পুরাণ কি সব দেশের সব সংস্কৃতির মধ্যেই একটা চিরন্তন মিলকে চিনিয়ে দেয়? নিজস্ব চিত্র।
দেশকালভেদে পুরাণের কাহিনি আলাদা আলাদা। তবে মহাকবিদের বার্তায় অনেক ক্ষেত্রেই একই সুর শোনা গিয়েছে। চরিত্ররা কোথাও গিয়ে সমব্যথী হয়ে উঠেছে। তেমনই এক মিলিয়ে দেখার প্রয়াস ‘এ বং পজ়েটিভ’ নাট্যদলের উপস্থাপনায়। মঞ্চে আসছে তাদের নতুন প্রযোজনা ‘লীলা’।
হিন্দু পুরাণকেন্দ্রিক নাটক অনেক হয়েছে বাংলা থিয়েটারে, গ্রিক পুরাণের কাহিনিও কখনও কখনও হয়েছে নাট্যের আধার। তবে হিন্দু ও গ্রিক পুরাণের কয়েকটি নারীচরিত্রকে এক জায়গায় নিয়ে এসে তাদের লড়াই, টানাপড়েনের বৃত্তান্তকে সমকালের সমাজভাবনার সঙ্গে মিলিয়ে নাট্যরূপ দেওয়ার প্রয়াস অভিনব। ‘এ বং পজ়েটিভ’-এর উপস্থাপনায় ‘লীলা’ তেমনই একটি নাটক। নাট্যকার আশিস কুমার দাস, পরিচালনায় বাপ্পা।
বেহুলা এবং সাবিত্রীর গল্প আমাদের অনেকেরই জানা। মৃত স্বামীদের প্রাণ ফিরে পেতে তাদের লড়াই পুরাণ, সাহিত্যের দৌলতে আমাদের ঘরের কাহিনি। কিন্তু গ্রিক পুরাণ থেকে পাওয়া এউরিদিকের গল্প ঠিক উল্টো। নাটকে দেখা যায়, এউরিদিকে চরিত্রটির মৃত্যু হয়, তার স্বামী অর্ফিউস অনেক লড়াইয়ের পথ পার হয়ে আসে স্বর্গে এবং তার স্ত্রীর প্রাণ ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায় মৃত্যুরাজের কাছ থেকে।
কিন্তু দেবতার ষড়যন্ত্রে ব্যর্থ হয় তার প্রয়াস, তার স্ত্রী এউরিদিকে চিরদিনের জন্য রয়ে যায় মৃত্যুপুরীতে। সে প্রতীক্ষা করতে থাকে তার স্বামীর জন্য। এউরিদিকের শেষ সংলাপ— ‘‘বেহুলা, সাবিত্রী, তোমরা মর্ত্যলোকে বসে কী চেয়েছ? তোমাদের স্বামীর দীর্ঘ জীবন! আমি এই প্রেতলোকে বসে কী চেয়েছি জানো? আমার স্বামীর মৃত্যু।’’ কোথাও এখানে একাকার হয়ে যায় দেশকালের সীমানা।
কেন এই মিলিয়ে দেওয়ার চিন্তা? পুরাণ কি সব দেশের সব সংস্কৃতির মধ্যেই একটা চিরন্তন মিলকে চিনিয়ে দেয়? নাটকটির পরিচালক বাপ্পা বললেন, ‘‘পুরাণের চরিত্রগুলির অস্তিত্ব তো আমাদের বিশ্বাসে। যে সব মানুষ এই পুরাণের কাহিনি লিখেছেন, তাঁরা কোথাও একই রকম ভাবে ভেবেছেন, একই রকম বার্তা দিতে চেয়েছেন। পৃথিবী নামক গোলাকার পিণ্ডের মধ্যেই তো ঘটেছে এই সব কিছু। তাই কোথাও এক হয়ে গেছে সব।’’
নাটকের নাম কেন ‘লীলা’? বাপ্পার কথায়, ‘‘স্বামীর প্রাণ ফিরে পাওয়ার জন্য দেবতাদের সামনে বেহুলার মতো নারীর নৃত্য প্রদর্শন আসলে পুরুষের চিরকালীন ভোগবাসনা মেটানোর রূপক। ঈশ্বরের যে লীলার কথা শুনে এসেছি, তা আসলে নারীকে ভোগ করার কথাই বুঝিয়েছে। লীলা এখানে ঈশ্বররূপী পুরুষের নারীকে ভোগের সামগ্রী ভাবার দৃষ্টি।’’
বর্তমান সমাজেও অনেক ক্ষেত্রেই নিজের প্রাপ্য পেতে পুরুষদের নানা ভাবে খুশি করে যেতে হচ্ছে নারীকে। একই পুরুষের মধ্যে রয়েছে চাতুরীর নানা রূপ, যাতে বিভ্রান্ত হচ্ছেন নারীরা। তাই এই নাটকেও এক আধারে চারটি পুরুষ চরিত্র। পরিচালক বললেন, ‘‘একই পুরুষের মধ্যে আছে যম, অর্ফিউস, সত্যবান এবং লখিন্দর। পুরুষের মধ্যে বহুবিধ সত্তার এই ছলনায় বিভ্রান্ত হয় নারী। আমি ধরতে চেয়েছি সেটাই।’’ লখিন্দর, সত্যবান, অর্ফিউস এবং যম— চারটি পুরুষ চরিত্রে অভিনয় করছেন একজনই অভিনেতা, অর্পণ বসু।
‘লীলা’র মতো নাটক মঞ্চে উপস্থাপন করা আসলে পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটা প্রতিবাদ, জানালেন পরিচালক। এখনকার নারীদের মধ্যে থেকে যে প্রতিবাদী স্বর উঠছে, তাকেই যেন পুরাণ-নাট্যে আরও জোরালো করতে চাইছেন বাপ্পা। তাঁর নাটকে সাবিত্রী, বেহুলা, এউরিদিকে ঈশ্বর নামক পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। অধিকার না পেলে তারা তা ছিনিয়ে নিতেই সংকল্পবদ্ধ হয়। তিন নায়িকার ভূমিকায় রয়েছেন, রিমি দেব, মানসী কুণ্ডু, পাপিয়া পাল।
‘এ বং পজ়েটিভ’-এর সামগ্রিক পরিকল্পনায় চলছে নাটকটির মঞ্চায়নের প্রস্তুতি। আগামী ১৮ই মার্চ সন্ধ্যা ৭টায় শো, অশোকনগরের শহিদ সদনে এটি মঞ্চস্থ হবে। এপ্রিলে নাটকটি দেখা যাবে তপন থিয়েটারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy