রাজনীতির ময়দানে মুখোমুখি রাজ এবং রুদ্রনীল।
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থিতালিকা তারকাখচিত। আর তা দেখে খানিক মর্মাহত সদ্য বিজেপি-তে যোগদান করা রুদ্রনীল ঘোষ। নির্বাচনের জমিতে ঘাসফুল এবং পদ্মফুলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের কথা ভেবে এমন অবস্থা নয়। সহকর্মী-বন্ধুদের করুণ ভবিষ্যৎ কল্পনা করেই মুষড়ে পড়েছেন অভিনেতা।
তৃণমূলের প্রার্থিতালিকা ঘোষণার পর আনন্দবাজার ডিজিটালের পক্ষ থেকে রুদ্রনীলকে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “বিরোধী দলের প্রার্থী নিয়ে আমার মনে বিন্দুমাত্রও শঙ্কা নেই। কারণ আজ পর্যন্ত মানুষের ভোটে জিতে যে যে তারকা এই দলে থেকে কাজ করতে চেয়েছেন, তাঁদের কোনও দিন কাজ করতে দেওয়া হয়নি। তা নিয়ে উষ্মাপ্রকাশ থেকে পদত্যাগ, কত কিছুই তো হয়েছে।” শুধু নিন্দা করেই থেমে থাকেননি তিনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে থেকে কাজ না করতে পারার ‘পরিসংখ্যান’ও দিয়েছেন রুদ্রনীল। তুলে এনেছেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্লর পদত্যাগের প্রসঙ্গ। ‘বন্ধু’ মিমি চক্রবর্তী এবং দেবের কথাও ভুলে যাননি। তাঁর কথায়, “মিমি চক্রবর্তী এবং দেব কিন্তু প্রায় বসে গিয়েছেন। তাঁদের লোকসভা কেন্দ্রের মানুষের জন্য তাঁরা আওয়াজ তুলেছিলেন। কিন্তু পার্টি তাঁদের বুঝিয়ে দিয়েছে, তাঁদের মুখ বিক্রি করে শুধু ভোটে জেতা হবে। এর বাইরে তাঁরা আর কোনও কথা বলতে পারবেন না।”
শিল্পীদের প্রতি সাধারণ মানুষের ভালবাসাকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূল ভোট আদায়ের রাজনীতি করে বলে অভিমত রুদ্রনীলের। অভিনেতার দাবি, কাজ না করতে পেরে বীতশ্রদ্ধ হয়ে গিয়েছেন মিমি এবং দেব, তাই নাকি দলের কর্মসূচিতে দেখা যায় না তাঁদের। তাঁদের ইনস্টাগ্রামেও তাই রাজনৈতিক পোস্টের থেকে ‘পাখি,ফুল,কুকুর’-এর ছবি দেখা যায় বেশি। এ বারেও যে সব তারকারা মনোনীত হয়েছেন, তাঁদেরও কখনও মাঠে নেমে সরাসরি কাজ করতে দেখেননি বলে খোঁচা রুদ্রনীলের।
শাসক দলের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ষোলআনা। তবে দলনেত্রীর প্রতি ভালবাসার কথাও বললেন অভিনেতা। একই সঙ্গে দলনেত্রীর অনুগামীদের ‘চাল,ডাল,ত্রিপল চুরির রাজনীতি’-তে বন্ধু, সহকর্মীদের নাম লেখাতে দেখে ব্যথিত রুদ্রনীল। তাঁর আশঙ্কা, এই দল যোগ্য সম্মান দেবে না রাজ,জুন,সায়ন্তিকাদের। দেব এবং মিমির মতোই নাকি ভবিষ্যতে কোণঠাসা হবেন তাঁরাও। অন্য দিকে, বাংলায় বিজেপি-র ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা লক্ষ্য করে নির্বাচনে তাঁদের জয়লাভ নিয়েও সন্দিহান অভিনেতা।
তৃণমূলের থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নেওয়ার খতিয়ানও দিয়েছেন রুদ্রনীল। নতুন করে তুলে এনেছেন ‘কাটমানি’ প্রসঙ্গ। পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য বরাদ্দ ত্রাণ চুরির অভিযোগ এনেছেন শাসক দলের বিরুদ্ধে। দাবি করেছেন, নিজের দলকে আগের মতো করে সামলে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন মমতা। এর পরেই তিনি বলেন, “মানুষের লাঞ্ছিত হওয়া, বঞ্চিত হওয়া, টাকা চুরি যাওয়া আমার বন্ধুরা নিশ্চয়ই সমর্থন করেন বলেই তাঁরা তৃণমূলের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তাঁরা কেউ কোনও দিন প্রতিবাদও করেননি এই অন্যায়গুলোর বিরুদ্ধে। আবার হতে পারে, তাঁরা জানেনই না এ সবের ব্যাপারে। তাই ভুল করে দাঁড়িয়ে পড়েছেন।”
বহুদিনের বন্ধু রাজ চক্রবর্তীকেও কিন্তু এই তালিকায় ফেলতে দ্বিতীয়বার ভাবেননি রুদ্রনীল। তিনি মনে করেন, টলিউডের কিছু তারকাকে তৃণমূলে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ‘অনুঘটক’ হিসেবে কাজ করেছেন রাজ। রুদ্রনীল বললেন, “রাজ একজন সফল পরিচালক। ওঁর হাতে অনেক কাজ। যাঁর হাতে কাজ বেশি, মানুষ তো তাঁর কথা শোনেন। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়দের টপকে তিনি চলচ্চিত্র উৎসবের চেয়ারম্যান হয়েছেন, ফলে ওঁরও তো দায়িত্ব থেকে যায়।” এর পরেই খানিক সুর নরম করে জানান, প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হওয়ার পরেই রাজকে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন রুদ্রনীল। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার আঁচ যে বন্ধুত্বে পড়বে না, সে বিষয়েও আশ্বস্ত করেছেন অভিনেতা।
তৃণমূলের পর খুব শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে বিজেপি-র প্রার্থিতালিকা। তবে প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াবেন কি না জানেন না রুদ্রনীল। কারণ হিসেবে তিনি বললেন, “ভারতীয় জনতা পার্টি ব্যক্তিনির্ভর কোনও দল নয়। তৃণমূলের মতো নয় যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নম্বর আমার কাছে আছে বলেই আবদার জানাতে পারি। বিজেপি-তে প্রচুর গবেষণার পর, জনমত নেওয়ার পর, কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চলে ৪-৫ জনের মধ্যে একজনকে বেছে নেওয়া হয়। যদি সেই প্রক্রিয়ায় আমি মনোনীত হই তা হলে নিশ্চয়ই নির্বাচনে দাঁড়াব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy