‘পাঠান’ ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো দেখে আনন্দবাজার অনলাইনে লিখলেন তৃণমূলের মুখপাত্র এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সম্পাদক সুপ্রিয় চন্দ। ছবি: সংগৃহীত।
তৃণমূল করি বলে নয়। বিজেপি বারণ করেছিল বলেও নয়। বুধবার সাতসকালে সাউথ সিটিতে ‘ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো’-এ ‘পাঠান’ দেখতে গিয়েছিলাম একটাই লোকের জন্য— শাহরুখ খান। ওই লোকটার জন্যই ভোরবেলা ওঠা। ওই লোকটার জন্যই দু’সপ্তাহ আগে অনলাইনে টিকিট কাটা। ওই লোকটার জন্যই পড়িমড়ি করে পৌঁছনো ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো দেখতে।
সেটা কি শাহরুখ বাংলার ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর’ বলে? নাহ্। ওঁর প্রতি আমার ভালবাসা অনেক কাল আগে থেকে। যখন থেকে সিনেমা বস্তুটা বোধগম্য হতে শুরু করেছে, তখন থেকেই। জলপাইগুড়ি শহরে তখন হাতেগোনা কয়েকটা সিনেমা হল। ‘সিঙ্গল স্ক্রিন’ শব্দটাও তখন জানতাম না। গত এক-দেড় দশকে শাহরুখের যে সমস্ত সিনেমা রিলিজ করেছে, আমি প্রতিটার ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো দেখেছি। শেষ দেখেছিলাম ‘জিরো’। সিনেমা হিসাবে ততটা ভাল লাগেনি। কিন্তু ওই যে, পর্দায় লোকটার উপস্থিতিই রক্তে উত্তেজনার স্রোত বইয়ে দেয়।
সেই স্রোতেই নিজে বার বার ভেসে যাই। শাহরুখ এবং অমিতাভ বচ্চন। আমি এঁদের দু’জনেরই ‘অন্ধ ফ্যান’। তবে দু’জনের মধ্যে শাহরুখই এক নম্বরে। আমি ওঁর ‘জবরা ফ্যান’। সেই পরিচয়েই শাহরুখের ‘পাঠান’ ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো দেখে আনন্দবাজার অনলাইনে এই লেখাটা লিখছি।
‘পাঠান’ মুক্তির আগে বিজেপি কেন এত ‘মাতামাতি’ করল বুঝলাম না! আগে তো সিনেমাটা দেখতে হবে! মনে হয়, প্রযোজক সংস্থা যখন থেকে ‘কাস্টিং লিস্ট’ প্রকাশ করেছে, তখন থেকেই ওদের ক্ষোভ শুরু হয়েছিল। কারা অভিনয় করেছেন ‘পাঠান’-এ? দীপিকা পাড়ুকোন। দক্ষিণ ভারতীয়। শাহরুখ খান। সংখ্যালঘু। জন আব্রাহাম। তিনিও খ্রিস্টান সংখ্যালঘু। বিজেপির এ সব ভাল লাগবে কেন! নামগুলো দেখেই ওদের মনে হয়েছে, এদের বিরোধিতা করতে হবে। তাই ‘পাঠান’ বয়কট করার ডাক। আসলে ‘পাঠান’ নয়, ওদের লক্ষ্য গেরুয়া সংস্কৃতির বিরোধীদেরই ঝাড়েবংশে বয়কট করা।
মাঝেমাঝে মনে হয়, এবং সেটা কঠোর সত্যও যে, বিজেপি সংস্কৃতির কিছু বোঝে না। ওরা রবি বর্মার নাম শুনেছে? জানে, তিনি কী নিয়ে কাজ করেন? এই নামে যে এক জন চিত্রশিল্পী আছেন, তা কি ওরা জানে? আমার বিশ্বাস, জানে না। খাজুরাহো কী জানে? খায়, না মাথায় দেয়? জানে না। ওরা শুধু জানে, কে কী খাবে, কে কী পরবে, তা ওরা ঠিক করে দেবে।
‘পাঠান’ দেখতে গিয়ে দেখলাম, সেই বিজেপির দু’গালে দু’টো থাপ্পড় মেরেছি আমরা। আমরা কারা? আমরা হলাম সেই ‘নূতন যৌবনের দূত’। কেন বলছি? বুধবার প্রথম দিন প্রথম শো ‘পাঠান’ যাঁরা দেখলেন, তাঁদের ৭৫ শতাংশের বয়স কত জানেন? ১৮ থেকে ২৫। দক্ষিণ কলকাতার মাল্টিপ্লেক্সে যেমন তাঁরাই ভিড় করেছেন, রাজনৈতিক পরিচিতির সুবাদে তেমনই বিভিন্ন জেলা থেকেও জানতে পেরেছি একই কথা। দর্শকদের বড় অংশ কিন্তু ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’, ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’ বা ‘দিল তো পাগল হ্যায়’-এর প্রজন্ম নয়। এরা আমাদের প্রজন্ম। এই নব ভারত যখন ‘পাঠান’ দেখতে যায়, তখন বিজেপির গালে বিরাশি সিক্কার থাপ্পড়ই তো পড়ে।
অবশ্য ‘পাঠান’ দেখে মনে হল, এটা বিজেপির ভাল লাগার বিষয়ও নয়। দীপিকার চোখ ওদের ভাল লাগবে কেন? তাতে তো প্রেম আছে। দাঙ্গার রক্তের দাগ তো নেই সেখানে। ওরা ঘৃণার দোকানদার। বিভেদমূলক সংলাপ না থাকলে, ধর্ম নিয়ে হানাহানি না থাকলে, খুন-জখম-গণপিটুনি-মিথ্যাচার না থাকলে ওদের পছন্দ হবে কেন! বিজেপির সংস্কৃতি বলতে তো গোটা দেশ এখন এটাই বোঝে। যে গান এবং পোশাক নিয়ে বিজেপির এত আপত্তি, সেই ‘বেশরম রং’ গান আমি দেখেছি এবং শুনেছি একাধিক বার। এ বার পর্দায় দেখলাম। ঠিকঠাক চলচ্চিত্রায়ণ হয়েছে। দেখার সময়েই ‘আহা’ শব্দটা বেরিয়ে এল।
শাহরুখ নিয়ে কোনও কথা বলতে চাই না। তাঁর সঙ্গে বিজেপির কোনও যোগ নেই। তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। ধর্মেরও কোনও যোগ নেই। একমাত্র কর্মের যোগ আছে। শিল্পীর ওটুকুই সম্পদ। যে সম্পদের জোরে আমরা বিজেপির গালে থাপ্পড় মেরে ‘পাঠান’ হিট করিয়ে দিলাম। ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো!
(লেখক প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তৃণমূলের মুখপাত্র এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সম্পাদক। মতামত নিজস্ব)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy