দর্শক, হলমালিক পাশে না দাঁড়ালে বাংলা ছবি কোথায় দেখানো হবে?
‘গঙ্গুবাই কাথিয়াওয়াড়ি’, ‘রাধে শ্যাম’, ‘পুষ্পা’-র জন্য বাংলার প্রেক্ষাগৃহ উন্মুক্ত। হল মালিকদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে ব্যর্থ নতুন ছবি ‘অপরাজিতা’র পরিচালক রোহন সেন। এই মর্মে তিনি বৃহস্পতিবার একটি পোস্টও করেছেন। সেখানে উগড়ে দিয়েছেন তাঁর ক্ষোভ, ‘অপরাজিতা’র হল পাওয়া নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ চলছিল। এখনও চলছে। নন্দন-২, পিভিআর-এ কিছু শো পাওয়া গিয়েছে। এ ছাড়া, সিনেপলিস এবং কার্নিভ্যাল-এ পাওয়া গিয়েছে। যে কোনও কারণেই হোক আমরা আইনক্সে কোনও শো পাইনি। এটা খুবই হতাশাজনক যে কোনও পরিচালকের কাছে।’ এই ঘটনা শুধুই ‘অপরাজিতা’র সঙ্গে হয়নি। খবর, ‘টনিক’, ‘বাবা বেবি ও...’, ‘কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ ভাল ব্যবসা করলেও একটা সময়ের পরে নাকি প্রেক্ষাগৃহ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই অবস্থা নাকি সুমন মৈত্রের ‘আমি ও অপু’, শ্রীমন্ত সেনগুপ্তের ‘আবার বছর কুড়ি পরে’ ছবিরও। বাংলা ছবির জন্য এই মুহূর্তে কোনও শো নেই পশ্চিমবঙ্গে!
অতিমারির বিপর্যয় কাটিয়ে সবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় টলিউড। ছোট-বড়-মাঝারি সব বাজেট এবং তারকা খচিত ছবির একের পর এক মুক্তি আসন্ন। দর্শক, হলমালিক পাশে না দাঁড়ালে বাংলা ছবি কোথায় দেখানো হবে? বিনোদন দুনিয়ার ভবিষ্যতই বা কি? জানতে আনন্দবাজান অনলাইন যোগাযোগ করেছিল পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতা, হল মালিকদের সঙ্গে। কী বলছেন তাঁরা?
রোহন সেনের প্রথম ছবি ‘এ ভাবেই গল্প হোক’ চর্চিত। তার পরেও দ্বিতীয় ছবি ‘অপরাজিতা’র জন্য তাঁর কাল ঘাম ছুটে গিয়েছে। স্বাধীন পরিচালকের প্রশ্ন, ‘বাংলায় বাংলা ছবি হল পায় না! ধিক্কার! এর পর কি আমাদের বাংলা ছেড়ে অন্য জায়গায় গিয়ে বাংলা ছবি দেখাতে হবে?’ তাঁর যুক্তি, ছবি না দেখে বা না দেখিয়ে কী করা বলা যায়, এই ছবি চলবে না! বাঙালি দর্শকদের উদ্দেশে তাঁর আন্তরিক অনুরোধ, ‘‘আপনারাই পারেন বাংলা ছবি বাঁচাতে। হলে গিয়ে বাংলা ছবি দেখুন। বাংলা ছবিকে বাঁচান। না হলে ভবিষ্যতে কেউ স্বাধীন বাংলা ছবি বানাবে না। বাংলায় বাংলা ছবি চালাতে দেওয়া হোক। অন্তত একটা হলেও প্রাইম শো দেওয়া হোক।’’ আগামী দিনে রোহন কি আর বাংলা ছবি বানাবেন? সাফ জবাব এসেছে, চার বার ভাববেন তার আগে।
বিষয়টিতে সায় দিয়েছেন ‘টনিক’-এর প্রযোজক অতনু রায়চৌধুরী। স্পষ্ট জবাব তাঁরও, ‘‘বাংলা ছবি আর প্রেক্ষাগৃহ পাবে না। এই ভাবনায় অভ্যস্ত হতে বলা হচ্ছে পরিচালক, প্রযোজকদের। তার জন্য দায়ী আমরাই।’’ অতনুর দাবি, অন্যান্য ভাষাভাষীর মানুষেরা এক কাট্টা। বলিউডে এক সপ্তাহ অন্তর ছবিমুক্তি পায়। এক সঙ্গে একমুঠো ছবি মুক্তি পায় না। বাংলায় ঠিক উল্টো। কারওর সঙ্গে কারওর সদ্ভাব নেই। এক তারিখে চার-পাঁচটি ছবি মুক্তি পাচ্ছে। এতে ব্যবসা হয়? প্রযোজকের কথায়, ‘‘টনিক’ মুক্তি পেয়েছিল ২৪ ডিসেম্বর। প্রতিযোগী ‘পুষ্পা’, ‘৮৩’, ‘স্পাইডারম্যান’। হল মালিকেরা বলে দিয়েছিলেন, এই তিনটি ছবির কারণে কোনও শো দিতে পারবেন না। শেষে সরকারি হস্তক্ষেপে বিষয়টির মীমাংসা হয়।’’ সবার ছবিতে দেব অধিকারী থাকেন না। তাঁদের কী হবে? প্রযোজকেরা সরকারের দ্বারস্থ হবেন? বেঙ্গল টকিজের কর্ণধারের মতে, সরকারের উচিত বাংলা ছবি, বিনোদন দুনিয়ার পৃষ্ঠপোষকতা করা। যেমন হয় মহারাষ্ট্র বা দক্ষিণ ভারতে। ওরা কিন্তু নিজের ভাষায় ছবির জন্য প্রাইম টাইম পায়। বাংলা তা হলে কেন পাবে না?
পাল্টা যুক্তি সাজিয়েছেন হল মালিকেরাও। অজন্তা সিনেমার কর্ণধার শতদীপ সাহার দাবি, বৃহস্পতিবার নাকি রোহন সেন ‘অপরাজিতা’ ছবির জন্য তাঁর দ্বারস্থ হয়েছিলেন। শেষ মুহূর্তে আসায় তিনি সহযোগিতা করতে পারেননি। যদিও রোহন সেনের দাবি, তিনি প্রথম দিন থেকেই প্রেক্ষাগৃহের জন্য যোগাযোগ করেছেন। শতদীপ ঘুরিয়েছেন তাঁকে। পাশাপাশি হল মালিকের আরও দাবি, ‘‘আমরাও ব্যবসা করতে বসেছি। বাংলা ছবি থেকে আয় হলে কেন আমরা শো দেব না! কিন্তু ব্যবসা দিচ্ছে অন্য ভাষার ছবি। বাংলা দর্শকই নিজের ভাষার ছবি দেখতে চাইছেন না।’’
একই সুর প্রিয়া সিনেমা হলের কর্ণধার অরিজিৎ দত্তের কথাতেও। তিনি সাফ বলেছেন, ‘‘ ‘বাবা বেবি ও...’র জন্য চার সপ্তাহ ছিল। এ বার অন্য ছবি আসবে। তাই উঠে গিয়েছে।’’ ‘গঙ্গুবাই’ যে চলছে? অরিজিতের বক্তব্য, ছবিটি এখনও ভাল ব্যবসা করছে। তাই চলছে। ‘অপরাজিতা’র জন্য কি একটি শো-ও দেওয়া যেত না? সপাট জবাব এ বারেও, ‘‘বিষয়টি সত্যিই দুর্ভাগ্যের। তবে রোহন সেনের ‘অপরাজিতা’র নামই শুনিনি! ছবির সঠিক প্রচার না করলে কেন হল মালিকেরা আগ্রহী হবেন?’’ তার পরেই তাঁর দাবি, ‘‘পরিচালক-প্রযোজকের যদি নিজেদের ছবির উপরে আস্থা থাকে তা হলে একটি শো-এর হলভাড়া দিন। আমি শো ছেড়ে দেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy