‘ডাকঘর’ বিতর্কে যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দিলেন ওয়েব সিরিজ়ের পরিচালক অভিষেক সাহা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বিগত কয়েক দিন ধরেই হইচই-এর ‘ডাকঘর’ ওয়েব সিরিজ় বিতর্কের কেন্দ্রে। সূত্রপাত ঘটান অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী। যার রেশ ধরে সিরিজ়ের পরিচালক বদলের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। জানা যায়, দুটি টিম এই সিরিজ়ের শুটিং করে। প্রথমে সিরিজ়ের শুটিং শুরু করেন পরিচালক অভিষেক সাহা। তার পর তিনি সরে দাঁড়ালে পরিচালক অভ্রজিৎ সেনকে আনা হয়। অভিষেকের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগও সমাজমাধ্যমে ফলাও করে লেখা হয়। তাঁর ইউনিটে ক্যামেরার দায়িত্বে ছিলেন মৃন্ময় নন্দী। জানা যায় মৃন্ময় এখনও প্রযোজকের তরফে বকেয়া পারিশ্রমিক পাননি।
জলঘোলা হওয়ার পর এত দিন চুপ ছিলেন অভিষেক। কিন্তু অবশেষে তাঁর বিরুদ্ধে যাবতীয় বিতর্ক উল্লেখ করে মুখ খুললেন অভিষেক। শুক্রবার ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্ট করে নির্মাতাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন পরিচালক। সেই সঙ্গে অভিষেক জানিয়ে দিয়েছেন ‘ডাকঘর’ নিয়ে এই প্রথম ও শেষ বারের মতো তিনি তাঁর বক্তব্য জানালেন। পরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি নাকি লুকিয়ে পড়েছেন। আসলে বিগত কয়েক দিন অভিষেক শুটিংয়ের জন্য কলকাতার বাইরে ছিলেন। তাই সমাজমাধ্যম থেকে তাঁর দূরত্ব। তাঁর লেখনী বলছে, ‘অনর্গল অনেক কথা বলতে না চাওয়ার মানে লুকিয়ে পড়া নয়।’
বলা হচ্ছিল, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শুটিং শেষ করতে পারেননি বলেই প্রযোজক দ্বিতীয় টিমকে শুটিংয়ের দায়িত্ব দেয়। এই প্রসঙ্গে অভিষেক যে আগেই প্রযোজক এবং সংশ্লিষ্ট ওটিটি কর্তাদের বেশি সময় প্রয়োজন সেটা জানিয়েছিলেন বলেল দাবি করেছেন। পরিচালকের কথায়, ‘‘তাঁরা রাজি হননি, বাজেটের কারণেই নিশ্চয়ই।’’ পাশাপাশি শুটিংয়ের বাজেট মনোনিত হওয়ার পরেও ইউনিটকে কেন দ্বিতীয় ক্যামেরা ব্যবহার করতে দেওয়া হল না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অভিষেক। পরিচালক লিখছেন, ‘‘দ্বিতীয় ক্যামেরা উপস্থিত থাকা সত্বেও, লোকেশন থেকে বার বার ফোনে চ্যানেলকে অনুরোধ করা সত্ত্বেও আমাদের দ্বিতীয় ক্যামেরায় শট নিতে দেওয়া হয়নি।’’
এ রকমও অভিযোগ ছিল যে অভিষেক নাকি শুটিং করে সম্পাদনার তোয়াক্কা না করেই লন্ডন পাড়ি দিয়েছিলেন। অভিষেক তাঁর লন্ডন যাওয়ার পিছনে পেশাগত দায়বদ্ধতার কথা উল্লেখ করেছেন। সেখানে অন্য একটি ছবির শুটিংয়ে যোগ দিতে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু লন্ডনে থাকাকালীন তিনি যে ‘ডাকঘর’ সম্পাদনা টিমের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছিলেন তা স্পষ্ট করেছেন ওই পোস্টে। পাল্টা লিখেছেন, ‘‘লন্ডন থেকে ফিরেই মিটিংয়ে বসি। শুটিংটা হইচই কর্তৃপক্ষের মনোমতো না হওয়ায় টিমের সঙ্গেই পরিকল্পনা করছিলাম কী ভাবে সেটাকে সঠিক জায়গায় আনা যায়।’’
সিরিজ়ের প্রযোজক (স্টোরিবোট) পথিকৃৎ সেনগুপ্ত। অভিষেক জানিয়েছেন, এ পর হঠাৎই জানতে পারেন সিরিজ়ের শুটিং শুরু হয়েছে। এই বিষয়ে প্রযোজকের তরফে তাঁর কাছে কোনও আগাম তথ্য জানানো হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি।’’ অভিষেক আরও লিখেছেন, ‘‘নিজের সন্তানকে কেউ ছিনিয়ে নিয়ে চলে গেলে যেমন মনে হয়, আমার ঠিক তেমন লাগে। একদম চুপ করে যাই আমি। আত্মসম্মান বজায় রাখতে চুপ করে যাওয়াকে কি পালিয়ে যাওয়া বলে? চুপচাপ কেটে পড়া বলে? তা হলে তাই।’’
অভিষেক এখনও সিরিজ়টি দেখেননি। কিন্তু পরিচিতদের থেকে জেনেছেন সিরিজ়ের প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ দৃশ্যই তাঁর এবং ডিওপি মৃন্ময়ের করা। ফলে ‘জঘন্য’ কাজের দোহাই দিয়ে সিরিজ় যে নতুন করে শুটিং করা হয়েছে সেই তত্ব মানতে তিনি নারাজ। দিনের পর দিন অপমানের জেরেই যে তিনি এই সিরিজ়ে পরিচালক হিসেবে নিজের নাম দিতে চাননি সেই বিষয়টিও তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট করেছেন অভিষেক। তাই প্রযোজককে তাঁর দাবি অনুযায়ী, এনওসি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ‘উড়নচণ্ডী’ ছবির পরিচালক।
সিরিজ়ে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুহোত্র মুখোপাধ্যায় এবং দিতিপ্রিয়া রায়। সুহোত্রর অভিনয় প্রশংসিত হচ্ছে। অথচ, অভিষেক জানাচ্ছেন নির্মাতারা প্রথমে সুহোত্রের নাম মনোনয়ন করলেও পরে বেঁকে বসেন। অভিষেকের কথায়, ‘‘বার বার চাইছিলেন কোনও স্টার অভিনেতাকে নেওয়া হোক। সুহোত্র বাদই পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমি তত দিনে ওর মধ্যে ‘দামোদর’কে দেখে ফেলেছি।’’
অভিষেক তাঁর পোস্টর মাধ্যেমে অনুরোধ করেছেন যাতে আগামী দিনে তাঁকে এই ‘নোংরামি’ থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। কারণ তাঁর কথায়, ‘‘শাসকেরা সব সময় দলে ভারী হন। অনেক মানুষের টিকি বেঁধে রাখার ক্ষমতা তাঁদের থাকে যে। আর টিকিধারীরা শাসকের হয়েই কথা বলেন যুগযুগ ধরে, অথবা চুপ থাকেন।’’
কিন্তু অভিষেক তাঁর ক্যামেরার দায়িত্বে থাকা মৃন্ময় যাতে পারিশ্রমিক পান, সে আর্জিও জানিয়েছেন। আর মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘ওরা আমার কাজ নিয়ে নিক, আমার নাম নিয়ে নিক, অসুবিধা নেই। আমার ভিশন কেউ নিতে পারবে না। আর আমার সম্মান কাউকে নিতে দেব না।’’ এখন এই বিতর্কের জল কত দূর গড়ায় সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy