Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Usashi Roy

Ushasi Roy: ঈশ্বর বোধহয় যন্ত্রণা, কটাক্ষ সহ্য করতেই নারীকে সৃষ্টি করেছেন: ঊষসী

নারীজীবন সব সময়েই সমস্যা জর্জরিত। সধবা, বিধবা, একা বা অবিবাহিত— যা-ই হোক।মেয়েদের জীবনে সমস্যা রয়েই গিয়েছে।

‘সুন্দরবনের বিদ্যাসাগর’ নিয়ে কথা বললেন ঊষসী।

‘সুন্দরবনের বিদ্যাসাগর’ নিয়ে কথা বললেন ঊষসী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২২ ১৪:৫৬
Share: Save:

প্রশ্ন:চারটি সিরিজে চার রূপে, বৃন্দা, ইমন, মুমতাজ এবং ‘সুন্দরবনের বিদ্যাসাগর’-এ পার্বতী...

ঊষসী:
চারটি সিরিজের গল্প চার ধরনের। কোনওটার সঙ্গে কোনওটার মিল নেই। সব চরিত্রও এক রকম নয়। নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পাচ্ছি। ভাল লেগেছে। পার্বতী খুবই জোরালো চরিত্র। তাই রাজি হতে একটু সময় নিইনি।

প্রশ্ন: সুন্দরবনের বিধবা পল্লির পাবর্তী কি ডাকাবুকো? ঝলক যেন বলছে...

ঊষসী:
(একটু ভেবে) না, পার্বতীর সঙ্গে ‘ডাকাবুকো’ শব্দটা খাটে না। বরং প্রতিবাদী শব্দটি বেশি মানায়। যে কুমিরখালি গ্রামের বিধবা পল্লির মাথাদের মুখোশ খুলে আসল চেহারা দেখিয়ে দিতে চায়। নিজে লড়াই করে সত্যের জন্য। বাকিটা সিরিজ বলবে। তবে আমার কাছে ঘুরেফিরে প্রতিবাদী চরিত্রই আসে (হাসি)। আর পল্লিতে সবাই বিধবা।

প্রশ্ন: সুন্দরবনের গ্রামে থেকে টানা শ্যুট...

ঊষসী:
শ্যুটের বাইরে ঘোরাঘুরি হয়নি। ফলে, অন্য কোনও অভিজ্ঞতা নেই। ডিসেম্বরে খুব ঠান্ডায় শ্যুটিং করেছি আমরা। খুব উপভোগ করেছি কাজটা। কাজের ফাঁকে ফাঁকেই হইচই। খুনসুটি, মজা ছিলই। তার উপরে অন্য ধরনের চরিত্র। সব মিলিয়ে খুবই উপভোগ করেছি।

প্রশ্ন: পার্বতী হতে গিয়ে নিজেকে ঘষামাজা করেছেন?

ঊষসী:
নিজেকে কোনও চরিত্রের জন্য বেশি ঘষামাজা করলে দেখেছি, সেটি ততটাও দর্শকমনে ছাপ ফেলে না। তাই তাৎক্ষণিক অভিনয়ের উপরে বেশি জোর দিই। শ্যুটে অভিনয় করতে গিয়ে যে অনুভূতি আসে সেটাই আমি চরিত্রে ফুটিয়ে তুলি। পাশাপাশি, চরিত্র বুঝতে সাহায্য করেছেন পরিচালক কোরক মূর্মু, চিত্রনাট্যকার অর্কদীপ নাথ।


প্রশ্ন: কুমিরখালি গ্রামের বিধবা পল্লি কি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আমলের?

ঊষসী:
একেবারেই না। বরং এই প্রজন্মের গল্পই দেখানো হবে সিরিজে। পল্লিটি গড়ে উঠেছে বিধবাদের নিয়ে। সেখানে তাঁরা পরিবারের সঙ্গে থাকেন। উপার্জন করেন। শুধু সাদা থানটুকুই পরেন। ট্রেলারেই দেখা যাবে, আমার হাতে ক্যামেরা ফোন। তাই দিযে ছবি তুলছি। তাঁদের জীবনের নানা সমস্যা, প্রলোভন, গ্রামের মাথাদের অন্যায় থাকবে সিরিজে। ফলে, আমাকেও চরিত্র হয়ে উঠতে বাড়তি কোনও পরিশ্রম করতে হয়নি। আলাদা করে প্রস্তুতিও নিতে হতে হয়নি। চরিত্র, গল্প সব কিছু খুবই সমসাময়িক। একই সঙ্গে অন্য ধারার।

পার্বতী  হয়ে  উঠেছেন ঊষসী।

পার্বতী হয়ে উঠেছেন ঊষসী।

প্রশ্ন: সেখানকার বিধবাদের তা হলে আদৌ ঈশ্বরচন্দ্রের প্রয়োজন আছে?

ঊষসী:
এখনকার নারী নিজেরাই সব পারেন। তিনি যে অবস্থায় যেখানেই থাকুন না কেন। তবু, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো কেউ যদি তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ান, বন্ধু হন সেটাই বা খারাপ কী?

প্রশ্ন: পার্বতী আধুনিক, তা হলে এ কালের বিদ্যাসাগরকে কেন বলছে, ‘কেন দাঁড়াবেন আমার পাশে’?

ঊষসী:
পার্বতীর জীবনে হয়তো এমন কিছু নেতিবাচক ঘটনা বা অভিজ্ঞতা আছে যার ছাপ তার মনে পড়েছে। তাই সে বিদ্যাসাগরের এই পাশে দাঁড়ানোকে সহজ ভাবে নিতে পারছে না। মানুষের মন দু’ভাবে কাজ করে। ভাল ঘটনা তাকে ইতিবাচক করে তোলে। সে সব কিছুকে সহজেই বিশ্বাস করে। এমনটা না ঘটলেই সে যে কোনও জিনিস বা বিষয়কে সহজে মেনে নিতে পারে না। পার্বতীর ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। পাশাপাশি, যাচাই-ও তো করে নিতে হয়। শুধু খারাপ বা ভাল অভিজ্ঞতার উপরে নির্ভর করে কাউকে বিচার করাও বোধহয় উচিত নয়।

প্রশ্ন: পর্দায় ‘বিদ্যাসাগর ঋদ্ধি’ কেমন?

ঊষসী:
ঋদ্ধি আমার ছেলেবেলার বন্ধু। স্বপ্নসন্ধানী নাট্য দলের ‘ভাল রাক্ষস’ নাটকে একসঙ্গে অভিনয় করতাম। ঋদ্ধি ‘ভাল রাক্ষস’ হত। আর ওর অভিনয় নিয়ে নতুন করে বলারও কিছু নেই। সবাই জানেন। অভিনেতার মতোই ব্যক্তি ঋদ্ধিও ভীষণই ভাল। খুব সহযোগিতা করে সহ-অভিনেতাদের। পর্দায় এই প্রথম ওর সঙ্গে কাজ। কিন্তু মনে হচ্ছিল, নাটকের পরেই যেন আমরা আবার পর্দায় অভিনয় করলাম। সেই জন্যই মনে হয় চরিত্রকে এত ভাল ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি।

প্রশ্ন: ‘মন্দার’-এর একাধিক অভিনেতা-সহ বাঘা বাঘা তারকাও রয়েছেন, ভয় পেয়েছিলেন?

ঊষসী:
মজা পেয়েছিলাম। দুটো কারণে। এক, নভেম্বরে ‘মন্দার’ দেখে উঠেছি। অনির্বাণ ভট্টাচার্যের ওই সিরিজ সেই সময় তুমুল আলোড়ন ফেলেছে। ডিসেম্বরেই আমাদের শ্যুট। সেটে গিয়ে দেখি শঙ্কর দেবনাথ, প্রতীক দত্ত, দোয়েল নন্দী, কৌশিক কর, সজল মণ্ডল, সুদীপ ধাড়া অভিনেতা! একমাত্র ব্যতিক্রম রূপাঞ্জনা মিত্র। দুই, আমি এবং রূপাঞ্জনাদি ছাড়া সবাই মঞ্চাভিনেতা। ফলে, মঞ্চে কাজ করার স্বাদটাই যেন অনেক দিন পরে ফিরে এসেছিল। মনে হচ্ছিল, এক্ষুণি থার্ড বেল পড়বে। আমরা মঞ্চে গিয়ে অভিনয় শুরু করব।

প্রশ্ন: তা হলে ‘মন্দার’-এর সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখবে নতুন সিরিজ?

ঊষসী
: সেটা এক্ষুণি কী করে বলি? বলার মতো অত বিচক্ষণ আমি নই। তবে এটা বলতে পারি, ছাপ রেখে যাবে। কারণ, এর অভিনব বিষয়। এখনও গ্রামের বিধবাদের জীবন নিয়ে কোনও সিরিজ তৈরি হয়নি।

প্রশ্ন: আধুনিক পার্বতীর কাছে ‘দেবদাস’ আগে না ‘বিদ্যাসাগর’?

ঊষসী:
(হেসে ফেলে) প্রাচীন-আধুনিক নয়, সব যুগের পার্বতীদের কাছেই দেবদাস নয়, বিদ্যাসাগর আগে। আগেও তাইই ছিল। এই প্রজন্মও সেটাই বলবে।

প্রশ্ন: সিরিজ কি বলছে, ‘বিধবা নারী’ আর ‘একা নারী’র সমস্যা এক?

ঊষসী:
নারীজীবন সব সময়েই সমস্যা জর্জরিত। সধবা, বিধবা, একা বা অবিবাহিত— যা-ই হোক। ঈশ্বর বোধহয় যন্ত্রণা, কটাক্ষ সহ্য করতেই নারীকে সৃষ্টি করেছেন। সারা ক্ষণ কিছু না কিছু বিষয়ে তাঁকে সমাজের শাসন, মন্তব্য শুনতেই হবে। তবু ‘বিধবা নারী’ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আমলের থেকে এই প্রজন্মে তুলনায় অনেকটাই ভাল আছেন। বিধবা হওয়ার পরে অনেক সময় যেমন শ্বশুরবাড়ি দেখে না তেমনি অনেকে মেয়ের সম্মান দিয়ে আবার বিয়েও দেন তাঁর। ভাল-মন্দ এ ভাবেই আগেও ছিল আগামী দিনেও থাকবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Usashi Roy Actress Tollywood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE