Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Reclaim the Night

প্রতিবাদ কি এক রাতের? ‘রাত দখল’ কর্মসূচির ভবিষ্যৎ কী, মতামত জানালেন মিছিলের চার সহযাত্রী

‘রাতের দখল’ কর্মসূচির ভবিষ্যৎ নিয়ে সমাজমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। আন্দোলনের তীব্রতা কি বাড়বে, না কি স্তিমিত হবে? মতামত জানালেন টলিপাড়ার তরুণ প্রজন্মের অভিনেতারা।

Tollywood young actors share their experience and future aspects of Reclaim the night protest against RG Kar Hospital Incident

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২৪ ১৯:৩৪
Share: Save:

সামাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি পোস্টার। ক্রমে সেই ভাইরাল পোস্টারটিই কলকাতা-সহ রাজ্যের মানুষকে মধ্যরাতে খোলা আকাশের নীচে প্রতিবাদে শামিল করে। আরজি কর-কাণ্ডের পর মহিলাদের আহ্বানে বুধবার ‘ঐতিহাসিক’ জমায়েতের সাক্ষী থাকল রাজ্য তথা সারা দেশ। এ দিকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সামাজমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এক দলের মতে, এক দিনের প্রতিবাদে সুফল পাওয়া কঠিন। অন্য দলের মত, আরও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের পথ নাকি সুগম হয়েছে।

বুধবার এক দিকে যেমন আরজি করে ভাঙচুরের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে, তেমনই বৃহস্পতিবার সকালে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে। সেখানে রাত ১১টায় আরজি কর হাসপাতালের সামনে সাধারণ মানুষের জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছে। বুধবার মিছিলে হেঁটেছেন টলিপাড়ার অনেকেই। ‘রাত দখল’ কর্মসূচির ভবিষ্যৎ কী হতে পারে? বুধবারের জমায়েতে উপস্থিত টলিপাড়ার তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিদের সামনে প্রশ্ন রেখেছিল আনন্দবাজার অনলাইন।

বুধবার রাতে যাদবপুরে মিছিলে হাঁটেন অভিনেত্রী উষসী রায়। বিগত কয়েক মাস ধরেই তিনি নারী সুরক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। উষসী বললেন, ‘‘প্রতিবাদের সূত্রপাত তো করা গেল। অন্যায়ের প্রতিবাদে আমি সব সময় মানুষের সঙ্গে থাকব।’’এই প্রসঙ্গে সমাজমাধ্যমে প্রতিবাদকেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন উষসী। তাঁর মতে, ‘‘আমাকে দেখে আরও দশ জনের যদি আগ্রহ বাড়ে, তা হলে খারাপ কী। বুধবার সমাজমাধ্যমের পোস্টারই তো আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ করেছে।’’

বৃহস্পতিবার সকালে সমাজমাধ্যমে আলোচনা তাঁর নজরে পড়ে। তাঁর মতে, বুধবারের জমায়েত কিছুটা বিক্ষিপ্ত ভাবেই ঘটেছে। কিন্তু আগামী দিনে কী করা যেতে পারে, তার স্পষ্ট নির্দেশ প্রয়োজন। উষসীর কথায়, ‘‘প্রত্যেকেরই ব্যস্ততা রয়েছে। তাই কত দিন আমরা জমায়েত করব সেটাও একটা প্রশ্ন। তবে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে, সরকার ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না জানানো পর্যন্ত এই আন্দোলন চলতেই থাকবে।’’ আগামী দিনে এই ধরনের জমায়েতের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পথে নামতে রাজি অভিনেত্রী।

বুধবার রাতে যাদবপুরে প্রতিবাদীদের মিছিলে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি মানবশৃঙ্খলের অংশ হয়েছিলেন অভিনেতা অমর্ত্য রায়। এই ধরনের প্রতিবাদে এর আগেও শামিল হয়েছেন অমর্ত্য। বললেন, ‘‘আমি এফটিআইআই বা হোক কলরবের সময়েও ছিলাম। এই ধরনের প্রতিবাদ থেকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পরবর্তী পদক্ষেপ সুনিশ্চিত হয়।’’ সমাজমাধ্যমে জমায়েতের ফলাফল নিয়ে যে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে, সে সম্পর্কে অবগত অমর্ত্য। ‘সুফল’পেতে তাই তিনি স্মরণ করিয়ে দিতে চাইছেন, আগামী দিনেও জমায়েতের লক্ষ্য এবং দাবি যেন সুনির্দিষ্ট থাকে।

এক রাতে শহরবাসীদের পথে নামার মধ্যে সমাজের দিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাচ্ছেন অমর্ত্য। তাঁর কথায়, ‘‘এই জমায়েত তো আগে কেউ কল্পনাও করেননি। কিন্তু সেটাই গতকাল বাস্তবায়িত হয়েছে। তার মানে মহিলারা বা আমরা, সকলে পারি। মানুষ যে আর ভয়ে বাড়িতে বসে থাকতে চাইছেন না, সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’এই মুহূর্তে শুটিংয়ের জন্য শহরে এসেছেন অমর্ত্য। কাজ সামলে আগামী দিনে পরবর্তী প্রতিবাদ কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকতে রাজি অভিনেতা।

‘রাত দখল’-এর কর্মসূচিকে ‘এক দিনের প্রতিবাদ’ বলে দাগিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টাকে পাত্তা দিতে নারাজ অভিনেত্রী অঙ্গনা রায়। তাঁর কথায়, ‘‘সকাল থেকেই বেশ কিছু পোস্ট দেখেছি! খুব রাগ হয়েছে। কিছুই নাকি হবে না— এই ধরনের ভাবনা নিয়ে আমার সমস্যা রয়েছে। চেষ্টা তো করতেই হবে।’’ অঙ্গনার মতে, এক বা দু’জন মানুষের আহ্বানে রাজ্য জুড়ে মানুষ যদি পথে নামতে পারেন, তার মানে সেই প্রতিবাদ শক্তিহীন হতে পারে না।

অঙ্গনার মতে, নারী নির্যাতনের মতো নিন্দনীয় ঘটনায় দীর্ঘ দিন সংঘবদ্ধ প্রতিবাদ না করলে সাধারণ মানুষের মনের জোরও কমে যেতে পারে। তিনি বললেন, ‘‘বুধবার জমায়েতে কয়েক ঘণ্টার অভিজ্ঞতায় আমার মনে হচ্ছিল মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। সকলেই পরিবর্তন চাইছেন। আগামী দিনেও আমার বিশ্বাস সকলেই প্রতিবাদে শামিল হবেন।’’ অঙ্গনার মতে, মানুষ ‘ভয়’ না পেলে সমাজে ধর্ষণের মতো অপরাধ ঘটতেই থাকবে। তাঁর কথায়, ‘‘তাই আইনে দোষীর যদি দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয়, তা হলে অন্য কেউ ঘৃণ্য অপরাধ করতে ভয় পাবে। তাই আমরা দ্রুত এবং ন্যায্য বিচার চাই।’’

একসময় ‘হোক কলরব’ থেকে শুরু করে ‘সিএএ-এনআরসি’ বিরোধী মিছিলে হেঁটেছিলেন ঋষভ বসু। বুধবারের রাত তাঁর মনে ভিন্ন অনুভূতির উদ্রেক ঘটিয়েছে। বললেন, ‘‘মহিলারা একটা প্রতিবাদ জমায়েতকে গতি দিচ্ছেন এবং সেখানে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব বয়সি মানুষের উপস্থিতি— খুবই ইতিবাচক একটা ঘটনা।’’ ঋষভের মতে, যুবসমাজ যে কোনও আন্দোলনের পথনির্দেশিকা তৈরি করে দিতে পারে। কথার মাঝে তিনি সাম্প্রতিক বাংলাদেশের পালাবদলের প্রসঙ্গ উত্থাপন করলেন। ঋষভের কথায়, ‘‘বুধবারের জমায়েতকে কোনও ভাবেই লঘু নজরে দেখা উচিত নয়।’’

তবে ঋষভের উপলব্ধি, বুধবারের জমায়েত কিছুটা হলেও ‘বিক্ষিপ্ত’। তাঁর মতে, আগামী দিনে কোনও নির্দিষ্ট একটি জায়গায় আরও বড় জমায়েতের প্রভাব আরও শক্তিশালী হতে পারে। তবে, সমাজমাধ্যমের একটি পোস্ট থেকে বার বার বড় আকারের জমায়েত সম্ভব কি না, সে প্রশ্নও উঁকি দিচ্ছে ঋষভের মনে। তাঁর যুক্তি, ‘‘আগে থেকে একটু আলোচনা করে পরবর্তী প্রতিবাদ কর্মসূচি ঠিক করা উচিত। হঠাৎ করে ডাক দিলে প্রত্যেকের সেখানে অংশগ্রহণ করতে সমস্যা হতেও পারে।’’

বুধবারের জমায়েতে বিক্ষিপ্ত ভাবে মহিলাদের হেনস্থা এবং ধাক্কাধাক্কির অভিযোগ উঠেছে। সেই প্রসঙ্গ মনে করিয়ে দিয়ে ঋষভ বললেন, ‘‘অনেকগুলো অপরিচিত দল এক জায়গায় মিলিত হচ্ছে। তাই কোনও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটতেই যেতেই পারে। তাই আগে থেকে সব দিক বিবেচনা করে আরও ঐক্যবদ্ধ এবং সুনির্দিষ্ট প্রতিবাদে শামিল হওয়া উচিত।’’ ঋষভের মতে, একদিন পথে নেমে প্রতিবাদ করলেও পাশাপাশি সমাজমাধ্যমে নিরন্তর প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়া উচিত। একই সঙ্গে রাজ্যের বর্তমান সংবেদনশীল পরিস্থিতিতে যে কোনও রকম গুজব থেকেও দূরে থাকার জন্য সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন ঋষভ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE