘বাটলা হাউস’, ‘রোমিও আকবর ওয়াল্টার...’’ এই তালিকার বেশ কয়েকটি প্রোপাগান্ডা ছবিও বটে। বলিউডে যে ধরনের ‘রাজনৈতিক’ ছবি হচ্ছে, তার অধিকাংশই এই গোত্রের।

তবে টলিউডে সেই ধরনের ছবিও তো হয় না! এই প্রশ্ন রাখতেই অরিন্দম শীলের জবাব, ‘‘ভালই তো! বলিউড যে ভাবে ঘাড়ে বন্দুক রেখে ছবি করাচ্ছে, আমাদের সেটা করতে হচ্ছে না।’’ পরিচালক সুদেষ্ণা রায়ও সহমত, ‘‘রাজনৈতিক ছবি মানেই কি ‘উরি’র মতো সরকারের ধ্বজাধারী ছবি করা?’’ প্রশ্ন তাঁর।

রাজনৈতিক ছবি বানাবেন কি না, সেটা পরিচালকের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। যেমন, রাজ চক্রবর্তী স্বীকার করেন, ‘ধর্মযুদ্ধ’ বানানোর সময়েও তিনি ভাবেননি, ছবিটা এতটা সময়োপযোগী হয়ে উঠবে। পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি হয়েছিল ‘গোত্র’র রিলিজ়ের সময়ে। ইউটিউবে আমাকে আর নন্দিতাদিকে (রায়) ব্যান করে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। বিষয়টা শুধু রাজনীতি নয়, যেটাই আমাদের নাড়া দেয়, সেটা নিয়েই ছবি বানিয়েছি।’’

তবে এ ধরনের ছবি বানালে তার একটা বড় দায় পরিচালককে অবশ্যই নিতে হয়। সেটা বাংলার সব পরিচালকই মানেন। তবে পর্দায় ও তার বাইরে বলিউডের ‘রাজনীতি’র অঙ্ক যতটা পরিষ্কার, টলিউডের ক্ষেত্রে সেটা নয়। এখানে কেরিয়ার থাকতে থাকতেই প্রথম সারির তিন তারকা (দেব, মিমি চক্রবর্তী, নুসরত জাহান) সক্রিয় রাজনীতিতে এসেছেন। টলিউডের শিল্পীদের মধ্যে রঙের বিভাজন স্পষ্ট। কিন্তু পর্দায় দু’-একটি ছবি ছাড়া কেউ সরাসরি এই ধারার ছবি করতে তৈরি নন। তার কারণ কি শুধুই ভীতি না উদ্যোগের অভাব? নিরুত্তর টলিউড।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy