Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
soumitra chatterjee

‘অপু’ হতে অপেক্ষা করেছিলেন ৩ বছর, রেডিয়োর ঘোষক সৌমিত্রকে পছন্দই হয়নি পরিচালকের

আশৈশব বাড়িতে মায়ের শাড়ি দিয়ে পর্দা এবং উইংস বানিয়ে নাটক-নাটক খেলা চলত। ঠিক যেমন নকল গোঁফ লাগিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখত ছোট্ট অপু।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২০ ১২:৩০
Share: Save:
০১ ২৫
সাড়ে ৩ মিনিট। অপেক্ষা করতে হয়েছিল মুকুলের বাবা সুধীর ধরকে। ২১, রজনী সেন রোডের বৈঠকখানায় বসে প্রদোষ মিত্তিরের দেখা পেতে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ৩ বছর। সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় অভিনয় করতে।

সাড়ে ৩ মিনিট। অপেক্ষা করতে হয়েছিল মুকুলের বাবা সুধীর ধরকে। ২১, রজনী সেন রোডের বৈঠকখানায় বসে প্রদোষ মিত্তিরের দেখা পেতে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ৩ বছর। সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় অভিনয় করতে।

০২ ২৫
১৯৫৬ সালের ছবি ‘অপরাজিত’। তার আগেই সৌমিত্রকে দেখেছিলেন সত্যজিৎ। তখন সৌমিত্র বয়স পেরিয়েছিল ২০ বছর। কিন্তু ‘অপরাজিত’ অপুর কৈশোর। তাই অপেক্ষা করতে হল তার সংসার শুরু হওয়ার অবধি। ১৯৫৯ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘অপুর সংসার’।

১৯৫৬ সালের ছবি ‘অপরাজিত’। তার আগেই সৌমিত্রকে দেখেছিলেন সত্যজিৎ। তখন সৌমিত্র বয়স পেরিয়েছিল ২০ বছর। কিন্তু ‘অপরাজিত’ অপুর কৈশোর। তাই অপেক্ষা করতে হল তার সংসার শুরু হওয়ার অবধি। ১৯৫৯ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘অপুর সংসার’।

০৩ ২৫
সৌমিত্র নিজেও জানতেন না কখন তিনি ‘অপু’ হয়ে গিয়েছেন। গিয়েছিলেন ‘জলসাঘর’-এর শ্যুটিং দেখতে। সেটেই ছবি বিশ্বাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন পরিচালক। বলেছিলেন, ইনি তাঁর ‘অপুর সংসার’-এর অপু। শুনে আকাশ থেকে পড়েছিলেন সৌমিত্র নিজেও।

সৌমিত্র নিজেও জানতেন না কখন তিনি ‘অপু’ হয়ে গিয়েছেন। গিয়েছিলেন ‘জলসাঘর’-এর শ্যুটিং দেখতে। সেটেই ছবি বিশ্বাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন পরিচালক। বলেছিলেন, ইনি তাঁর ‘অপুর সংসার’-এর অপু। শুনে আকাশ থেকে পড়েছিলেন সৌমিত্র নিজেও।

০৪ ২৫
অভিনয়ের ধারা ছিল কয়েক পুরুষ আগেই। নদিয়ার কৃষ্ণনগরে আদি বাস চট্টোপাধ্যায় পরিবারের। বরাবরই এই শহর থিয়েটারের জন্য বিখ্যাত। এ রকমই এক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সৌমিত্রর ঠাকুরদা। তাঁর বাবা ছিলেন আইনজীবী, পরে সরকারি কর্মচারী। তিনিও ছিলেন শখের অভিনেতা।

অভিনয়ের ধারা ছিল কয়েক পুরুষ আগেই। নদিয়ার কৃষ্ণনগরে আদি বাস চট্টোপাধ্যায় পরিবারের। বরাবরই এই শহর থিয়েটারের জন্য বিখ্যাত। এ রকমই এক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সৌমিত্রর ঠাকুরদা। তাঁর বাবা ছিলেন আইনজীবী, পরে সরকারি কর্মচারী। তিনিও ছিলেন শখের অভিনেতা।

০৫ ২৫
জীবনের প্রথম ১০ বছর সৌমিত্র কাটিয়েছিলেন কৃষ্ণনগরে। এই শহরেই তাঁর অভিনয়ে হাতেখড়ি। পরে তাঁর পরিবার চলে এসেছিল হাওড়ায়। সৌমিত্র পড়তেন হাওড়া জেলা স্কুলে। স্কুলের অনুষ্ঠানে নিয়মিত অভিনয় করতেন তিনি। জমিয়ে রাখা পুরস্কারের পদক বাড়িয়ে দিত আরও ভাল কাজ করার খিদে।

জীবনের প্রথম ১০ বছর সৌমিত্র কাটিয়েছিলেন কৃষ্ণনগরে। এই শহরেই তাঁর অভিনয়ে হাতেখড়ি। পরে তাঁর পরিবার চলে এসেছিল হাওড়ায়। সৌমিত্র পড়তেন হাওড়া জেলা স্কুলে। স্কুলের অনুষ্ঠানে নিয়মিত অভিনয় করতেন তিনি। জমিয়ে রাখা পুরস্কারের পদক বাড়িয়ে দিত আরও ভাল কাজ করার খিদে।

০৬ ২৫
আশৈশব বাড়িতে মায়ের শাড়ি দিয়ে পর্দা এবং উইংস বানিয়ে নাটক-নাটক খেলা চলত। ঠিক যেমন নকল গোঁফ লাগিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখত ছোট্ট অপু।

আশৈশব বাড়িতে মায়ের শাড়ি দিয়ে পর্দা এবং উইংস বানিয়ে নাটক-নাটক খেলা চলত। ঠিক যেমন নকল গোঁফ লাগিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখত ছোট্ট অপু।

০৭ ২৫
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সৌমিত্র প্রথমে অভিনয় শিখেছিলেন অভিনেতা অহীন্দ্র চৌধুরীর কাছে। তার পরে তিনি সংস্পর্শে আসেন সেই নাট্যব্যক্তিত্বের, কলেজে যাঁর নাটক দেখে তিনি ঠিক করেছিলেন অভিনেতাই হবেন। তিনি, শিশির ভাদুড়ি।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সৌমিত্র প্রথমে অভিনয় শিখেছিলেন অভিনেতা অহীন্দ্র চৌধুরীর কাছে। তার পরে তিনি সংস্পর্শে আসেন সেই নাট্যব্যক্তিত্বের, কলেজে যাঁর নাটক দেখে তিনি ঠিক করেছিলেন অভিনেতাই হবেন। তিনি, শিশির ভাদুড়ি।

০৮ ২৫
সৌমিত্রর এক বন্ধুর মা ছিলেন অভিনেত্রী শেফালিকা পুতুল। তিনি ‘অপুর সংসার’-এ অপর্ণার মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। তাঁর মাধ্যমেই শিশির ভাদুড়ির সঙ্গে আলাপ হয় সৌমিত্রর। প্রবীণ অভিনেতা তখন ব্যক্তিগত ও অভিনয়, দুই জীবনেরই সায়াহ্নে।

সৌমিত্রর এক বন্ধুর মা ছিলেন অভিনেত্রী শেফালিকা পুতুল। তিনি ‘অপুর সংসার’-এ অপর্ণার মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। তাঁর মাধ্যমেই শিশির ভাদুড়ির সঙ্গে আলাপ হয় সৌমিত্রর। প্রবীণ অভিনেতা তখন ব্যক্তিগত ও অভিনয়, দুই জীবনেরই সায়াহ্নে।

০৯ ২৫
শিশির ভাদুড়ির জীবনের শেষ তিন বছর, তাঁর সান্নিধ্য পেয়েছিলেন সৌমিত্র। ছোট ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তাঁর একটি নাটকেও। তবে তাঁর কাছে অভিনয় যেটুকু শিখেছেন, তার সবই ছিল অনেক আগে তাঁর অভিনয় দেখে। এক সাক্ষাৎকারে নিজেই জানিয়েছিলেন সৌমিত্র।

শিশির ভাদুড়ির জীবনের শেষ তিন বছর, তাঁর সান্নিধ্য পেয়েছিলেন সৌমিত্র। ছোট ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তাঁর একটি নাটকেও। তবে তাঁর কাছে অভিনয় যেটুকু শিখেছেন, তার সবই ছিল অনেক আগে তাঁর অভিনয় দেখে। এক সাক্ষাৎকারে নিজেই জানিয়েছিলেন সৌমিত্র।

১০ ২৫
কাজের জীবন অবশ্য শুরু হল অভিনয় দিয়ে নয়, ঘোষক হিসেবে। অল ইন্ডিয়া রেডিয়োর ঘোষক ছিলেন সৌমিত্র। সঙ্গে চলত থিয়েটারে অভিনয় এবং ছবিতে অডিশন। ১৯৫৭ সালে তিনি খারিজ হয়ে গিয়েছিলেন পরিচালক কার্তিক বসুর কাছে। ‘নীলাচলে মহাপ্রভু’ ছবিতে তাঁর বদলে সুযোগ পেয়েছিলেন অসীমকুমার।

কাজের জীবন অবশ্য শুরু হল অভিনয় দিয়ে নয়, ঘোষক হিসেবে। অল ইন্ডিয়া রেডিয়োর ঘোষক ছিলেন সৌমিত্র। সঙ্গে চলত থিয়েটারে অভিনয় এবং ছবিতে অডিশন। ১৯৫৭ সালে তিনি খারিজ হয়ে গিয়েছিলেন পরিচালক কার্তিক বসুর কাছে। ‘নীলাচলে মহাপ্রভু’ ছবিতে তাঁর বদলে সুযোগ পেয়েছিলেন অসীমকুমার।

১১ ২৫
ছবিতে পা না রাখলেও মঞ্চে তখন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় পরিচিত মুখ। সে সময় তাঁকে সাহায্য করেছিলেন বন্ধু মৃত্যুঞ্জয় শীল। তিনি ছিলেন বাংলা থিয়েটারের পরিচিত নাম। কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে সরে যান অভিনয় থেকে। তাঁর জায়গা নেন নবাগত সৌমিত্র।

ছবিতে পা না রাখলেও মঞ্চে তখন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় পরিচিত মুখ। সে সময় তাঁকে সাহায্য করেছিলেন বন্ধু মৃত্যুঞ্জয় শীল। তিনি ছিলেন বাংলা থিয়েটারের পরিচিত নাম। কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে সরে যান অভিনয় থেকে। তাঁর জায়গা নেন নবাগত সৌমিত্র।

১২ ২৫
‘অপুর সংসার’-এর পরের বছরই মুক্তি পায় তাঁর দ্বিতীয় ছবি ‘দেবী’। তার পর ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘তিন কন্যা’, ‘ঝিন্দের বন্দী’ এবং ‘পুনশ্চ’। অভিনয়জীবনের প্রথম কয়েক বছরেই সত্যজিৎ-মৃণাল-তপনের পরিচালনায় অভিনয়। সবে তাঁর নামের পাশে বসে পড়তে চলেছে ‘পরিচালকের অভিনেতা’, তিনি অভিনয় করলেন অসিত সেনের পরিচালনায় ‘স্বয়ম্বর’ এবং ‘স্বরলিপি’-তে।

‘অপুর সংসার’-এর পরের বছরই মুক্তি পায় তাঁর দ্বিতীয় ছবি ‘দেবী’। তার পর ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘তিন কন্যা’, ‘ঝিন্দের বন্দী’ এবং ‘পুনশ্চ’। অভিনয়জীবনের প্রথম কয়েক বছরেই সত্যজিৎ-মৃণাল-তপনের পরিচালনায় অভিনয়। সবে তাঁর নামের পাশে বসে পড়তে চলেছে ‘পরিচালকের অভিনেতা’, তিনি অভিনয় করলেন অসিত সেনের পরিচালনায় ‘স্বয়ম্বর’ এবং ‘স্বরলিপি’-তে।

১৩ ২৫
১৯৬২ সালে মুক্তি পায় ‘অভিযান’। অপূর্ব-অমূল্যর ভাবমূর্তি চুরমার করে তিনি সেখানে নরসিং। ‘অতল জলের আহ্বান’, ‘বেনারসি’-র মধ্যেই মু্ক্তি পেল ‘সাত পাকে বাঁধা।’ এর পর ‘চারুলতা’, ‘কিনু গোয়ালার গলি’, ‘প্রতিনিধি’, ‘কাপুরুষ মহাপুরুষ’, ‘কাচকাটা হিরে’, ‘আকাশকুসুম’-এর পাশাপাশি সৌমিত্র ধরা দেন ‘মণিহার’, ‘একটুকু বাসা’, ‘বাঘিনি’, ‘পরিণীতা’, ‘প্রথম কদম ফুল’ এবং ‘তিন ভুবনের পারে’।

১৯৬২ সালে মুক্তি পায় ‘অভিযান’। অপূর্ব-অমূল্যর ভাবমূর্তি চুরমার করে তিনি সেখানে নরসিং। ‘অতল জলের আহ্বান’, ‘বেনারসি’-র মধ্যেই মু্ক্তি পেল ‘সাত পাকে বাঁধা।’ এর পর ‘চারুলতা’, ‘কিনু গোয়ালার গলি’, ‘প্রতিনিধি’, ‘কাপুরুষ মহাপুরুষ’, ‘কাচকাটা হিরে’, ‘আকাশকুসুম’-এর পাশাপাশি সৌমিত্র ধরা দেন ‘মণিহার’, ‘একটুকু বাসা’, ‘বাঘিনি’, ‘পরিণীতা’, ‘প্রথম কদম ফুল’ এবং ‘তিন ভুবনের পারে’।

১৪ ২৫
সত্যজিৎ রায়ের ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র। তাঁদের যুগলবন্দির সপ্তম ছবি ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ মুক্তি পায় ১৯৭০-এ। সে বছরই অপর্ণা সেনের বিপরীতে ‘বাক্স বদল’-এ দর্শকমনে দাগ কেটে যায় তাঁর অভিনয়। ‘মাল্যদান’, ‘খুঁজে বেড়াই’, ‘স্ত্রী’-র সৌমিত্র সম্পূর্ণ অন্য মেরুতে ধরা দেন ‘বসন্ত বিলাপ’-এ।

সত্যজিৎ রায়ের ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র। তাঁদের যুগলবন্দির সপ্তম ছবি ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ মুক্তি পায় ১৯৭০-এ। সে বছরই অপর্ণা সেনের বিপরীতে ‘বাক্স বদল’-এ দর্শকমনে দাগ কেটে যায় তাঁর অভিনয়। ‘মাল্যদান’, ‘খুঁজে বেড়াই’, ‘স্ত্রী’-র সৌমিত্র সম্পূর্ণ অন্য মেরুতে ধরা দেন ‘বসন্ত বিলাপ’-এ।

১৫ ২৫
উত্তম-সৌমিত্র তুলনায় যত ব্যস্ত হয়ে উঠেছে বাঙালি, তত নিজেকে নিত্যনতুন ভূমিকায় ভেঙেছেন ‘অশনি সঙ্কেত’-এর পণ্ডিতমশাই। ‘মহানায়ক’ বিশেষণ তাঁর জীবনের মাইলফলক নয়। বরং, তিনি হীরকরাজ্যের উদয়ন পণ্ডিত। যাঁর শিক্ষা পাঠশালা পেরিয়ে শিক্ষার্থীদের জীবনের রসদ যোগায়।

উত্তম-সৌমিত্র তুলনায় যত ব্যস্ত হয়ে উঠেছে বাঙালি, তত নিজেকে নিত্যনতুন ভূমিকায় ভেঙেছেন ‘অশনি সঙ্কেত’-এর পণ্ডিতমশাই। ‘মহানায়ক’ বিশেষণ তাঁর জীবনের মাইলফলক নয়। বরং, তিনি হীরকরাজ্যের উদয়ন পণ্ডিত। যাঁর শিক্ষা পাঠশালা পেরিয়ে শিক্ষার্থীদের জীবনের রসদ যোগায়।

১৬ ২৫
উদয়ন পণ্ডিতের পাশাপাশি তিনি ‘আতঙ্ক’-র মাস্টারমশাই। যাঁর চোখ বন্ধ রাখার জন্য চোখ রাঙায় দুষ্কৃতী। আবার তিনি-ই ক্ষিদ্দা হয়ে কোনিকে ‘ফাইট’ করার মন্ত্র জুগিয়েছেন। প্রাতিষ্ঠানিক ছক ভাঙতে চেয়েছেন ‘গণশত্রু’, ‘শাখা প্রশাখা’-র অংশ হয়েও।

উদয়ন পণ্ডিতের পাশাপাশি তিনি ‘আতঙ্ক’-র মাস্টারমশাই। যাঁর চোখ বন্ধ রাখার জন্য চোখ রাঙায় দুষ্কৃতী। আবার তিনি-ই ক্ষিদ্দা হয়ে কোনিকে ‘ফাইট’ করার মন্ত্র জুগিয়েছেন। প্রাতিষ্ঠানিক ছক ভাঙতে চেয়েছেন ‘গণশত্রু’, ‘শাখা প্রশাখা’-র অংশ হয়েও।

১৭ ২৫
সত্যজিৎ-মৃণাল-তপন তিন মহীরুহের ছবিই তাঁর উপস্থিতিতে সুবাসিত। এক দিকে তিনি যেমন ‘ঘরে বাইরে’-এর সন্দীপ, অন্য দিকে আবার ‘গণদেবতা’-র দেবু পণ্ডিত। ‘প্রতিনিধি’-র অমল। ‘ঝিন্দের বন্দী’-র ময়ূরবাহন। তরুণ মজুমদারের ‘সংসার সীমান্তে’ এবং দীনেন গুপ্তর ‘বসন্ত বিলাপ’-এও তাঁর অনায়াস গতি।

সত্যজিৎ-মৃণাল-তপন তিন মহীরুহের ছবিই তাঁর উপস্থিতিতে সুবাসিত। এক দিকে তিনি যেমন ‘ঘরে বাইরে’-এর সন্দীপ, অন্য দিকে আবার ‘গণদেবতা’-র দেবু পণ্ডিত। ‘প্রতিনিধি’-র অমল। ‘ঝিন্দের বন্দী’-র ময়ূরবাহন। তরুণ মজুমদারের ‘সংসার সীমান্তে’ এবং দীনেন গুপ্তর ‘বসন্ত বিলাপ’-এও তাঁর অনায়াস গতি।

১৮ ২৫
অর্ধ শতক পেরনো কর্মজীবনে অভিনয় করেছেন কয়েক প্রজন্মের পরিচালকদের সঙ্গে। তাঁকে ভেবেই ‘অসুখ’ ছবির চিত্রনাট্য লিখেছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। সৃজিৎ মুখোপাধ্যায়ের ‘হেমলক সোসাইটি’, গৌতম ঘোষের ‘দেখা’, সুজয় ঘোষের ‘অহল্যা’, অতনু ঘোষের ‘ময়ূরাক্ষী’, নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘বেলাশেষে’ এবং ‘পোস্ত’— বাঙালির সিনেমাদর্শন জুড়ে তিনি।

অর্ধ শতক পেরনো কর্মজীবনে অভিনয় করেছেন কয়েক প্রজন্মের পরিচালকদের সঙ্গে। তাঁকে ভেবেই ‘অসুখ’ ছবির চিত্রনাট্য লিখেছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। সৃজিৎ মুখোপাধ্যায়ের ‘হেমলক সোসাইটি’, গৌতম ঘোষের ‘দেখা’, সুজয় ঘোষের ‘অহল্যা’, অতনু ঘোষের ‘ময়ূরাক্ষী’, নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘বেলাশেষে’ এবং ‘পোস্ত’— বাঙালির সিনেমাদর্শন জুড়ে তিনি।

১৯ ২৫
‘সোনার কেল্লা’ এবং ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ নিছক তাঁর ফিল্মোগ্রাফের অংশ নয়। এই দু’টি অভিযানে না হয় তিনি অভিনয় করেছেন। কিন্তু ফেলুদার বাকি গল্প, যেগুলিতে সৌমিত্র সেলুলয়েডবন্দি হননি, সেগুলি পড়ার সময়েও ফেলুভক্তের চোখে ভেসে ওঠেন তিনি-ই। কলকাতার গোরস্থান থেকে রাজরাপ্পার ছিন্নমস্তার মন্দির, ফেলুদা আসলে কে? সত্যজিৎ নাকি সৌমিত্র? এই প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে চলেছে বাঙালির মগজাস্ত্র।

‘সোনার কেল্লা’ এবং ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ নিছক তাঁর ফিল্মোগ্রাফের অংশ নয়। এই দু’টি অভিযানে না হয় তিনি অভিনয় করেছেন। কিন্তু ফেলুদার বাকি গল্প, যেগুলিতে সৌমিত্র সেলুলয়েডবন্দি হননি, সেগুলি পড়ার সময়েও ফেলুভক্তের চোখে ভেসে ওঠেন তিনি-ই। কলকাতার গোরস্থান থেকে রাজরাপ্পার ছিন্নমস্তার মন্দির, ফেলুদা আসলে কে? সত্যজিৎ নাকি সৌমিত্র? এই প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে চলেছে বাঙালির মগজাস্ত্র।

২০ ২৫
প্রথম জাতীয় পুরস্কার ১৯৯১ সালে। ‘অন্তর্ধান’ ছবির জন্য বিশেষ জুরি সম্মান। ৯ বছর পরে একই সম্মান ‘দেখা’-র জন্য। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে সম্মানিত হতে সময় লেগে যায় আরও ১৫ বছর। অভিনয়জীবনের ৫ দশক পেরিয়ে ২০০৬ সালে ‘পদক্ষেপ’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে সম্মানিত হন সৌমিত্র। ২০১২-এ দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার।

প্রথম জাতীয় পুরস্কার ১৯৯১ সালে। ‘অন্তর্ধান’ ছবির জন্য বিশেষ জুরি সম্মান। ৯ বছর পরে একই সম্মান ‘দেখা’-র জন্য। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে সম্মানিত হতে সময় লেগে যায় আরও ১৫ বছর। অভিনয়জীবনের ৫ দশক পেরিয়ে ২০০৬ সালে ‘পদক্ষেপ’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে সম্মানিত হন সৌমিত্র। ২০১২-এ দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার।

২১ ২৫
২০০৪ সালে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত হন। সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কারের পালক তাঁর মুকুটে যোগ হয় ২০১২-এ। তার কয়েক  বছর পরে ফরাসি সরকারের দেওয়া সম্মান ‘লেজিয়ঁ দ্য নর’ এবং ‘কম্যান্দর দ্য লার্দ্র দে আর্ত্ এ দে লের্ত্র’।

২০০৪ সালে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত হন। সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কারের পালক তাঁর মুকুটে যোগ হয় ২০১২-এ। তার কয়েক বছর পরে ফরাসি সরকারের দেওয়া সম্মান ‘লেজিয়ঁ দ্য নর’ এবং ‘কম্যান্দর দ্য লার্দ্র দে আর্ত্ এ দে লের্ত্র’।

২২ ২৫
সিনেমা থেকে মাঝে মাঝেই ফিরে যেতেন প্রিয় বিচরণভূমি মঞ্চে। নিজের প্রযোজনায় ‘নাম জীবন’, ‘রাজকুমার’, ‘ফেরা’, ‘নীলকণ্ঠ’, ‘ঘটকবিদায়’, ‘ন্যায়মূর্তি’, ‘টিকটিকি’ এবং সুমন মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘রাজা লিয়ার’— বাংলার নাট্যজগতকে একের পর এক উপহার দিয়েছেন তিনি।

সিনেমা থেকে মাঝে মাঝেই ফিরে যেতেন প্রিয় বিচরণভূমি মঞ্চে। নিজের প্রযোজনায় ‘নাম জীবন’, ‘রাজকুমার’, ‘ফেরা’, ‘নীলকণ্ঠ’, ‘ঘটকবিদায়’, ‘ন্যায়মূর্তি’, ‘টিকটিকি’ এবং সুমন মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘রাজা লিয়ার’— বাংলার নাট্যজগতকে একের পর এক উপহার দিয়েছেন তিনি।

২৩ ২৫
মুম্বইয়ে কাজ করার অভিলাষ কোনওদিনই ছিল না। তবে খুব সামান্য হলেও বলিউডে তিনি কাজ করেছেন। ১৯৮৬ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দেনাপাওনা’ অবলম্বনে টেলিফিল্ম ‘নিরূপমা’-য় রামসু্ন্দর মিত্রের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। ২০০২-এ যোগেন চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘হিন্দুস্তানি সিপাহি’ ছবিতেও ছিলেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘স্ত্রীর পত্র’ অনুসরণে ‘স্ত্রী কা পত্র’ পরিচালনা করেছিলেন তিনি।

মুম্বইয়ে কাজ করার অভিলাষ কোনওদিনই ছিল না। তবে খুব সামান্য হলেও বলিউডে তিনি কাজ করেছেন। ১৯৮৬ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দেনাপাওনা’ অবলম্বনে টেলিফিল্ম ‘নিরূপমা’-য় রামসু্ন্দর মিত্রের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। ২০০২-এ যোগেন চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘হিন্দুস্তানি সিপাহি’ ছবিতেও ছিলেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘স্ত্রীর পত্র’ অনুসরণে ‘স্ত্রী কা পত্র’ পরিচালনা করেছিলেন তিনি।

২৪ ২৫
সৌমিত্র অনেকের। তিনি ছবির দর্শকের। তিনি থিয়েটারবোদ্ধাদের। আবার তিনি কবিতাপ্রেমীদেরও। তাঁর লেখা কবিতা ‘পূর্ব মৌসুমী’, ‘সহচরী’, ‘উৎসর্গ’ এবং ‘রাত্রিশেষে’ বার বার সঙ্গী হয়েছে বাঙালি মননের।

সৌমিত্র অনেকের। তিনি ছবির দর্শকের। তিনি থিয়েটারবোদ্ধাদের। আবার তিনি কবিতাপ্রেমীদেরও। তাঁর লেখা কবিতা ‘পূর্ব মৌসুমী’, ‘সহচরী’, ‘উৎসর্গ’ এবং ‘রাত্রিশেষে’ বার বার সঙ্গী হয়েছে বাঙালি মননের।

২৫ ২৫
বাংলা ছবি ও থিয়েটারের দর্শককে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে সমৃদ্ধ করেছেন তিনি। তাঁদের জন্যই রেখে গেলেন অতুল ঐশ্বর্য। দীপাবলির আলোকে নিষ্প্রভ করে বাঙালির গর্বের অন্যতম কারিগর চলে গেলেন মহাসিন্ধুর ওপারে।

বাংলা ছবি ও থিয়েটারের দর্শককে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে সমৃদ্ধ করেছেন তিনি। তাঁদের জন্যই রেখে গেলেন অতুল ঐশ্বর্য। দীপাবলির আলোকে নিষ্প্রভ করে বাঙালির গর্বের অন্যতম কারিগর চলে গেলেন মহাসিন্ধুর ওপারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy