Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Coronavirus

টানা দু’মাস শুটিং বন্ধের পরে কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলার টেলি-ইন্ডাস্ট্রি?

লকডাউনে বিপর্যস্ত জুনিয়র আর্টিস্ট এবং টেকনিশিয়ানদের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এসেছে আর্টিস্ট ফোরাম, ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ানসের মতো সংস্থা।

টেলি তারকারা

টেলি তারকারা

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২০ ০৩:১৭
Share: Save:

দু’মাস অতিবাহিত, প্রায় স্তব্ধ বিনোদন দুনিয়া। প্রত্যেক দিন সন্ধে হলেই চা আর টিভির রিমোট নিয়ে বসে পড়ত যে বাঙালি, তার সম্বল এখন রিপিট টেলিকাস্ট, ডাবড শো কিংবা বাড়ি থেকে মুঠোফোনে শুট করা কিছু কনটেন্ট। ধারাবাহিকের বিপুল চাহিদা, তার সঙ্গে জড়িত বিরাট অঙ্কের ব্যবসা এবং সর্বোপরি টেলি-ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িত শিল্পী-কর্মীরা শুটিং বন্ধের দু’মাস পরে কোথায় দাঁড়িয়ে?

১৮ মার্চ শেষ বারের মতো ধারাবাহিকের শুটিং হয়েছিল টালিগঞ্জের বিভিন্ন স্টুডিয়োয়। তার পর থেকে কার্যত কর্মহীন প্রযোজক, পরিচালক, অভিনেতা, টেকনিশিয়ান, সাপ্লায়ার প্রত্যেকে। তার উপর সম্প্রতি কালার্স বাংলার চারটি শো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অনেকেই। সাধারণত মুখ্য শিল্পীদের কেউ কেউ চ্যানেলের সঙ্গে সরাসরি চুক্তিবদ্ধ থাকেন, বাকিরা প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে। বেশির ভাগ শিল্পী, টেকনিশিয়ানই কাজ করেন দৈনিক পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে, যাঁরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে। গত ১৮ মে প্রকাশিত হওয়া সরকারি নির্দেশিকা অনুসারে ‘ক্লিন এরিয়া’য় আউটডোর শুটিং শুরুর কথা বলা হলেও তা ছোট পর্দার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। জেনারেল গাইডলাইন মানতে গেলেও কার্যত শুটিং করা সম্ভব নয়, কারণ সেখানে মাস্কের ব্যবহার, দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ স্পষ্ট। তাই নির্দেশিকায় শুটিং শুরুর কথা বলা হলেও আশার আলো দেখছে না টেলিপাড়া।

লকডাউনে বিপর্যস্ত জুনিয়র আর্টিস্ট এবং টেকনিশিয়ানদের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এসেছে আর্টিস্ট ফোরাম, ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ানসের মতো সংস্থা। তবে সেই সাহায্য কি যথেষ্ট? আর্টিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন, সময়টা দীর্ঘায়িত হওয়ায় তাঁদের ফান্ডেও টান পড়ছে। ‘‘আমরা প্রাথমিক ভাবে তিন মাসের টার্গেট নিয়ে এগোচ্ছিলাম। প্রথম পর্যায়ে ৬৬০ জনের আবেদনে সাড়া দিয়ে মাথাপিছু ২০০০ টাকা করে দিতে পেরেছিলাম। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৫০০ টাকা করে দিচ্ছি। আগের মাসে যাঁরা পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ফের ৭০-৮০ জনকে অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার করতে পেরেছি এখনও পর্যন্ত। এর পরে কী করে টানব, জানি না,’’ বললেন অরিন্দম।

আরও পড়ুন: ক্রিসমাসে নেই আমির খান

শুধু জুনিয়র আর্টিস্টরাই নন, সমস্যায় অনেক মুখ্য শিল্পীই। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন কেউ কেউ। অভিনেতা জিতু কামাল একটি ফেসবুক ভিডিয়ো করেছেন। ‘‘অনেকে ভাবেন, অভিনেতা মানেই তাঁদের অনেক টাকা। কিন্তু আমাদেরও ইএমআই দিতে হয়, দৈনন্দিন খরচ এতটুকুও কমেনি। আমাদের কথা কে ভাববেন?’’ প্রশ্ন তোলেন তিনি। চ্যানেলের সঙ্গে সরাসরি চুক্তিবদ্ধ মুখ্য চরিত্রাভিনেতাদের অনেকেই মার্চ মাস অবধিও টাকা পেয়েছেন। প্রযোজকের ভাঁড়ারে টান, তাঁদের টাকাও বিভিন্ন জায়গায় আটকে। ‘কোড়া পাখি’ ধারাবাহিকের লিড পার্নো মিত্র মার্চ মাস অবধি কাজ করায় সেই মাস অবধি টাকা পেয়েছেন বলেই জানিয়েছেন। আবার ‘শ্রীময়ী’ ধারাবাহিকের ডিঙ্কা অর্থাৎ সপ্তর্ষি মৌলিক চ্যানেল থেকে সরাসরি পেমেন্ট পাচ্ছিলেন এত দিন। ‘‘কাজ যেহেতু বন্ধ, তাই পেমেন্ট দাবি করার ক্ষেত্রেও বিবেকে বাধছে। এ ভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে কী হবে, সত্যিই অনিশ্চিত,’’ বললেন সপ্তর্ষি। ওই সিরিয়ালের জুন আন্টি ওরফে ঊষসী চক্রবর্তীও জানালেন, যত দিন কাজ করেছেন, টাকা পেয়েছেন। তিনি ধারাবাহিকের প্রযোজনা সংস্থা ‘ম্যাজিক মোমেন্টস’-এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। সংস্থার অন্যতম প্রধান শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘সমস্যা আমাদেরও হচ্ছে। যে নতুন গাইডলাইন আরও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। কারণ সেই নির্দেশিকা মেনে শুটিং করা কার্যত সম্ভব নয়।’’

‘কনক কাঁকন’-এর প্রধান মুখ শ্বেতা ভট্টাচার্য জানালেন, চ্যানেল শো বন্ধ করে দেওয়ায় তাঁর উপার্জনও আপাতত বন্ধ। ‘‘এমন একটা সময়ে কোনও আগাম নোটিস ছাড়াই চ্যানেলের শো বন্ধের এই সিদ্ধান্তে আমরা সকলে বিপদে পড়েছি। আমাদের কোনও টেকনিশিয়ান ফুল বিক্রি করে, কেউ দোকান চালিয়ে উপার্জন করছেন। তবু প্রযোজক স্নেহাশিসদাকে (চক্রবর্তী) ধন্যবাদ, উনি সব সময়ে আমাদের পাশে রয়েছেন,’’ বললেন শ্বেতা। চারটি শো বন্ধের প্রতিবাদে একটি সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ খুলেছেন পরিচালক শ্রীজিৎ রায়। ‘ভুতু’, ‘বেহুলা’-সহ একাধিক ধারাবাহিকের নির্দেশক শ্রীজিৎ বর্তমানে জ়ি বাংলার ‘কী করে বলব তোমায়’-এর ক্রিয়েটিভ হেড। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও আকস্মিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের কথা ভাবা হোক। বাংলায় যাঁরা এত দিন ব্যবসা করলেন, তাঁরা এখন শো বন্ধ করে শিল্পী-টেকনিশিয়ানদের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে ডাব করা শো চালাবেন, এটা মেনে নেওয়া যায় না।’’

স্টুডিয়োপাড়ায় যন্ত্রপাতি, আলো, পোশাক থেকে শুরু করে সেটের যাবতীয় খুঁটিনাটি সরবরাহ করতেন যাঁরা, সেই সাপ্লায়ারদের অবস্থা আরও কঠিন। সাপ্লায়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নীত পাল জানালেন, সরকারি-বেসরকারি কোনও সংস্থাই তাঁদের পাশে নেই। ‘‘অনেকে এই সময়ে অন্য পেশা বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। তাঁদের সমস্যার কথা ফোরাম, ফেডারেশন বা সরকার— কারও কাছেই পৌঁছে দিতে পারিনি।’’ বাংলা ধারাবাহিক, বিজ্ঞাপনে কস্টিউম সাপ্লাই করতেন শঙ্কর জানা। তিনি মুদির দোকানে বসছেন এখন। ‘করুণাময়ী রাণী রাসমণি’ ধারাবাহিকে আলো সরবরাহ করেন এমন এক কর্মী চাষের কাজে মন দিয়েছেন।

‘লকডাউন ডায়েরি’, ‘ননস্টপ আবোল তাবোল’ কিংবা ‘প্রিয় তারকার অন্দরমহল’ বলে বেশ কয়েকটি নন-ফিকশন শো শুরু হয়েছে বিভিন্ন চ্যানেলে। বাড়ি থেকেই ফোনে শুট করা ক্লিপ পাঠাচ্ছেন অভিনেতারা। সামান্য হলেও পেমেন্ট পাচ্ছেন। প্রাইম টাইম শোয়ের বিজ্ঞাপনগুলি হাতছাড়া হওয়ায় ক্ষতির মুখে প্রতিটি চ্যানেলই। নতুন ধরনের শো এনে এক্সপেরিমেন্ট করতে চাইছেন তাঁরাও। উপরন্তু বাজেট কমানোর অলিখিত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চ্যানেলের কাছে নতুন কনটেন্ট, অভিনেতাদের কাছে ক্রিয়েটিভ রিলিফ হলেও বাড়ি থেকে শুট করা শো নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন টেকনিশিয়ানদের একাংশ। স্টার জলসার গানের রিয়্যালিটি শো ‘সুপার সিঙ্গার’-এর কিছু এপিসোড অনলাইনে শুট করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে টেকনিশিয়ানরা জানিয়েছেন, রানিং শোয়ের এপিসোডের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়বেন তাঁরা। লকডাউন উঠলে শোয়ের হোস্ট যিশু সেনগুপ্ত ও নির্মাতাদের এই মর্মে একটি নোটিস পাঠানোর কথাও ভাবা হয়েছে। অন্য দিকে, টেকনিশিয়ানদের কথা ভেবেই বাড়ি থেকে ‘রান্নাঘর’-এর এপিসোড শুট করতে রাজি হননি সুদীপা চট্টোপাধ্যায়। নিজের পুরনো শোয়ে ফিরতে চলেছেন তিনি।

সব মিলিয়ে যে দুষ্টচক্রে আটকা পড়েছে বিনোদনের চাকা, তা ফের কবে ঘুরবে বলা মুশকিল। আপাতত শুটিং শুরুর উপযুক্ত নির্দেশিকা হাতে আসার অপেক্ষায় দিন গুনছেন সকলে।

আরও পড়ুন: দু’মাস পরে মুম্বইয়ে

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown Tollywood Television
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy