ঋষি কপূর (১৯৫২-২০২০)
ফের নক্ষত্রপতন বলিউডে। বৃহস্পতিবার সকালে চলে গেলেন ঋষি কপূর। শ্বাসকষ্ট নিয়ে মুম্বইয়ের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। সংবাদমাধ্যমকে তাঁর বড় ভাই অভিনেতা রণধীর কপূর তাঁর প্রয়াণের খবর জানান। দীর্ঘ দিন ধরেই ক্যানসারে ভুগছিলেন ঋষি। বিদেশে একটানা চিকিৎসার পর গত বছর দেশে ফেরেন তিনি। কিন্তু মাঝেমধ্যেই সংক্রমণ বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। সংবাদ সংস্থার খবর, বুধবার সকালে শ্বাসকষ্ট বাড়ায় এইচ এন এন রিলায়েন্স হাসপাতালে ফের ভর্তি করা হয় অভিনেতাকে। বৃহস্পতিবার সকালে ৬৭ বছর বয়সে মৃত্যু হয় তাঁর। ইরফান খানের পরেই ঋষি কপূর, একের পর এক মৃত্যুর খবরে দিশাহারা চলচ্চিত্র জগৎ।
রাজ কপূর ঘরানার এই উজ্জ্বল উত্তরসূরি 'মেরা নাম জোকার' ছবিতে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৭০ সাল। নিতান্তই শিশু তিনি তখন। কিন্তু প্রথম আত্মপ্রকাশেই জাতীয় পুরস্কার তাঁর অভিনয় জীবনের পথ তৈরিতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। ১৯৭৩-এ একেবারেই ভিন্ন ধারায় তাঁর আবির্ভাব, 'ববি'। ঝড় তুলে দিয়েছিলেন ঋষি। রোম্যান্টিক নায়ক হিসেবে যৌবন তাঁকে স্বীকৃতি দিয়েছে আজীবন।
তাঁর শেষ ছবি হয়ে রইল ‘১০২ নটআউট’। সেই ছবিতে সহ-অভিনেতা ছিলেন অমিতাভ বচ্চন। যিনি ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে বলেছেন, ‘‘আই অ্যাম ডেসট্রয়েড।’’ ঋষি কপূরের চলে যাওয়া তাঁকে এতটাই বিষণ্ণ করে তুলেছে। ঋষির আত্মজীবনী ‘খুল্লাম খুল্লা: ঋষি কপূর আনসেন্সরড’ বিশ্ব চলচ্চিত্রে এক ঐতিহাসিক দলিল হয়ে থেকে গেল আজ। অভিনেতা সম্প্রতি জানিয়েছিলেন, তিনি একটি হলিউড ছবি ‘ইনটার্ন’-এর রিমেকের কথা ভাবছেন। যেখানে তিনি দীপিকা পাড়ুকোনের সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছিলেন। তাঁর এই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল।
Multifaceted, endearing and lively...this was Rishi Kapoor Ji. He was a powerhouse of talent. I will always recall our interactions, even on social media. He was passionate about films and India’s progress. Anguished by his demise. Condolences to his family and fans. Om Shanti.
— Narendra Modi (@narendramodi) April 30, 2020
ক্যানসারের মতো মারণ রোগ ধরা পড়ার পরেও তাকে বিশেষ গুরুত্ব না দিয়ে হেসেখেলেই বাকি জীবনটা কাটাতে চেয়েছিলেন রাজ কপূরের দ্বিতীয় পুত্র ঋষি। মৃত্যু প্রসঙ্গ এলে সহাস্যে বলতেন, ‘‘আমি আমার হাসি নিয়ে মানুষের কাছে বেঁচে থাকতে চাই। কান্না আমার পছন্দ না।’’ চিকিৎসা চলাকালীন চিকিৎসকদের নানা ভাবে হাসি খুশি রাখতেন ঋষি। দেশ জুড়ে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশে থাকার জন্য জনসাধারণকে আবেদন করেছিলেন তিনি। এপ্রিলের শুরুতে করা সেই আবেদনই ছিল তাঁর শেষ টুইট। ঋষি বরাবরই সক্রিয় ছিলেন টুইটারে। সরস, বিতর্কিত মন্তব্যে নেটাগরিকদের চিন্তার খোরাক জুগিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে।
হুল্লোড়ে সদাহাস্যময় এই অভিনেতা যদিও প্রয়োজনে স্পষ্ট এবং রূঢ় কথা বলতে কখনও পিছপা হননি। বিভিন্ন সময়ে করা তাঁর সেই টুইটগুলিই তাঁর এই চরিত্রের এই দিকটির প্রমাণ। তবে শেষ জীবনে বাড়িই ছিল তাঁর প্রাণ। ২০১৮-য় ধরা পড়ে ক্যানসার। বিদেশে চিকিৎসা চলাকালীন বার বার বাড়ি ফেরার কথা বলতেন তিনি। ১০ সেপ্টেম্বর মুম্বই ফিরে টুইট করেন, ‘‘১১ মাস ১১ দিন পর বাড়ি ফিরলাম। সবাইকে ধন্যবাদ।’’ সেই বাড়িতেই আজ তিনি নেই। থাকলেন নীতু কপূর, ছেলে রণবীর ও মেয়ে রিধিমা।
Deeply shocked & saddened at the demise of the iconic & versatile film actor #RishiKapoor. A National Film Award winner, he acted in more than than 150 films. He endured his illness with dignity and grace. My condolences to his family, friends, fans & the entire film fraternity.
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) April 30, 2020
আর ঋষি রেখে গেলেন শতাধিক ছবি। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ‘ববি’, ‘অমর আকবর অ্যান্টনি’, ‘লায়লা মজনু’, ‘রফু চক্কর’, ‘সরগম’, ‘কর্জ’, ‘বোল রাধা বোল’ ইত্যাদি। জীবনের শেষে এসে কাজ করেছেন ইমরান হাসমির ‘দ্য বডি’ ছবিতে। শুধু জীবনের ক্ষেত্রেই নয়, নীতুর সঙ্গে সেলুলয়েডে ১২টি ছবিতে জুটি বেঁধে কাজ করেছেন চিন্টু কপূর।
গতকালই চলে গেলেন ইরফান খান। তাঁর মৃত্যু কোথাও যেন এক জায়গায় নিয়ে এল সাধারণ মানুষ, রাজনীতিবিদ ও চলচ্চিত্র তারকাদের। যাঁরা ইরফানের সঙ্গে কাজ করেছেন, যাঁরা তাঁকে দেখেছেন, যাঁরা তাঁকে কোনও দিন দেখেননি, সবার মৃত্যুশোক এক। আজ সেই রাস্তায় ঋষি কপূর। এই সাম্রাজ্যের কোথাও যেন ইরফানের সঙ্গেও জুড়ে গেলেন তিনি। ‘ডি-ডে’ ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছিলেন তাঁরা। ঋষিকে ঘিরেও অনেকখানি তৈরি হয়েছে মুম্বই চলচ্চিত্র জগতের ইতিহাস। তিনি রাজ কপূরের ছেলে। তিনি পৃথ্বীরাজ কপূরের নাতি। রণবীর কপূরের বাবা। করিশ্মা-করিনার কাকা। নীতু কপূরের স্বামী।
বিকেল চারটের সময় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। কপূর পরিবারের সদস্যদের পাশে উপস্থিত ছিলেন করিনা কপূর খান, সেফ আলি খান, আলিয়া ভট্ট এবং অভিষেক বচ্চন।
এ বার বোধহয় ‘ডি-ডে’ ছবির ওয়ালি খান ও ইকবাল শেঠ মুখোমুখি হবেন এক অদেখা সেলুলয়েডে। লাইট, সাউন্ড, ক্যামেরা নয়, মৃত্যু পেরিয়ে দুই অন্তহীন প্রাণ যেন মুখোমুখি হবেন সিনে-আড্ডায়।
ক্যামেরার শাটারের খচখচ শব্দ সেখানে বড় বেমানান।
Unbelievable that such a warm human being-Rishi Kapoor is no more!Recall all my movies with him Ek Chadar Maili si, Naseeb etc &under my direction,Tell me oh Khuda. Such a lively interaction with him always!My heart goes out to dear Neetu, Ranbir & all his family. God be with thm
— Hema Malini (@dreamgirlhema) April 30, 2020
Heartbroken ... Rest In Peace ... my dearest friend #RishiKapoor
— Rajinikanth (@rajinikanth) April 30, 2020
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy