স্পাইডার-ম্যান
আমেরিকায় যে ভাবে বাইরের বিশ্বের প্রাণীর নিত্য আক্রমণ ঘটে (হোক না তা রুপোলি পরদায়) তেমনটা এ দেশে হলে না জানি কী হতো! বিদেশ-বিভুঁইয়ে তো ক্যাপ্টেন আমেরিকা তার দলবল নিয়ে সদা সজাগ দেশ তথা পৃথিবী রক্ষায়। কিন্তু এ পোড়া দেশে তো ভরসা বলতে খালি কৃষ। সে-ও আসে তিন বছরে একবার। ফ্লাইং জাট বা রা ওয়ানের উপরও তো পুরোপুরি ভরসা করা যায় না!
কিন্তু বলিউডে যেখানে নায়করাই প্রায় অতিমানবিক ব্যাপার-স্যাপার করে থাকেন, সেখানে সুপারহিরো নিয়ে ছবি এত কম কেন? বিশেষত ‘বাহুবলী’ তো সুপারহিরো ফ্লিকের চেয়ে কোনও অংশেই কম নয়। সেই ছবির সাফল্যের পরেও সুপারহিরো নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে এতটা দোনামনা কেন বলিউডের?
আরও পড়ুন: মমতা সরকারের বিজয়া সম্মিলনী গ্ল্যামারহীন!
রেখেছ ফ্যান করে, দর্শক করোনি
বেশ কয়েক বছর আগে এক আন্তর্জাতিক প্রযোজনা সংস্থা ভারতে তাদের শাখা খুলেছে। ওই সংস্থাই হলিউডে সুপারহিরো ছবির সহ-প্রযোজক। লঞ্চ পার্টিতে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভারতীয় সুপারহিরোদের নিয়ে ছবির পরিকল্পনা আছে কি না? কর্মকর্তার উত্তর ছিল, বাজেট কম হলেই করা যায়। সুপারহিরো সিনেমা আর বাজেট কম!
ওয়ান্ডার উওম্যান
সুপারহিরো কমিক্স বা ছবির ভক্তদের দাবি, ভারতীয় সুপারহিরোর সংখ্যা কিন্তু নেহাতই কম নয়। বিশেষ করে রাজ কমিক্সের চরিত্রগুলো যথেষ্ট পরিণত। ফ্যানদের দাবি, বলিউড কখনওই সুপারহিরো ছবিকে প্রাপ্তমনস্কদের ছবি বলে মনেই করল না। কমিক বই যেন শুধু ছোটদের বই। মার্ভেল বা ডিসি কমিক্সের ক্ষেত্রে কিন্তু তেমনটা হয় না। কেউ কেউ তো খোঁচা দিয়ে বলেন, এ দেশে প্রাপ্তমনস্ক মানে ডেলি সোপ!
আরও পড়ুন: পুনর্মিলন
বক্স অফিসেও তো কাটতে হবে
অবশ্য ফ্যানদের সঙ্গে সহমত নন মুম্বইয়ের কোনও প্রযোজকই। তাঁদের দাবি, আয়রনম্যান, ক্যাপ্টেন আমেরিকা বা ব্যাটম্যানের সঙ্গে বক্স অফিসে টক্কর দেওয়া অসম্ভব। প্রযোজকদের যুক্তিকে একেবারে ফেলে দেওয়া যায় না। কারণ ভারতীয় দর্শকের পছন্দ বোঝা পোড়-খাওয়া প্রযোজকের কাছেও সত্যিই শক্ত। না হলে ‘ব্যাটম্যান ভার্সাস সুপারম্যান’-এর মতো খারাপ ছবি বক্স অফিসে রমরমিয়ে চলে! আর পঞ্চাশ কোটি বাজেটের ‘ফ্লাইং জাট’-কে বক্স অফিস গোটাতে হয় মাত্র পঁয়ত্রিশ কোটি টাকায়!
কৃষ
এ অবস্থায় ‘কৃষ’-এর মতো সফল ফ্র্যাঞ্চাইজি ছাড়া আর কোনও সুপারহিরোকে মাঠে নামাতে ভয় পাওয়াই স্বাভাবিক। অনুরাগ কাশ্যপ যেমন ভারতীয় সুপারহিরো ডোগা নিয়ে ছবি করার জন্য অনেক দূর এগিয়েছিলেন। তার পর আর উচ্চবাচ্য শোনা গেল না।
এখন রণবীর কপূরের ‘ড্রাগন’ নিয়ে শোরগোল চলছে। অয়ন মুখোপাধ্যায় নাকি ট্রিলজি করতে চান। খুব গোপনে ছবির শ্যুটিং চলছে। গল্প-চরিত্র-লোকেশন কোনও কিছু নিয়েই মুখ খুলছেন না প্রোডাকশনের কেউই। শ্যুটিংয়ের অনেকটাই লন্ডনে হচ্ছে। তাই রণবীর আর আলিয়া মাঝেমধ্যেই লন্ডন পাড়ি দিচ্ছেন। তবে ভারতীয় সুপারহিরো ছবির যা বাজার, তাতে ট্রিলজি আদৌ সম্ভব হবে তো?
রণবীর এ বার সুপারহিরো
দেখা হবে তোমায় আমায়
ভারতীয় সুপারহিরোদের কথা উঠলেই দর্শকরা গুণগত মানের প্রশ্ন তোলেন। সে প্রশ্ন যে একেবারে অবান্তর, তেমনটা নয়। অন্তত ক্রিস্টোফার নোলানের ব্যাটম্যান ট্রিলজি বা উলভরিন সিরিজের ‘লোগান’-এর নিরিখে। কিন্তু হলিউডের সব সুপারহিরো ছবিই যে গুণগত দিক থেকে উৎকর্ষ বা বক্স অফিস সফল, তেমনও নয়। তবু হলিউডে প্রতি বছরে প্রায় চার-পাঁচটা করে সুপারহিরো ছবি মুক্তি পায়। সে ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা অবশ্য নেয় মার্ভেল বা ডিসি কমিক্স।
ফ্যানদের কাছে সেটাই খারাপ লাগার। বিদেশি সুপারহিরো ছবিতে যেমন এক সুপারভিলেন থাকে, বলিউডি মসালায় তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। ভারতীয় ছবির ভিলেনগুলোও কেমন যেন পানসে!
সুপারহিরো ছবির বেজায় ভক্ত গৌরব চক্রবর্তী বলছিলেন, ‘‘বাঙালির কাছে কিন্তু ফেলুদা, ব্যোমকেশই সুপারহিরো। তবে বাংলায় বা হিন্দিতে হলিউডের মতো সুপারহিরো ছবি তৈরি হলে মন্দ হয় না।’’ কিন্তু বিদেশি ছবির মান ছুঁতে কি আমরা পারব? ‘‘কেন জানি না, আমরা গুণগত মানে পিছিয়ে! হয়তো বাজেট সমস্যা। তবে এখানে সুপারহিরো নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে। হয়তো ভবিষ্যতে হলিউ়ডের মতো ছবি আমরাও করতে পারব।’’
ভারতীয় ছবিতে সুপারহিরো নিয়ে শেষ কথাটা বোধহয় লেখক দেবদূত পট্টনায়কই বলেছেন, ‘‘ভারতীয় সুপারহিরো কেনই বা পৃথিবী রক্ষা করতে যাবে! আমরা বিশ্বাস করি ম্যাজিকাল ক্ষমতার উপর। ভারতীয় অভিনেতা তাই বিদেশি সুপারহিরো সুলভ আচরণ করলে লোকে কেন তা দেখতে যাবে!’’
হক কথা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy