Tuntun was called Bollywood’s first ever comedienne dgtl
bollywood
শৈশবে খুন বাবা-মা-দাদা, আত্মীয়দের বাড়ি কাজ করা অনাথ বালিকাই পরে বলিউডের টুনটুন
নিহত দাদা রেখে গেল অনাথ বোনকে। তখন তার বয়স পাঁচ বছর। অনাথ শিশু তখন দু’বেলা খাবারের বিনিময়ে আত্মীয়দের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করত। কাজের ফাঁকে একটু সময় পেলেই কান রাখত রেডিয়োয়। ভালবাসত গান শুনতে। এক বার শুনে হুবহু তুলেও ফেলত যে কোনও গান।
নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২০ ১৪:১১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
‘আমার বাবা-মা কে ছিলেন, বা তাঁরা কেমন দেখতে ছিলেন, কিছুই মনে নেই। যখন তাঁরা মারা যান, আমার বয়স দুই বা আড়াই’’— মৃত্যুর দু’দিন আগে এই কথাগুলো সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন উমা দেবী খেত্রী। দর্শকদের কাছে যিনি পরিচিত টুনটুন নামে।
০২২০
শৈশবের স্মৃতি বলতে তাঁর মনে ছিল আলিপুর বলে এক গ্রামের কথা। ওই গ্রামেই তাঁর জন্ম ১৯২৩ সালের ১১ জুলাই।উত্তরপ্রদেশের সে গ্রামে কাকার বাড়িতে তিনি থাকতেন আট বছর বয়সি দাদার সঙ্গে। জমিসংক্রান্ত বিবাদের জেরে তাঁর বাবা-মাকে খুন করা হয়েছিল।
০৩২০
বেশি দিন অপেক্ষা করতে হল না। সেই স্মৃতিও এক দিন রক্তাক্ত হয়ে গেল। সম্পত্তি নিয়ে বিবাদে খুন করা হল অনাথ ওই বালককে। যাতে তার বাবা-মায়ের রেখে যাওয়া সম্পত্তি সহজেই করায়ত্ত করা যায়।
০৪২০
নিহত দাদা রেখে গেল অনাথ বোনকে। তখন তার বয়স পাঁচ বছর। অনাথ শিশু তখন দু’বেলা খাবারের বিনিময়ে আত্মীয়দের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করত। কাজের ফাঁকে একটু সময় পেলেই কান রাখত রেডিয়োয়। ভালবাসত গান শুনতে। এক বার শুনে হুবহু তুলেও ফেলত যে কোনও গান।
০৫২০
এক দিন উমার সঙ্গে আলাপ হল আখতার আব্বাস কাজির। আখতার ছিলেন শুল্ক দফতরের ইনস্পেক্টর। দৈনিক জীবনের অপমান আর আঘাতের মধ্যে আখতার সাহেব ছিলেন উমার কাছে এক চিলতে মরুদ্যানের মতো।
০৬২০
তাঁর সঙ্গেই দেশভাগের সময় চলে গেলেন লাহৌর। কিন্তু সেখানে তখন অস্থির পরিস্থিতি। ২৩ বছর বয়সি উমা পালিয়ে এলেন আজকের মুম্বই, তখনকার বম্বে। ঠিক করলেন, ছবিতে গান করবেন। শোনা যায় তাঁর এক বান্ধবীর মুম্বই ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিত ছিল। তিনি সাহায্য করেছিলেন উমাকে।
০৭২০
কিছু দিন পরে আখতার কাজিও চলে এলেন। দু’জনে বিয়ে করলেন সেখানে, ১৯৪৭ সালে। তার আগেই উমা শুরু করেছেন নতুন কাজের জীবন। তিনি সরাসরি দেখা করেছিলেন নৌসাদ আলির সঙ্গে। তাঁর সপ্রতিভ আচরণ ভাল লেগেছিল নৌসাদের।
০৮২০
১৯৪৬ সালে উমা প্রথম গান করেন ‘ওয়ামিক আজরা’ ছবিতে। কয়েক দিনের মধ্যে পরিচালক-প্রযোজক এ আর কারদর চুক্তি করেন উমার সঙ্গে। নুর জাহান, রাজকুমারি, খুরশিদ বানু, জোহরাবাঈ অম্বালেওয়ালির সঙ্গে তিনিও সুযোগ পান ছবিতে গান করার।
০৯২০
ধীরে ধীরে হলেও ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা করে নিচ্ছিলেন তিনি। এমন একটা সময়ে তাঁর বিচ্ছেদ হয়ে যায় আখতার সাহেবের থেকে। কিছু দিন লিভ ইনের পরে উমা বিয়ে করেন জনৈক মোহনকে। দ্বিতীয় স্বামী এবং দুই ছেলে দুই মেয়েকে নিয়ে সংসার জমে ওঠে তাঁর।
১০২০
১৯৪৭ সালে ‘দর্দ’ ছবিতে উমার কণ্ঠে এবং মুনাওয়ারা সুলতানার লিপে ‘আফসানা লিখ রহি হুঁ’, ‘আজ মচি হ্যায় ধুম’ গানগুলি খুব জনপ্রিয় হয়।
১১২০
এর পর ‘আনোখি অদা’, ‘চন্দ্রলেখা’-র মতো ছবিতেও উমাদেবীর গান দর্শকদের মনে ধরে। কিন্তু এই সময়ে প্লেব্যাক ইন্ডাস্ট্রিতে দু’টি নাম দ্রুত উঠে আসে। সে দু’টি নাম হল লতা মঙ্গেশকর এবং আশা ভোঁসলে। তাঁদের কাছে ক্রমেই পিছিয়ে পড়তে থাকেন উমাদেবী।
১২২০
উমাদেবীর ‘পুরনো রীতি’-তে গাওয়া গান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন দর্শক-শ্রোতা। পরিচালকদের পাল্লা ভারী হতে থাকে নতুন দুই গায়িকার দিকে। ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকতে নৌসাদ তাঁকে পরামর্শ দেন, অভিনয় শুরু করার।
১৩২০
উমাদেবী কথা বলতেন খুব সুন্দর। তা ছাড়া সেন্স অব হিউমার ছিল প্রশংসনীয়। ফলে কাজ পেতেই পারতেন। কিন্তু তিনি শর্ত রাখলেন। কাজ করলে করবেন দিলীপ কুমারের ছবিতে। এতটাই ভক্ত ছিলেন নায়কের।
১৪২০
আরও এক বার পাশে দাঁড়ালেন নৌসাদ। তাঁর অনুরোধে বন্ধু দিলীপকুমার সুযোগ দিলেন উমাদেবীকে। ১৯৫০ সালে মুক্তি পাওয়া দিলীপকুমার-নার্গিসের ছবি ‘বাবুল’-এ প্রথম অভিনয় করলেন উমাদেবী। স্বপ্নের নায়কই পাল্টে দিলেন নাম। নতুন নাম হল টুনটুন।
১৫২০
আর নিজের নাম পাল্টাননি তিনি। ফিরেও আসেননি প্লেব্যাকের দুনিয়ায়। টুনটুন নাম ক্রমে নিজেই প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে। তিনি ছিলেন বলিউডের প্রথম দিকের মহিলা কৌতুকশিল্পীদের মধ্যে অন্যতম।
১৬২০
এর পর টুনটুন নজর কাড়েন গুরু দত্তের ছবি ‘আর পার’ এবং ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস ৫৫’ ছবিতে। বলিউডের ছবিতে ক্রমশ অপরিহার্য হয়ে ওঠে টুনটুনের উপস্থিতি। টানটান চিত্রনাট্যের মাঝে টুনটুনের কমিক রিলিফ উপভোগ করতেন দর্শকরা।
১৭২০
পাঁচ দশকের বেশি বিস্তৃত কেরিয়ারে তিনি হিন্দি, উর্দু ও অন্যান্য প্রাদেশিক ভাষা মিলিয়ে মোট ১৯৮টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। ভগবান দাদা, আগা, সুন্দর, মুখরি, ধুমল, জনি ওয়াকার, কেষ্ট মুখোপাধ্যায়-সব বহু কমেডিয়ানের সঙ্গে তাঁর জুটি জনপ্রিয় ছিল।
১৮২০
১৯৮২ সালের সুপারহিট ছবি ‘নমকহালাল’-এ টুনটুন স্ক্রিন শেয়ার করেছিলেন অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে। মহাতারকার পাশে দাঁড়িয়েও নিজের উপর স্পটলাইট কেড়ে নিতে পেরেছিলেন এই ডাকসাইটে অভিনেত্রী।
১৯২০
চেহারা বা মেক আপ কোনও কিছু নিয়েই ভাবতেন না তিনি। রূপচর্চা থেকে বহু দূরে থাকা পৃথুলা চেহারাই ছিল তাঁর ইউএসপি। তার সাহায্যেই বাজিমাত করেছিলেন তিনি। সাদা কালো ছবির পাশাপাশি রঙিন ছবির যুগেও দাপটের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। তাঁর অভিনীত শেষ ছবি ‘কসম ধান্দে কি’ মুক্তি পায় ১৯৯০ সালে।
২০২০
১৯৯২ সালে প্রয়াত হন তাঁর দ্বিতীয় স্বামী। তার পর চার সন্তান এবং তাঁদের পরিবার ছিল টুনটুনের অবসরের অবলম্বন। সবাইকে রেখে দীর্ঘ রোগভোগের পরে তিনি ৮০ বছর বয়সে প্রয়াত হন ২০০৩ সালের ২৪ নভেম্বর।