কৌশানী মুখোপাধ্যায়, অভিনেত্রী।
রাজনীতিতে পা রাখতে না রাখতেই আক্ষরিক অর্থে ‘খেলা শুরু’! নেটমাধ্যমে কটাক্ষের শিকার হয়েছেন ইতিমধ্যেই। কিন্তু ভয় পাননি। পিছিয়েও আসেননি। বরং বুদ্ধি দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছেন কৌশানী মুখোপাধ্যায়। আনন্দবাজার ডিজিটালকে তেমনটাই জানালেন।
প্রশ্ন: রাজনৈতিক জীবন কতটা উপভোগ করছেন?
কৌশানী: নতুন ভূমিকায় বেশ ভালই লাগছে (হাসি)। অনেক কিছু শিখছি। চ্যালেঞ্জিংও খুব।
প্রশ্ন: ভিডিয়ো বিতর্কের পরে মনে হয়েছে ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’?
কৌশানী: সবাই জানেন, এটা রাজনৈতিক নোংরামি। নির্বাচন শুরু হয়ে গিয়েছে। আমার বিরুদ্ধে কোনও অস্ত্র নেই। তাই অপপ্রচারই সই! কিন্তু নেতিবাচক প্রচারও তো এক ধরনের প্রচার! কিছুক্ষণের মধ্যেই আসল ভিডিয়ো নেটমাধ্যমে পোস্ট করতেই সবাই বুঝেছেন, কতটা দুধ আর কতটা জল। সব মেটার পরেও বলব, আমি মনে মনে ধাক্কা খেয়েছি। ৬ বছরের অভিনয় জীবনে কাউকে আঙুল তুলতে দিইনি। রাজনীতিতে পা রাখতে না রাখতেই নারীদের নিরাপত্তার মতো জাতীয় বিষয় নিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে রটনা। খুব সস্তা আর নোংরা রাজনীতি। বিরোধী পক্ষকে দাবিয়ে রাখতে চাইলে আমিও এ রকম কিছু করতেই পারি। কিন্তু একবারও নোংরামির ধারপাশ দিয়ে হাঁটিনি।
প্রশ্ন: যখন কথা বলছিলেন, তখন আপনার শরীরী ভাষা বা কথার ভঙ্গি কি ভিডিয়োয় দেখানোর মতোই ছিল?
কৌশানী: প্রথমেই বলি, আমি যে ভাবে দিদা-ঠাকুরমার সঙ্গে কথা বলব, সে ভাবে কি অল্পবয়সীর সঙ্গে কথা বলব? না তো? ঠিক সেটাই করেছি। দিদা, কাকিমা, বৌদিদের সঙ্গে ‘আপনি’, ‘আজ্ঞে’ করে কথা বলেছি। তার পরেই সামনে যাঁরা ছিলেন তাঁরা এই প্রজন্মের। বাড়িতে ভাইয়ের সঙ্গে যে ভাবে কথা বলি, ঠিক সেই ভাবেই ওঁদেরও বলেছি। কোনও খারাপ ভাবে বলিনি। আমার বলার ভঙ্গিটাই ও রকম। যখনই যার সঙ্গে কথা বলি ঘরোয়া ভঙ্গি বেরিয়ে আসে। আসল ভিডিয়ো সামনে আসতে নোংরামি থেমে গিয়েছে। এখন আমার কথা বলার ভঙ্গি নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে।
প্রশ্ন: একটা ভিডিয়োকে কেন্দ্র করে সমস্ত বিরোধী পক্ষ আপনার বিরুদ্ধে। ফেসবুকে বিবৃতি দেওয়া ছাড়া আপনি চুপ! দলের নিষেধে?
কৌশানী: কোথায় আমি কথা বলিনি! নেটমাধ্যমে বলেছি। সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছি। চ্যানেল আমার বিবৃতি সম্প্রচার করেছে। যে দিন ওই ঘটনা ঘটেছে, সে দিন আমার দল আসল ফুটেজ বের করতে পারেনি। তাই ওই একটি দিন চুপ ছিলাম। ফুটেজ হাতে পেতেই যাকে যা বলার বলেছি।
প্রশ্ন: দল আপনাকে আলাদা করে সমর্থন জানিয়েছেন?
কৌশানী: অবশ্যই। শুধু দল নয়, সংবাদমাধ্যমও আসল ঘটনা জানার পর আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। তারা আমার সঙ্গে দিন কাটিয়ে দেখেছে, আমি কেমন। সেটাই তারা তুলে ধরছে। এক মাত্র বিজেপি ছাড়া বাকি সমস্ত শিক্ষিত নিরপেক্ষ জনগণকে পাশে পেয়েছি। তাই এই ঘটনাকে আর আলাদা করে দেখে সময় নষ্ট করতে চাইছি না। জানি, এগুলো হবেই।
প্রশ্ন: সেই রাগটা কি বনির উপর মেটালেন?
কৌশানী: একদমই না। আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক আলাদা। রাজনৈতিক সম্পর্কও আলাদা। একে অন্যকে প্রচণ্ড সম্মান করি। ও যখন কোনও চিত্রনাট্য বেছেছে, আমি তাতে নাক গলাইনি। রাজনীতির ক্ষেত্রেও একই নীতি মেনে চলছি। প্রত্যেকের স্বাধীন মতামত আছে। বিশ্বাস, মতাদর্শ আছে। কেউ কারওর উপর জোর করে কিচ্ছু চাপিয়ে দিতে পারি না।
প্রশ্ন: বনির দল বদলানোর সিদ্ধান্ত জানার পর একবারও আটকাননি?
কৌশানী: একেবারেই না। আমি প্রচণ্ড স্বাধীনচেতা। তার ছাপ আমার কথা, গলার স্বরেও। যা নিয়ে আজ এত সমালোচনা। আমি যদি আমার সমস্ত বিষয়ে স্বাধীনতা পছন্দ করি, অন্যের নাক গলানো অপছন্দ করি, তাহলে অন্যকেও সেই জায়গাটা ছেড়ে দিতে হবে। তাই বনির সিদ্ধান্ত একান্তই ওর ব্যক্তিগত।
প্রশ্ন: বনি যদি আপনার বিরোধী প্রার্থী হতেন?
কৌশানী: বিরোধী প্রার্থীকে রাজনীতির ময়দানে যে ভাবে সামলাচ্ছি, বনিকেও সে ভাবেই সামলাতাম। পেশা আর ব্যক্তিগত সম্পর্ক গুলিয়ে ফেললে তো চলবে না! অভিনয়ের জন্য ঘরের চার দেওয়ালের সম্পর্ক যেমন ভাঙেনি, রাজনীতির জন্যেও ভাঙবে না।
প্রশ্ন: ‘অভিনেত্রী’ ‘নেত্রী’ হওয়ার পর সকাল থেকে কী করছেন?
কৌশানী: টাইম টেবিল পুরো উল্টে গিয়েছে। আগে শ্যুটিং না থাকলে সকাল ৮টায় ঘুমই ভাঙত না! এখন তৈরি হয়ে প্রচারে বেরিয়ে পড়ছি। যেহেতু আমার এলাকা অনেকটা বড়, তাই ৫-৬ ঘণ্টা রোজ হেঁটে ঘুরছি। বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছি। তার পরে ২ ঘণ্টার জন্য ছুটি। স্নান, খাওয়া, ফ্রেশ হওয়া। বিকেলে আবার বেরোচ্ছি। সন্ধেয় ফিরে চা খেয়ে বৈঠকে বসে যাচ্ছি। দায়িত্ব বেড়ে গিয়েছে। দম ফেলার সময় পাচ্ছি না। রাতের খাবার খেতে খেতে ১২টা বেজে যাচ্ছে!
প্রশ্ন: সুস্থ থাকতে ডায়েটে কী থাকছে?
কৌশানী: এমনিতেই ঘরোয়া রান্না খেতে ভালবাসি। তার উপর ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সারা দিন ঘুরছি। তাই বেশি করে জল, ডাবের জল খাচ্ছি। ভারী খাবার বলতে বাড়ির ডাল, ভাত, আলু ভাজা, মাছের ঝোল বা চিকেন। এই চলছে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। আলাদা ডায়েটের আর সময় নেই এখন।
প্রশ্ন: প্রচারে পোশাকটাও প্রাধান্য পাচ্ছে। অন্য ড্রেসের বদলে শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজ, দোপাট্টা। গ্ল্যামার সরিয়ে মাটির কাছাকাছি?
কৌশানী: এক জন অভিনেত্রী যা পরতে পারেন, এক জন রাজনীতিবিদকে কি তা মানায়? নেত্রীর আদবকায়দা অভিনেত্রীর একেবারেই বিপরীত। ফলে, পোশাক থেকে আচরণ— সবেতেই আমিও বদলে গিয়েছি। আবার যখন অভিনয়ে ফিরব, আবার আমি আগের কৌশানী।
প্রশ্ন: ‘নেত্রী’ আর ‘অভিনেত্রী’র মধ্যে এটাই সূক্ষ্ম পার্থক্য?
কৌশানী: আরও আছে। অভিনেত্রী হিসেবে যতটা বড় দুনিয়া দেখেছি, চাপ বা চ্যালেঞ্জ নিয়েছি, রাজনীতিতে সে সব প্রায় চতুর্গুণ বেশি। এখন মনে হচ্ছে, তখন কিছুই করিনি। এত মানুষের দায়িত্ব, কথা দিয়ে কথা রাখা—এই জীবনটা পুরোপুরি আলাদা।
প্রশ্ন: রোদে ঘুরে ত্বক কালচে। কৌশানীও এই নিয়ে প্রচণ্ড খুঁতখুঁতে। ট্যান এড়াতে কী করছেন?
কৌশানী: সহজে এই ট্যান যাবে বলে মনে হচ্ছে না। কালো হওয়ার ব্যাপারটাই মাথা থেকে আপাতত বের করে দিয়েছি। যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। এখন আমার শরীরে যে হারে ভিটামিন ডি রয়েছে, অনায়াসে কাউকে ধার দিতে পারি (হাসি)। আগে জিতে নিই। তার পর স্কিন ট্যান নিয়ে ভাবব। ১ মাস বাদে রং আবার ফিরে আসবে।
প্রশ্ন: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য জয়া বচ্চন এসেছেন। দেখা হল? সবাই বলছেন, মিঠুন চক্রবর্তীর পাল্টা চাল নাকি জয়া?
কৌশানী: আমি আমার কেন্দ্রে প্রচারে ব্যস্ত। মনে হয়, এ যাত্রায় আর দেখা হবে না। আর জয়াজি তো বাংলার মেয়ে। অমিতাভ বচ্চন যেমন বাংলার জামাই। এক মেয়ে আর এক মেয়ের সমর্থনে পাশে দাঁড়াবেন, এটাই তো স্বাভাবিক। পাল্টা চাল হতে যাবে কেন?
প্রশ্ন: ‘খেলা হবে’ ট্যাগলাইন অনুযায়ী নির্বাচনে কী খেলা হচ্ছে?
কৌশানী: লোকসভায় ১৮টি আসন জিতে বিজেপি-র ধারণা বিধানসভায় জেতাটাও একই রকম সহজ। বাস্তবে সেটা নয়। ভোটের ময়দানে আমাদের দল থেকেও লড়ার মতো প্রার্থী আছেন। তাই শাসকদল বলতে চেয়েছে ‘খেলা হবে’। অর্থাৎ, যুদ্ধে জিততে আমরাও তৈরি। বিজেপি-র ভাবগতিক যেন ২৯৪ আসন জিতে বসে আছে। আসলে তা না। আমরাও আছি পুরোদমে।
প্রশ্ন: জিতে ফিরলে নির্বাচনী কেন্দ্রকে কী উপহার দেবেন?
কৌশানী: মেয়েদের উন্নতির জন্য যা যা করা যায়, মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার, সব করব। যদিও আমাদের রাজ্য নারী নিরাপত্তায় সবার সেরা। এটা আমি বলছি না, সমীক্ষার দাবি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই কাজ করে দেখিয়েছেন। এটা বলতে গিয়েই তো যত কাণ্ড! এক জন মেয়ে হয়ে মেয়েদের উদ্দেশ্যে আমি কখনও বার্তা দিতে পারি, ‘ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে রেপ করে দেব!’ এই কুৎসা বিশ্বাসযোগ্য?
প্রশ্ন: কু’মন্তব্য তো বন্ধ হচ্ছে না! দু’পক্ষই সমান তালে বলে চলেছেন...
কৌশানী: এটা সত্যিই সমর্থনযোগ্য নয়। নারী-পুরুষ, শিল্পী নির্বিশেষে প্রতি দিন অপমানিত হচ্ছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy