রিয়া চক্রবর্তী (বাঁ দিকে) ও দিশা সালিয়ান। দু’জনের সঙ্গেই সুশান্ত সিংহ রাজপুতের সম্পর্কের গুঞ্জন ছড়িয়েছিল।
নিজে ব্যোমকেশ বক্সীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সমাধান করেছেন মাদক পাচার রহস্যের। কিন্তু সুশান্ত সিংহ রাজপুতের নিজের মৃত্যুর কারণ এখনও পর্যন্ত ‘আনটোল্ড স্টোরি’। পুরোপুরি রহস্যে মোড়া। মুম্বই ক্রাইম ব্রাঞ্চের গোয়েন্দাদের প্রাথমিক অনুমান, আত্মহত্যা করেছেন বলিউড অভিনেতা। যদিও অন্য সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখছেন তাঁরা। কিন্তু যদি আত্মহত্যাই ধরে নেওয়া হয়, তাহলেও উঠে আসছে একটাই প্রশ্ন— কেন? কেরিয়ারের প্রায় শুরুর দিকেই কেন আত্মহত্যা করলেন তরুণ অভিনেতা?
এই প্রশ্নেই উঠে আসছে একাধিক সম্ভাবনা এবং জল্পনা। প্রথমেই এসেছে পাঁচ দিন আগে বলিউডের এক আত্মহত্যার ঘটনা। গত ৮ জুন মালাডের বাড়ির ১৪ তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন দিশা সালিয়ান। সেই মৃত্যুর সঙ্গে সুশান্তের মৃত্যুর কী সম্পর্ক? এই দিশা সালিয়ান ছিলেন সুশান্তের প্রাক্তন ম্যানেজার। বলিউডের অন্দরে যাঁদের আনাগোনা, তাঁরা জানেন, বলিউডে সুশান্তের প্রতিষ্ঠার পিছনে বিরাট অবদান রয়েছে সেলিব্রিটি ট্যালেন্ট ম্যনেজার দিশা সালিয়ানের। কিন্তু পরে সুশান্তের ম্যানেজার হিসেবে আর দেখা যায়নি তাঁকে। যদিও দিশা নিজেই ছেড়েছিলেন, না কি সুশান্ত তাঁকে সরিয়েছিলেন, সেই বিষয়টি স্পষ্ট নয়। দিশার মৃত্যুর তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। তার এক সপ্তাহের মধ্যেই সুশান্তের রহস্যমৃত্যু। দুই মৃত্যু এবং দু’টিই আত্মহত্যা? এ কি নেহাতই সমাপতন? নাকি দুই মৃত্যুর মধ্যে কোনও যোগসূত্র রয়েছে? ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের।
তবে আত্মহত্যার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না গোয়েন্দারা। তার একাধিক পারিপার্শ্বিক কারণও রয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন বলিউডের ‘মাহি’ সুশান্ত। তার জন্য চিকিৎসাও চলছিল। শেষ পর্যন্ত সেই অবসাদের কাছেই কি হার মানলেন ‘পিকে’র সেই ‘সরফরাজ’ সুশান্ত? যদি সেটা সত্যি হয়, তাহলেও অবসাদ বা হতাশারও তো কারণ থাকে। সেই কারণটাই বা কী? অথবা কী কী? তার উত্তর খুঁজতে গিয়েও বেরিয়ে আসছে একাধিক জল্পনা, গুঞ্জন এবং সম্ভাবনা।
আরও পড়ুন: সুশান্ত সিংহ রাজপুতের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার, আত্মহত্যা বলে সন্দেহ
টেলিভিশন থেকে বলিউডে পা রেখেছিলেন ‘কাই পো চে’-র মাধ্যমে। বাণিজ্যিক ভাবে সে ছবি সফল। পছন্দ হয়েছিল ফিল্ম ক্রিটিকদেরও। এর পর মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বায়োপিক ‘ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ সুপার হিট। বলিউডে কার্যত জমে গেল সুশান্তের কেরিয়ার। তার পর একে একে ‘রাবতা’, ‘কেদারনাথ’, ‘পিকে’, ‘শুদ্ধ দেশি রোমান্স’, ‘ছিঁচোড়ে’র মতো মুভিতে অভিনয়। বিরাট সাফল্য না পেলেও সবগুলি ফ্লপ— এমনও বলা যায় না। কিন্তু এখানেই হতাশার কারণ খুঁজে পেয়েছে বলিউড। কেন? অনেকেই বলছেন, আসলে মূলত ধোনির বায়োপিকের পরে আর তেমন হিট সেই অর্থে দিতে পারেননি সুশান্ত। শুরুর কয়েক বছরেই কার্যত পড়তির দিকে চলে যাচ্ছিল সুশান্তের কেরিয়ার। ‘ছিঁচোড়ে’র পর তেমন ভাল কাজও হাতে ছিল না বলেই খবর। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে বাসা বাঁধছিল হতাশা।
আরও পড়ুন: তারা দেখা ছিল নেশা, মেধাবী ছাত্র, ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়েন অভিনয়ের টানে
বলিউড মানেই আরব সাগরের ঢেউয়ের মতো মুহূর্তে মুহূর্তে ছড়ায় সম্পর্কের গুঞ্জন। সুশান্তের জীবনেও তার কমতি ছিল না। বরং কিছুটা বেশিই ছিল বলা যায়। কৃতি স্যানন থেকে অঙ্কিতা লোখন্ডে, সারা আলি খান থেকে দিশা পাটানি কিংবা রিয়া চক্রবর্তী— সুশান্তের সঙ্গে সম্পর্কের গুঞ্জন ছড়িয়েছে নানা সময়ে। কিন্তু সেগুলো সব গুঞ্জন হিসেবেই থেকে গিয়েছে। পাকাপাকি ভাবে কোনও নায়িকার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, এমন খবর বলিউডের পাপারৎজিদের কাছেও ছিল না। রিয়া চক্রবর্তীর সঙ্গে সুশান্তের আউটিং, খানাপিনার কিছু ছবি ছড়ালেও পাকাপাকি সম্পর্ক পর্যন্ত গড়ায়নি বলেই খবর। এর মধ্যে আবার শনিবারই ছিল দিশা পাটানির জন্মদিন। আর রবিবার সকালেই সুশান্তের দেহ উদ্ধার। এটাও কি কাকতালীয়? নাকি কোনও যোগসূত্র থাকতে পারে? গোয়েন্দাদের আতসকাচ থেকে বাদ থাকছে না কোনওকিছুই।
আরও পড়ুন: মা...স্মৃতিগুলো ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে চোখের জলে: শেষ পোস্ট সুশান্তের
দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছিল লকডাউন। দেশের মধ্যে মহারাষ্ট্রেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেশি। তার মধ্যেও আবার মুম্বইয়েই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত। শুধু মুম্বই এবং শহরতলিতেই আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। ফলে পুরো বলিউড কার্যত ঘরবন্দি। তার মধ্য়ে আবার এই পুরো লকডাউন পর্বে একাই দিন কাটিয়েছেন সুশান্ত। শুটিং বন্ধ। এখনও চালু হয়নি। আবার লকডাউনের জেরে মুক্তি আটকে গিয়েছিল সুশান্তের অভিনীত ‘দিল বেচারা’র মুক্তি আটকে গিয়েছিল। সব মিলিয়ে লকডাউন পর্বেও কি হতাশা বাড়ছিল সুশান্তের? উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়, তবে তদন্ত সাপেক্ষ, বলছেন মুম্বই পুলিশের তদন্তকারীরা।
মনস্তাত্ত্বিকদের মতে, অবসাদের এক ও একমাত্র কারণ থাকতে পারে। আবার একাধিক হতাশার যোগফলও বড় হতাশা এবং সেখান থেকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিতে পারে কাউকে। যদি আত্মহত্যাই করে থাকেন সুশান্ত এবং সেটা যদি হতাশা থেকে হয়, তা হলে কি সবগুলিই ছিল তার নেপথ্যে। কেরিয়ারের নিম্নমুখী গ্রাফ, একাধিক সম্পর্কের টানাপড়েন, লকডাউনের একাকিত্ব—সব মিলিয়েই কি অবসাদ জাঁকিয়ে বসেছিল সুশান্তের মধ্যে? আপাতত উত্তর নেই। তদন্তকারীরা হয়তো পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে একটা উপসংহারে আসতে পারেন, কিন্তু সুশান্তের মধ্যে যে ঠিক কী চলছিল, সেটা হয়তো আর কোনও দিনই জানা যাবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy