মিঠুন চক্রবর্তী এবং বাবুল সুপ্রিয়।
মিঠুন চক্রবর্তী আসছেন। ভিড় জমাতে এখনও এই কথাটুকুই যথেষ্ট! বৃহস্পতিবারের সকাল সাড়ে ১১টার টালিগঞ্জ মোড়। ব্যস্ত রাস্তায় গাড়ি, জনতার ঢল। তারই মধ্যে ধার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে হুড খোলা জিপ। নানা রঙের পদ্মফুল তাতে। এই জিপে করেই টালিগঞ্জ বিধানসভায় প্রচার সারবেন বাবুল সুপ্রিয়। চারপাশে তেরঙা বেলুন, ফেস্টুনের ছড়াছড়ি। জোর কদমে বাজছে শিল্পীর গাওয়া গান, ‘ফুটবে এ বার পদ্ম ফুল, বাংলা ছাড় তৃণমূল।’ আজ বাবুলের সমর্থনেই মহানগরে মহাগুরু।
কথা ছিল রোড শো শুরু হবে বেলা ১২টা থেকে। মহানায়ক উত্তমকুমারের মূর্তিতে মালা পরিয়ে। ফুল দিয়ে সম্মান জানানো হবে কিশোর কুমারকেও। রোড শো ঘুরবে টেকনিশিয়ান স্টুডিয়োর সামনে দিয়ে চারপাশের এলাকায়। বেলা বাড়তেই এই খবর মুখে মুখে ছড়াতে আরম্ভ করেছে পথ চলতি মানুষদের কাছে। ব্যস! হঠাৎই ব্যস্ততা বন্ধ হয়ে গেল যেন।এই প্রজন্মের একটি ছেলে হুড়মুড়িয়ে ছুটছিল অফিসের পথে। সে ও দাঁড়িয়ে গেল। ইতস্তত করে এ দিক ওদিক চেয়েই হাসির সঙ্গে অকপট স্বীকারোক্তি, ‘‘মিঠুনদা আসছেন! এই সুযোগ ছাড়া যায়? কী আর হবে অফিসে 'বস' বকবে!’’
কিন্তু কখন আসবেন তিনি?
বিজেপি শিবির থেকে খবর জানা গেল, সকাল সকাল মহাগুরু প্রচারে বেরিয়ে পড়েছেন পাশের ওয়ার্ডে। সেই ওয়ার্ডের রোড শো প্রায় শেষ। কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে পৌঁছোবেন।
বেলা বাড়ছে। রোদের তাপের সঙ্গে জনতার ভিড়ও গাঢ় হচ্ছে। ক্যামেরা তাক করে, বুম নিয়ে ‘অ্যাটেনশন’-এর ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে সাংবাদিক, আলোকচিত্রীরা। একটা মুহূর্তও যেন মিস না হয়। সাজানো-গোছানো জিপ একটু নড়লে চড়লেই সবাই ওই বুঝি এল। ঘড়ির কাঁটা যখন প্রায় ১টার ঘরে তখনই দুধ সাদা মার্সিডিজ চালিয়ে টালিগঞ্জ মোড়ে বিজেপির সেই প্রার্থীর আগমন। নিজের গাড়ির নিজেই চালক।গাড়িতে বাবুলের পাশে মিঠুন চক্রবর্তী। বাইরে আওয়াজ ‘গুরু গুরু’!
গাড়ি থেকে নামতেই স্তব্ধ সমস্ত যান চলাচল। জয় ধ্বনি আরও বাড়ছে। জমায়েতে জনতার দিকে হাত নাড়তে নাড়তে ২ তারকাই পৌঁছে গিয়েছেন মহানায়কের মূর্তির পাদদেশে। সিঁড়ি ছুঁয়ে প্রণাম সেরে উত্তমকুমারের মূর্তির পায়ে মাল্যদান, শ্রদ্ধায় স্মরণ। সাজপোশাকে যদিও একে অন্যের ঘোর বিরোধী। বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় আপাদমস্তক সাদা। গেরুয়া শিবিরে সদ্য যোগদানকারী মিঠুনের মাথার ব্যান্ডানা ছাড়া বাকি সব কুচকুচে কালো। কিন্তু তাঁরা যে হৃদয়ে অভিন্ন, শ্রদ্ধা জানানো শেষ হতেই প্রমাণ মিলল।
কী ভাবে? সাংবাদিকদের কাছে বাবুল সুপ্রিয়র অভিযোগ, ‘‘মিঠুনদা’র শো বানচাল করতে নির্বাচন কমিশনে আগে থেকে চিঠি দিয়েছিল প্রশাসন। বলেছিল, তৃণমূলের রোড শো আছে। তাই মিঠুনদা’র রোড শো হতে পারবে না।’’ বাবুলের কথা ফুরোনোর আগেই খেই ধরলেন মিঠুন, ‘‘শাসকদল যদি ভেবে থাকেন এ ভাবে ভোট আটকাবেন খুব ভুল ভাবছেন। আমরা খুব বড় করে ভোট করাব। এবং ভোটে আমরাই জিতে আসব।’’
বেলা বাড়ছে। চাঁদি ফাটা রোদে পথের কুকুরও ধুঁকছে। তখনও টালিগঞ্জবাসীর কী উৎসাহ! বাড়ির জানলায়, বারান্দায় ঘাড়ের উপরে চড়ে বাঙালির ‘মহাগুরু’ দর্শন চলছে। ‘আমি জল ঢোঁড়াও নই, বেলে বোড়াও নই। আমি জাত গোখরো। এক ছোবলেই ছবি’, এমন মারকাটারি সংলাপ কিন্তু শোনা যায়নি তাঁর মুখে। কাঁধছোঁয়া লম্বা চুলে রুপোলি আলোর ঝিলিক। বুক ছোঁয়া ধবধবে সাদা দাড়ি-গোঁফ। পঁয়ষট্টি প্লাসের এই বাঙালিকে দেখতেই সরু গলির দু’পাশে দাঁড়িয়ে উৎসাহী স্থানীয়রা। ফলাফল যা-ই হোক। মিঠুন মানে বাঙালির নায়ক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy