কবির বকুল। ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশ জুড়ে প্রবল বিতর্ক। অবশেষে মুখ খুললেন অভিযুক্ত গীতিকার। কবির বকুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত কবিতা থেকে লাইন 'চুরি' করেছেন নিজের লেখা গানে। শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ছ'বার। এ বার যে গানটির জন্য পুরস্কার পাচ্ছেন, সেটি ঘিরেই বিতর্ক।
পরীমণি অভিনীত 'বিশ্বসুন্দরী' ছবিতে ইমরান-কনার গাওয়া গান 'তুই কি আমার হবি রে'। এই মুহূর্তে গানটির ইউটিউব শ্রোতার সংখ্যা তিন কোটি ছুঁই-ছুঁই। উল্লেখ্য, গানটির জন্য কেবল রচয়িতা নন, গায়ক, গায়িকা, সুরকারও পুরস্কার পেতে চলেছেন। সেই গান নিয়ে অভিযোগটা কী? গানের শুরুতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘হঠাৎ দেখা’ কবিতার ‘রাতের সব তারা আছে দিনের আলোর গভীরে’ থেকে ‘আলো’ শব্দটি বাদ দিয়ে বাকিটুকু হুবহু ব্যবহৃত। সমালোচকদের বক্তব্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা থেকে এক বা দুই লাইন যিনি নিজের বলে চালিয়ে দিয়েছেন, তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হতে পারেন না।
প্রথমে চুপ থাকলেও বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমের কাছে মুখ খুলেছেন অভিযুক্ত গীতিকার কবির বকুল। নির্মলেন্দু গুণের 'আমি কি ডরাই সখি, ভালোবাসা ভিখারি, বিরহে?' সহ কয়েকটি কবিতার লাইন তুলে ধরে কবির বকুলের বক্তব্য- "অমর লেখা থেকে 'অনুপ্রেরণা' নেওয়াই যায়... আধুনিক কবিতা বা গীতিকবিতায় ক্লাসিক বা ধ্রুপদী রচনা থেকে কিছু অংশ উদ্ধৃত করা একটা স্বীকৃত রীতি।"
কবি বিষ্ণু দে রবীন্দ্রনাথের কবিতা কীভাবে ব্যবহার করেছিলেন নিজের কবিতায়, সে প্রসঙ্গে কবির বকুল একটি উদাহরণ তুলে ধরেছেন- রবীন্দ্রনাথের লেখা "এতদিন পরে প্রভাতে এসেছ/ কী জানি কী ভাবি মনে/ ঝড় হয়ে গেছে কাল রজনীতে/ রজনীগন্ধাবনে" মাথায় রেখে বিষ্ণু দে লিখেছিলেন, "কাল রজনীতে ঝড় হয়ে গেছে রজনীগন্ধা-বনে/ বৈশাখী মেঘ মেদুর হয়েছে সুদূর গগনকোণে…"। সব শেষে কবির বকুল বলেছেন, "‘রাতের সব তারা আছে দিনের আলোর গভীরে'- এটা যে রবীন্দ্রনাথের লাইন, তা-ও কি বলে দিতে হবে?"
বাংলাদেশ কপিরাইট বোর্ডের রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী ক'দিন আগে এই গান রচনাকে 'জোচ্চুরি' বললেও বর্তমানে পূর্ব-মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, "গোটা বিশ্বে এখনও ব্রিটিশ কপিরাইট আইনটিকে সবাই ফলো করার চেষ্টা করেন। সেই আইনের ৩১ নম্বর সেকশনে আমি এই বিতর্কের একটা সুরাহা পেলাম। অধ্যায়টির নাম ইনসিডেন্টাল ইনক্লুশন। ঘটনাক্রমে কোনও একটা কিছু কোথাও মিলে যায়, তবে সেটা কপিরাইট লঙ্ঘন হবে না। যদি না তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে করা হয়। কবির বকুল নিশ্চয়ই রবীন্দ্রনাথের মানহানির জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কাজটি করেননি। এটি ওই কবিতা বা লাইনের প্রতি অতি-মুগ্ধতা থেকেই হয়েছে বলে আমি মনে করি। কপিরাইটের ভাষায় এটাকে আমরা বলি 'ফেয়ার ইউজ'।"
বিতর্ক তবু চলছেই। অনেকেরই মত, "কবির বকুলের মতো নামী গীতিকার এমন না করলেই ঠিক হত। কালো দাগটা এড়িয়ে গেলেই ভাল করতেন তিনি।"
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy