মঞ্চে দেখা গেল যে সেলেবদের। ছবি: সুমন বল্লভ
গ্ল্যামার কি তা হলে সত্যিই কম পড়িয়াছে?
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের শাসন ক্ষমতা দখল করার পর থেকে টলিউডের পালে তৃণমূলের হাওয়া লেগেছিল। তার পর থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে টলিউড তারকাদের উপস্থিতি বেড়েছে বই কমেনি! কিন্তু ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল কি সেই হাওয়া ঘুরিয়ে দিল? নয়তো রবিবারের একুশের মঞ্চে টলিউডের গ্ল্যামারাস উপস্থিতি এত কম কেন?
এই মঞ্চে যাঁদের নিয়মিত দেখা যেত, তাঁদের অনেকেই আসেননি। রুদ্রনীল ঘোষ, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, পায়েল সরকার, তনুশ্রী চক্রবর্তী, অঙ্কুশ, হিরণ, ইন্দ্রাণী হালদার, জুন মাল্য, অপরাজিতা আঢ্যদের মতো নিয়মিত মুখের অনুপস্থিতি অনেক প্রশ্নই তুলে দিচ্ছে। মমতা টেলি-টলি ব্রিগেডের উপরে যে আস্থা রেখেছিলেন, এ বারের মঞ্চ তা খানিকটা টলিয়ে দিয়েছে।
টলিউডের উপস্থিতি মমতার পাওয়ার প্লে-র একটা অংশ। এ বার শ্রীকান্ত মোহতা নেই। অরূপ বিশ্বাস মারফত ফোন গিয়েছিল তারকাদের কাছে। কিন্তু তাতে যে তেমন কাজ হয়নি, বোঝা যাচ্ছে। যদিও স্বরূপ বিশ্বাস বললেন, ‘‘কলকাতার বাইরে কয়েক জন ছিলেন। আবার অনেকেই এসেছেন। এটা এমন কিছু ব্যাপার নয়।’’
অনেক দিন ধরেই রুদ্রনীলের বিজেপিতে যোগদানের খবর শোনা যাচ্ছে। তাঁর উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন ছিলই। রুদ্রনীল জানালেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি যেতে পারেননি। অসুস্থতার কারণে যাননি তনুশ্রী চক্রবর্তীও। পায়েল সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তাঁর শুটিং ছিল। প্রায় প্রত্যেক বারই অঙ্কুশকে এই মঞ্চে দেখা যায়। তাঁর অনুপস্থিতির কারণে অভিনেতা বলছেন, ‘‘বাড়িতে কিছু কাজ ছিল। সব সামলে যাওয়া হল না।’’ লোকসভা নির্বাচনের আগে শ্রাবন্তী বিজেপির প্রতিনিধিত্ব করবেন বলে শোনা যাচ্ছিল। তখন নায়িকা বিষয়টি উড়িয়ে দেন। এই গুঞ্জন ফের জোরদার হয়েছে। শ্রাবন্তীর সঙ্গে পায়েলের নামও শোনা যাচ্ছে। এই মঞ্চের নিয়মিত মুখ বনি সেনগুপ্ত ছিলেন না। বললেন, ‘‘বারাণসী থেকে শুটিং সেরে ফিরেছি। খুব ক্লান্ত ছিলাম।’’ যদিও তাঁর মা পিয়া সেনগুপ্তকে মঞ্চে দেখা গিয়েছে।
লোকসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পরে, মুনমুন সেন ধর্মতলার অনুষ্ঠান এড়িয়েই গিয়েছেন। রিয়া-রাইমাও আসেননি। এ বারে টিকিট না পাওয়া সন্ধ্যা রায়কেও দেখা গেল না। তৃণমূল ঘনিষ্ঠ ইন্দ্রাণী হালদার যেমন জানালেন, তিনি শহরের বাইরে কাজে ব্যস্ত। ছিলেন না কবীর সুমন, রঞ্জিত মল্লিকও।
স্বাভাবিক ভাবেই সাংসদদের মধ্যে দেব, মিমি চক্রবর্তী, নুসরত জাহানকে দেখা গিয়েছে। যথারীতি এ বারেও ছিলেন অরিন্দম শীল, রাজা চন্দ, রাজ চক্রবর্তী, ভরত কল, প্রিয়ঙ্কা সরকার, দোলন রায়। সাম্প্রতিক বিতর্কের পরে নচিকেতা চক্রবর্তীকে এই মঞ্চে দেখা যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। নচিকেতার উপস্থিতি বলে দিচ্ছে, দিদির খাতায় তাঁর নাম কাটা যায়নি। মমতার টেলি ব্রিগেডের বেশ কিছু মুখ চোখে পড়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও চাঁদের হাটে ভাঙন ধরার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এ দিনের মঞ্চে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে ইডি থেকে জেরা করার প্রসঙ্গও তোলেন মুখ্যমন্ত্রী।
সদ্য ঋষি কৌশিক, কাঞ্চনা মৈত্র, রূপাঞ্জনা মিত্র, পার্নো মিত্র-সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় তারকা নয়াদিল্লি গিয়ে বিজেপিতে যোগদান করেন। বিজেপির প্রভাব যে টলিউডে ক্রমশ জোরদার হচ্ছে, তা হয়তো আঁচ করছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই সম্ভবত বিজেপি সদস্য অভিনেত্রী অঞ্জনা বসুকে এ দিনের মঞ্চ থেকে কটাক্ষ করেন তিনি। অঞ্জনার কাছে এ ব্যাপারে প্রশ্ন রাখা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমার মতো সাধারণ মানুষের নাম উনি ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে বলছেন মানে, ওঁর কাছে আমার চাঁদের হাটে ভাঙন?গুরুত্ব রয়েছে।’’
কে উপস্থিত থাকলেন, কে থাকলেন না— এটা রাজনীতির অঙ্ক। অনুপস্থিতরা যে সকলেই বিজেপিমুখী, এখনই তা মনে করার কারণ নেই। হয়তো অনেকে তৃণমূল সংসর্গ বাঁচিয়ে নিজেকে নিরপেক্ষ প্রমাণের চেষ্টা করছেন। কেউ হয়তো সঙ্গত কারণেই আসেননি। তবে কে কোন পক্ষে, তা আগামী দিনেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy