Vineet Kumar Singh waited for 17 years to see himself in the role of a hero in Bollywood dgtl
Bollywood
চিকিৎসক হয়েও ছবিতে ‘মৃত’, ১৭ বছর লড়াইয়ের পরে নায়কের ভূমিকায় সুযোগ পাঁজরভাঙা বিনীতের
প্রস্তুতির জন্য বিক্রি করতে হয়েছিল ঘরের আসবাপত্র। বক্সিং অনুশীলনে ভেঙে গিয়েছিল পাঁজর। কিন্তু তার পরেও পিছিয়ে আসেননি তিনি।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২১ ১৪:২১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
ডাক্তারি পাশ করেও মন বসেনি পেশায়। বরং চিকিৎসক হওয়ার শংসাপত্র হাতে নিয়ে চলে এলেন অভিনেতা হতে। ১৭ বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে থাকার পরে অবশেষে পেলেন স্বীকৃতি। বিনীতকুমার সিংহের লড়াই হার মানাবে হিন্দি ছবির চিত্রনাট্যকেও।
০২১৮
বারাণসীর ছেলে বিনীতের পরিবারের অবস্থান হিন্দি ছবির জগৎ থেকে অনেক দূরে। তাঁর বাবা গণিতজ্ঞ। লিখেছেন অঙ্কের বেশ কিছু পাঠ্যবইও। পরিবারের সকলেই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, নয়তো কলেজের অধ্যাপক।
০৩১৮
লেখাপড়ায় মেধাবী বিনীত বাস্কেটবলও ভাল খেলতেন। তিনি জাতীয় স্তর অবধি বাস্কেটবল খেলেছেন। তাঁর বাবা-মায়েরও ইচ্ছে ছিল তিনি বড় হয়ে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হন।
০৪১৮
আয়ুর্বেদ চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে পড়বেন বলে বিনীত চলে যান হরিদ্বার। সেখান থেকে স্নাতকে শীর্ষ স্থান পেয়ে তিনি নাগপুরে চলে যান। পরবর্তী স্তরে পড়ার জন্য। বাড়ি থেকে দূরে থাকায় বিনীতের ছবি দেখা আগের থেকে অনেক বেড়ে গেল। সে সময় তিনি বোনের কাছে একটি ট্যালেন্ট হান্ট শো-এর খবর পেলেন।
০৫১৮
প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে নাগপুর থেকে মুম্বই চলে গেলেন বিনীত। শো-এর বিচারক ছিলেন মহেশ মঞ্জরেকর। তিনি তাঁর ‘পিতা’ ছবিতে ছোট ভূমিকায় সুযোগ দেন বিনীতকে।
০৬১৮
আয়ুর্বেদ চিকিৎসাশাস্ত্রে এমডি সম্পূর্ণ করার পরে বিনীত তাঁর বাবার কাছে অনুমতি চান অভিনয়কে পেশা হিসেবে নেওয়ার। প্রথমে তাঁর বাবা ছেলের এই সিদ্ধান্তের বিরোধী ছিলেন। কিন্তু বিনীত একবার সুযোগ চান। বলেন, ব্যর্থ হলে তিনি ফিরে যাবেন চিকিৎসকের পেশায়।
০৭১৮
প্রথম ছবি ‘পিতা’ ব্যর্থ হয়। এর পর মু্ম্বইয়ে প্রোডাকশন অফিসের দরজায় দরজায় ঘুরতে থাকেন তিনি। কিন্তু সব জায়গাতেই প্রত্যাখ্যাত হন। শেষে এমনও হয়েছে, তাঁকে দূর থেকে আসতে দেখলেই রে রে করে তেড়ে যেতেন প্রোডাকশন হাউসের দারোয়ানরা।
০৮১৮
শেষে কোথাও সুযোগ না পেয়ে বিনীত সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন মহেশ মঞ্জরেকরের কাছেই। বেশ কিছু ছবিতে তিনি মহেশের সহকারী ছিলেন। বিনীত চেয়েছিলেন তাঁর পরিচয়ের বৃত্ত বড় হোক এভাবে।
০৯১৮
শুধুই সহকারী পরিচালক হিসেবে নয়। তিনি ছোটখাটো অভিনয়ের সুযোগও খুঁজতে লাগলেন। এমনও হয়েছে, তিনি কোনও ছবিতে শুধু মৃতের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। ভোজপুরী ছবি ও সিরিয়ালেও তিনি কাজ করেছেন। দৈনিক মজুরি ছিল ৫০০-৭০০ টাকা।
১০১৮
সে সময় যা উপার্জন ছিল, মুম্বইয়ে মাথাগোঁজার জায়গা পাননি বিনীত। ডাক্তারি পড়ার সুবাদে তাঁর কিছু পরিচিত ছাত্র ছিলেন মু্ম্বইয়ে। তাঁদের সঙ্গে হস্টেলে রুম শেয়ার করতেন। যখন হস্টেলের সুপার পরিদর্শনে আসতেন, তখন ছাদে গিয়ে অপেক্ষা করতেন। এমনও হয়েছে, সারারাত বৃষ্টির মধ্যে তাঁকে থাকতে হয়েছে ছাদেই।
১১১৮
সে সময় তাঁর কোনও বন্ধু ইউরোপে যাচ্ছে। আবার কোনও বন্ধু হয়তো হাসপাতাল খুলছে। সেখানে বিনীতকে মুম্বইয়ে বসে রাতে খাবারের রুটি কম খেতে হচ্ছে। যাতে বাঁচিয়ে রাখা রুটি সকালে খেতে পারেন। এই সময় সমস্যার কথা তিনি শেয়ার করতেন ছোট বোন ও ভাইয়ের সঙ্গে। পরিবারে তাঁরাই দাদার সিদ্ধান্তের পাশে ছিলেন।
১২১৮
শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে বিনীত মুম্বই ছেড়ে ফিরে যান বারাণসীতেই। কিন্তু সেখানে গিয়েও বেশি দিন ভাল লাগল না। মনে হল, নিজের স্বপ্নকে মেরে ফেলছেন তিনি। নতুন করে সব কিছু শুরু করবেন বলে ফিরলেন মুম্বইয়েই।
১৩১৮
মহেশ মঞ্জরেকরের ‘সিটি অব গোল্ড’-এ অভিনয় করে নজর কাড়লেন বিনীত। সে সময় অনুরাগ কশ্যপ তাঁর ‘গ্যাংস অব ওয়াসিপুর’ ছবির জন্য অভিনেতা বাছাই করছিলেন। তাঁর সঙ্গে দেখা করেন বিনীত।
১৪১৮
নিজের শহরের ছেলেকে ফিরিয়ে দেননি অনুরাগ। বিনীতকে তিনি ‘গ্যাংস অব ওয়াসিপুর’-এ দানিশ খানের ভূমিকায় সুযোগ দিলেন। এর পর তিনি অভিনয় করেন ‘বম্বে টকিজ’-এও।
১৫১৮
কিন্তু বিনীত চাইছিলেন নায়কের ভূমিকায় নিজেকে দেখতে। এর পর বিনীত নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে একটি গল্প লিখলেন। বাস্কেটবল খেলার সূত্রে জানতেন খেলার দুনিয়ায় রাজনীতির অলিগলি। সেই অভিজ্ঞতা দিয়েই লিখলেন গল্প। তবে গল্পে বাস্কেটবলের জায়গায় এল বক্সিং। ফিডব্যাকের জন্য সেই গল্প পাঠালেন অনুরাগ কশ্যপের কাছে। গল্প তো পছন্দ করলেনই। অনুরাগ জানালেন, তিনি এই ছবিতে নায়কের ভূমিকায় নেবেন বিনীতকেই। শুরু হল ‘মুক্কাবাজ’-এর প্রস্তুতি।
১৬১৮
পঞ্জাবের একটি গ্রামে গিয়ে প্রস্তুতি শুরু করলেন বিনীত। নিজের চেহারা পাল্টে ফেলার জন্য শুরু করলেন কঠোর অনুশীলন। তাঁর কোচ ছাড়া কেউ জানতেনই না তিনি আসলে একজন অভিনেতা। প্রস্তুতির জন্য বিক্রি করতে হয়েছিল ঘরের আসবাপত্র। বক্সিং অনুশীলনে ভেঙে গিয়েছিল পাঁজর। কিন্তু তার পরেও পিছিয়ে আসেননি তিনি।
১৭১৮
২০১৭ সালে মুক্তি পায় ‘মুক্কাবাজ’। অবশেষে ১৭ বছর অপেক্ষার পরে নিজেকে নায়ক হিসেবে দেখার স্বপ্ন পূর্ণ হল বিনীতের। এই ছবির সাফল্যের পরে মূলস্রোতের সুযোগ আসতে থাকে তাঁর কাছে। ‘গোল্ড’, ‘সাঁড় কি আঁখ’, ‘গুঞ্জন সাক্সেনা: দ্য কার্গিল গার্ল’-এ অভিনয় করেন তিনি।
১৮১৮
নিজের স্বপ্নের প্যাক আপ হয়ে যেতে দেননি বিনীতকুমার। দীর্ঘ প্রত্যাখ্যানের পরে অপেক্ষা করে থেকেছেন সুযোগের। সুযোগ পেয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, এভাবেও ফিরে আসা যায়।