পরিচালক প্রভাত রায়।
‘টলিউডে গুণ্ডারাজ চলছে’, এমন কুৎসার প্রতিবাদে রবিবার পথে নেমেছিল ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত কলাকুশলীরা। সোমবারে সংগঠনের হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় প্রচ্ছন্ন হুমকি, যাঁরা আসতে পারেননি ভবিষ্যতে তাঁদের কথা ‘গভীর ভাবে ভাববে’ ফেডারেশন। মঙ্গলবার নিজের সামাজিক পাতায় তারই তীব্র প্রতিবাদ জানালেন প্রভাত রায়।
কী বলেছেন বর্ষীয়ান পরিচালক? ফেসবুকে তিনি খোলামেলা জানিয়েছেন, ‘কেউ বলছেন এখানে 'তোলাবাজি' চলছে। কেউ বলছেন 'মাফিয়া রাজ' চলছে। কেউ বলছেন 'রগড়ে দেব'। আবার কেউ বলছেন, 'যারা আমাদের মিছিলে আসেনি তাদের নিয়ে গভীর ভাবে ভাবতে হবে'। সবাই ধমকাচ্ছেন, চমকাচ্ছেন। ভাবতে অবাক লাগে, এই ইন্ডাস্ট্রিতে আমি কত বছর কাজ করেছি। কখনও এসব কথা শুনিনি’।
কতটা ফারাক ঘটে গিয়েছে সে কাল আর এ কালের ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে? আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন বর্ষীয়ান পরিচালক, ‘‘আমাদের সময়ে কোনও রাজনৈতিক দল কখনও নাক গলায়নি কোনও বিষয়ে।’’ তাঁর কথায়, প্রযোজক এসেছে। গল্প শোনানো হয়েছে তাঁকে। পরিচালক কলাকুশলী, শিল্পী নির্বাচন করে শ্যুটিং করেছেন। কারওর চোখ রাঙানি সহ্য করতে হয়নি।
পরিচালক হতবাক, ‘‘এখন বিদেশে শ্যুট করতে হলে ফেডারেশন ঠিক করে দেবে কত জন টেকনিশিয়ান নেব! এর মানে কী? কত জন লাইটম্যান, ট্রলিম্যান, মেকআপ ম্যান, টেকনিশিয়ান লাগবে সেটা বরাবর পরিচালকই ঠিক করে এসেছেন।’’ তাঁর দাবি, এটা ইন্ডাস্ট্রির পক্ষে ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর।তিনি সাবধান করে বলেছেন, ‘এ ভাবে চলতে থাকলে একদিন দেখবেন এঁরাই বলবেন ছবিটা এই ভাবে বানান। ওই ভাবে বানান। না হলে ইন্ডাস্ট্রি থেকে বেড়িয়ে যান’।
এই ঘটনার জন্য তিনি কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন রাজনীতিকেই। যুক্তি, ‘‘আগে রাজনীতির এত রমরমা ছিল না বাংলা ছবির দুনিয়ায়। এখন সবাই রাজনীতি করছেন। প্রার্থী হচ্ছেন। অভিনয় ছেড়ে যোগ দিচ্ছেন কোনও না কোনও দলে। সেই সুযোগে বাইরের কিছু মানুষ ঢুকে অকারণ মাথা গলাচ্ছেন সব বিষয়ে।’’ পাশাপাশি এও বলেছেন, ‘‘একটি দল শাসাচ্ছে এমন নয়। সমস্ত রাজনৈতিক দল কোনও না কোনও ভাবে ধমকাচ্ছে শিল্পীদের।’’
কেন ঘটছে এটা? তা হলে কি টলিউডে সত্যিই মেরুকরণ ঘটেছে? এই অভিযোগ অস্বীকার করতে পারেননি তিনিও। জবাবে জানিয়েছেন, ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে দীর্ঘ দিন নেই তিনি। তবে এমন অভিযোগ তাঁর কানেও এসেছে। সত্যিই এ রকম কিছু না ঘটলে কেনই বা এমন কথা ছড়াবে? পাল্টা প্রশ্ন রেখেছেন প্রভাত। ‘‘কেউ কংগ্রেস, কেউ বাম দল। কেউ গেরুয়া শিবিরে তো কেউ শাসকদলে। এ ভাবে রাজনীতি নিয়ে মাতামাতি করে অভিনেতারা নিজেরাই সাঁড়াশি আক্রমণ করছেন।’’ একই সঙ্গে অভিমান, অভিনয়ে আর মন নেই কারওর।
সোমবারেই পরিচালক সঙ্ঘমিত্রা চৌধুরী আনন্দবাজার ডিজিটালকে জানিয়েছেন, টলিউডে এই মুহূর্তে বহু পরিচালক, কলাকুশলীর হাতে কাজ নেই। তারকারা সে জন্যই দলে দলে যোগ দিচ্ছেন রাজনীতিতে। এই অনুযোগে মানতে নারাজ প্রবীণ পরিচালক। তাঁর মতে, ‘‘কাজ নেই, এ কথা ঠিক নয়। কাজ কম হচ্ছে, এটা বলা যেতে পারে।’’ এই মুহূর্তে প্রভাত রায়, পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী, সুদেষ্ণা রায় নন্দন ছবি সিলেকশন কমিটির সদস্য। কী ছবি দেখানো হবে, সেটা তাঁরা ঠিক করেন। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে পরিচালকের দাবি, আগে সপ্তাহে ২-৩টি করে ছবি আসত। এখন সেটা মাসে ১-২টিতে দাঁড়িয়েছে। ছবি তৈরির সংখ্যা কমে গিয়েছে।
কেন আর আগের মতো ছবি তৈরি হচ্ছে না? কারণ কি শুধুই করোনা? প্রভাতবাবুর মতে, বাংলা ছবি কম চলছে, কম দেখছেন দর্শক। আক্ষেপ, তাঁর পরিচালিত ছবি ‘লাঠি’ এক একটি হলে ৩টি শোয়ে টানা ২৫ সপ্তাহ চলেছে। আর এখন কোনও ছবি টানা ৫ সপ্তাহ চললেই হইহই পড়ে যায়! এ ভাবে নিজেদের পিঠ নিজেরাই চাপড়াচ্ছেন সবাই। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলা ছবির দুনিয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy