শ্রীকান্ত আচার্য। ছবি: সংগৃহীত।
ছোটবেলায় স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানের কথা মনে পড়ে? এক ধরনের পোশাক পরে এক মঞ্চে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে গলা ছেড়ে গান গাইতাম প্রায় ২৫-৩০ জনের একটি দল। সবাই যে অনবদ্য গায়ক বা গায়িকা, তা নয়। তবে একই স্কেলে, একই সুর ও লয় মেনে গান গাওয়ার পরম্পরা বজায় ছিল। প্রতি বছর ওই সমবেত সঙ্গীতের মহড়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকতাম আমরা পড়ুয়ারা। ‘কোরাস গান’-এর এই পরম্পরা ধরে রেখেছিল স্কুলগুলিও। এখন অবশ্য সেই চর্চা অনেক কম। আজকাল ব্যক্তি প্রতিভায় শান দেওয়ার প্রবণতা যতটা বেড়েছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমেছে সমষ্টিগত প্রয়াসের গুরুত্ব। বৃন্দগানের বিস্মৃতপ্রায় সেই পরম্পরাকে জিইয়ে রাখার উদ্যোগ নিয়েছেন বাংলার অভিজ্ঞ সঙ্গীতশিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য। তাঁর সঙ্গীত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ‘আরোহ’-র উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছে ‘বাংলা গানের আন্তঃবিদ্যালয় বৃন্দ গায়ন প্রতিযোগিতা’। প্রতিযোগিতামূলক এই অনুষ্ঠানের নাম রাখা হয়েছে ‘ঐকতান’।
রুমা গুহঠাকুরতার ‘ক্যালকাটা ইয়ুথ কয়্যার’, কল্যাণ সেন বরাটের ‘ক্যালকাতা কয়্যার’, সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় ও স্নিগ্ধা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ক্যালকাটা পিপলস কয়্যার’-এর সৌজন্যে এত দিন সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলার বৃন্দগান। সেই পরম্পরা বজার রাখার দায়ভার এ বার নিলেন শ্রীকান্ত আচার্য। ‘আরোহ’-র আয়োজিত এই প্রতিযোগিতা ‘ঐকতান’-এ অংশগ্রহণ করতে পারবে সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পড়ুয়ারা। ইতিমধ্যেই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে সাউথ পয়েন্ট, পাঠভবন, গোখেল মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল, বালিগঞ্জ শিক্ষা সদন, নব নালন্দার মতো স্কুল। কলকাতা ছাড়াও জেলার একাধিক স্কুলও উৎসাহ দেখিয়েছে এই প্রতিযোগিতায়। চিনসুরা দেশবন্ধু মেমোরিয়াল হাই স্কুল, চন্দননগর বঙ্গ বিদ্যালয়ের মতো স্কুলও অংশ নিয়েছে বৃন্দগানের এই প্রতিযোগিতায়। আগামী ২৬ অগস্ট অনুষ্ঠিত হতে চলেছে প্রতিযোগিতার সেমিফাইনাল ও ফাইনাল পর্ব। রাজডাঙা ক্লাব সমন্বয়ের প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে এই প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় বিচারকের আসেন দেখা যাবে প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী কল্যাণ সেন বরাট, গায়িকা অন্তরা চৌধুরী, ‘সা রে গা মা পা’ খ্যাত রথীজিৎ ভট্টাচার্যকে।
আনন্দবাজার অনলাইনকে প্রতিযোগিতার আয়োজক শ্রীকান্ত আচার্য বলেন, ‘‘আজকাল বৃন্দগানের চর্চাটা অনেক কমে গিয়েছে। সমবেত সঙ্গীত বলতে শুধুই রবীন্দ্রনাথের গান গাওয়া। আলাদা করে অন্য ধরনের গানও কিন্তু সমষ্টিগত ভাবে গাওয়া যায়, যে চর্চাটা ‘ক্যালকাটা ইয়ুথ কয়্যার’ তৈরি করেছিল। ওই পরম্পরাটা এখন আর নেই। তার পরে এসেছে ব্যান্ড। আমার ব্যান্ডের ধাঁচে যাচ্ছি না। আমরা সমবেত সঙ্গীতটাকেই তুলে ধরতে চাইছি।’’ শ্রীকান্ত আচার্যের স্ত্রী, গীতিকার অর্ণা শীলের কথায়, ‘‘বৃন্দগানের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১৬ জনের দলকে চেয়েছি আমরা। সঙ্গে দু’জন যন্ত্রবাদকও থাকতে পারেন, যাঁরা পড়ুয়া নয়। তিনটি বিভাগ রেখেছি আমরা প্রতিযোগিতায়— পঞ্চকবির (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, অতুলপ্রসাদ সেন, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রজনীকান্ত সেন) গান, নব্বইয়ের দশকের আগের বাংলা আধুনিক গান ও নব্বইয়ের দশকের পরের আধুনিক বাংলা গান।’’ সেমিফাইনালের জন্য মোট ১০টি বিদ্যালয় নির্বাচিত হতে চলেছে। ওই ১০টি বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রতিযোগিতা হবে সেমিফাইনাল রাউন্ডে। তার পরে ফাইনালের পালা। আগামী ২৬ অগস্ট রাজডাঙা ক্লাব সমন্বয়ের প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ‘ঐকতান’-এর ফাইনাল পর্ব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy