ভরত কল-নুসরৎ জাহান- মমতা বন্দোপাধ্যায়।
সপ্তাহের প্রথম দিন ভরত কলের দখলে। জমকালো কাজের উজ্জ্বল হলুদ পাঞ্জাবি, কালো উত্তরীয়, লাল ধাক্কাপাড় ডিজাইনার ধুতিতে সেজে তাঁকে নিয়ে আবারও ভাবতে বাধ্য করলেন অনুরাগীদের। বর্তমান পরিস্থিতি, নুসরত জাহান বিতর্ক, বলিউড, রাজনীতি নিয়ে তিনি কী ভাবছেন?
প্রশ্ন: কেজো দিনে কাজ ভুলিয়ে দিলেন!
ভরত: (হাসি) কেন, কী করলাম?
প্রশ্ন: ধুতি, পাঞ্জাবি, উত্তরীয়তে পাক্কা বাঙালিবাবু! এটাই আপনার ‘রিস্তো কা মাঞ্ঝা’র সাজ?
ভরত: হ্যাঁ। ক্রুশল আহুজা নায়ক। আমি ওঁর বাবা। নামজাদা ব্যবসায়ী। ভীষণ কড়া, একগুঁয়ে। ব্যবসার বাইরে কিচ্ছু বোঝে না। ছেলের ব্যাডমিন্টন খেলাকেও তাই ভাল চোখে দেখে না। মিথ্যে ক্রীড়া কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে ছেলে পেশা পরিবর্তনের কথা ভাবতেই বাবা খুব খুশি। এই নিয়ে ছেলের সঙ্গে টানাপড়েন। পরে যদিও বাবা-ছেলে এক হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়বে।
প্রশ্ন: সেটের লোকজন আপনার থেকে চোখ ফেরাতে পারছেন?
ভরত: (হা হা হাসি) পুরো কৃতিত্ব সুশান্ত দাসের। ওঁর বাংলা ধারাবাহিক ‘দীপ জ্বেলে যাই’-এর হিন্দি রিমেকে কাজ করছি। সুশান্ত নিজে এ ভাবে সাজিয়েছেন আমায়। যাতে ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ দেখতে লাগে।
প্রশ্ন: অজপা মুখোপাধ্যায় আপনার সাজের প্রশংসা করেছেন...
ভরত: সন্তু মুখোপাধ্যায়ের ছোট মেয়ে অজপাকে তো ছোট থেকে চিনি। ‘ফাগুন বউ’ সহ একাধিক ধারাবাহিকে সন্তুদার সঙ্গে অনেক কাজ করেছি। এক মেকআপ রুম ভাগ করেছি আমরা। অজপা নিজে ভাল পোশাক নির্মাতা। এখন কালার্স বাংলা চ্যানেলের সঙ্গে যুক্ত। ওঁরা প্রশংসা করলে সত্যিই ভাল লাগে। ২৮ বছরের অভিনয় জীবনে এটুকুই আমার প্রাপ্তি।
প্রশ্ন: কলকাতায় হিন্দি ধারাবাহিকের শ্যুটিং। বলিউডে কাজের স্বাদ কি এখানে পাচ্ছেন?
ভরত: আমি আট বছর মুম্বইয়ে কাজ করেছি। সেই জায়গা থেকে গর্ব করে বলছি, টেন্ট প্রযোজনা সংস্থা কলকাতায় বসে যা করছে সেটা মু্ম্বইয়ে বসেও সব সময় পেরে ওঠা সম্ভব নয়। এটাও সুশান্তের কৃতিত্ব। বলিউডের থেকেও বেশি কিছু উপহার দিচ্ছে। নিজের ধারাবাহিকের রিমেক। হুবহু নকল করলে কেউ কিছুই বলতেন না। সুশান্ত কিন্তু সেটা করছেন না। প্রত্যেক দিন সিন লিখে পাঠাচ্ছেন। আমরা অভিনয় করছি। সেট, সাজসজ্জা সবেতেই বলিউডকে ছাপিয়ে যাওয়ার প্রবল চেষ্টা। মাত্র ১০টি পর্ব প্রচারিত হয়েছে। আগামী দিনে দেখবেন, কলকাতায় তৈরি হওয়া হিন্দি ধারাবাহিক বলিউডের চেয়ে কোনও অংশে কমতি নয়।
প্রশ্ন: তার পরেও মায়ানগরীর হাতছানি এড়াতে পারছেন না অনেকেই...
ভরত: মেয়ের জন্মের পর আমি কিন্তু এখন আর মুম্বইয়ে গিয়ে কাজ করব না। গেলাম, কাজ করলাম, চলে এলাম... আলাদা কথা। একটা সময় দিনের পর দিন ওখানে থেকে ছোট পর্দায় যে ভাবে কাজ করেছি, লড়েছি সে গুলো আর হবে না। এখন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের ছেলে সেই লড়াই লড়তে চলেছেন। আমায় ওঁর হিন্দি ধারাবাহিক ‘থোড়া সা বাদল থোড়া সা পানি’তে অভিনয়ের জন্য বলেছিলেন। আমি রাজি হতে পারিনি।
প্রশ্ন: এত প্রশংসার মধ্যেও কটাক্ষ। কেউ বলেছেন, ‘কাশ্মীরী হিন্দু পণ্ডিত হয়ে তৃণমূলে নাম লিখিয়েছেন। আরও একটু চেষ্টা করলে টিকিটও পেয়ে যাবেন’। চেষ্টা করবেন?
ভরত: (হেসে ফেলে) ভালবাসা থাকলে ঈর্ষাও থাকবে। তবে আমার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বোধহয় পরিষ্কার হওয়া দরকার। আমার দাদু-বাবা আজীবন কংগ্রেস করতেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস থেকে সরে আসার পর ওই দলের আর কোনও ভবিষ্যৎ নেই। দিদির জন্যই আমি সক্রিয় ভাবে তৃণমূল কংগ্রেসে। যাঁরা আমার রাজনৈতিক জীবন নিয়ে অকারণে খোঁচাচ্ছেন তাঁদের কাছে প্রশ্ন, বাম-কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের জোটে তৈরি ‘সমুক্ত মোর্চা’ কি মুখ্যমন্ত্রীর মতো উদার হত? আইএসএফ প্রধান আব্বাস সিদ্দিকি তাঁর ভাষণে নুসরত জাহানের উদ্দেশে কটূক্তি করে বলেছিলেন, ‘মুসলিম হয়ে ছবিতে অভিনয় করছেন। ওঁকে বেঁধে মারা উচিত!' ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী বদল হলে নুসরত এবং তাঁর মতো বাকিরা এই স্বাধীনতা পেতেন? বাকি আমার টিকিট পাওয়া। এই মুহূর্তে হাতে পাঁচটি ধারাবাহিকের কাজ। তা ছাড়া, সুরিন্দর ফিল্মসের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছি। টিকিট পেয়ে বিধায়ক হলে সেই দায়িত্ব সামলাব, না অভিনয় করব? বিশ্বাস করুন, সব ছাড়তে রাজি আছি। অভিনয় ছাড়তে পারব না। অভিনয় না থাকলে তখন হয়তো রাজনীতি থাকবে।
প্রশ্ন: আপনি নুসরতকে সমর্থন করেন? ‘সহবাস সঙ্গী’ শব্দবন্ধটি নিয়ে কিচ্ছু বলার নেই!
ভরত: আমি ওই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলব না। বিষয়টি আইনের আওতাধীন। আইন বুঝবে আর নুসরত বুঝবেন। এই মুহূর্তে বেশি হইচই ওঁর সন্তানের বাবাকে নিয়ে। কেন লোকের এই বিষয়ে এত মাথাব্যথা, সত্যিই বুঝতে পারছি না। নুসরত কার সঙ্গে মিশবেন, থাকবেন, কার সন্তান ধারণ করবেন, সন্তানের পিতৃপরিচয় দেবেন কি দেবেন না-- সম্পূর্ণ ওঁর ব্যাপার। কেন আমি ওঁর ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলাতে যাব?
প্রশ্ন: আজ আপনার ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও তির্যক মন্তব্য হয়েছে। ছবি দেখে জনৈক লিখেছেন, ‘বুড়ো বয়সে দারুণ মাঞ্জা দিয়েছেন। আবার একটা বিয়ে করবেন? দুটো তো হয়ে গেল দাদা...!'
ভরত: এটাই তো আমাদের, অভিনেতাদের জীবন। শেষ দিন পর্যন্ত একে সঙ্গে নিয়ে চলব। আসলে কী জানেন, অনেকে অনেক কিছু পান না। খ্যাতি, যশ, অর্থ অধরা থেকে যায়। তাঁরাই এই ধরনের মন্তব্য করেন। আমি কত জনের মুখ বন্ধ করব?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy