এইটুকু বয়সে একেবারে সেলিব্রিটি লাইফ। আজ টরন্টো তো কাল বেঙ্গালুরু…
(হেসে) না না এক্কেবারে না। টরন্টোয়, আমি এখন হোম স্কুলে পড়ি। আর হোম স্কুলে পড়ার ফলে হাতে অনেকটা সময় থেকে যায়। সেটা কাজে লাগাই। সকালে উঠে বই-খাতা নিয়ে তো বসতেই হয়। না হলে মা-বাবা রেগে যায়। বকুনির হাত থেকে বাঁচতে, আগে লেখাপড়াটা সেরে নিই। ব্যস। তার পর বসে পড়ি কোডিং নিয়ে। দুপুরের খাওয়া-দাওয়াটুকু সেরেই ফের বসে পড়ি। কম্পিউটারের সঙ্গে সারা দুপুর কেটে যায়।
সেলিব্রিটি লাইফ নয় বলছ!
একেবারেই না। সেলিব্রিটি তো অমিতাভ বচ্চন। উফ যা দারুণ লাগে না আমার । অমিতাভের ‘কেবিসি’র কোনও শো মিস করতাম না। টরন্টোয় বসেই আমি ‘ভূতনাথ’ আর ‘ভূতনাথ রিটার্নস’ দেখেছি। বিগ বি-র আরও সিনেমা দেখার প্ল্যান রয়েছে।
ওঁর সঙ্গে দেখা করতে ইচ্ছে করে না?
করে তো। উফ ভাবলেই কেমন লাগে। অমিতাভের অটোগ্রাফ-ওলা বই নিজের কাছে রাখতে চাই। ইসস স্বপ্নটা যদি সত্যি হত…
আর কী কী স্বপ্ন দ্যাখো…
স্বপ্ন দেখি, মার্ক জুকেরবার্গের সঙ্গে দেখা করতে গেছি। উনি এটা-ওটা জি়জ্ঞেস করছেন। আর আমি উত্তর দিচ্ছি। আর তাজমহল দেখতে খুব ইচ্ছে করে। বইয়ে, ইন্টারনেটে তাজমহলের কত ছবি দেখেছি! কিন্তু সামনে থেকে দেখা হয়নি। এই তো সে দিন দিল্লিতে দাদুর বাড়ি থেকে বেড়িয়ে ফিরলাম। কিন্তু তাজমহল দেখা হল না। এত মন খারাপ লাগছিল। আমার আরেকটা ইচ্ছে আছে। বলি...
বলো
ভারতে গিয়ে কয়েকটি ‘আইআইটি’ ক্যাম্পাস ঘুরে দেখতে চাই।
বাহ, বেশ অন্য ধরনের ইচ্ছে তো। যারা অ্যাপ বানায় তারা তো অঙ্কে বেশ স্ট্রং হয়। তুমিও কি ছোট্ট থেকে অঙ্কে স্ট্রং?
আরে না না। মাল্টিপ্লিকেশন করতে বসলেই আমি মা-বাবার কাছে বকুনি খেতাম। কোডিং করা নেশা হলেও মাল্টিপ্লিকেশনে আমি অতটা ভাল ছিলাম না। তো আমার মনে হল এমন একটা কিছু বানাই যেটা আমায় মাল্টিপ্লিকেশন প্র্যাকটিস করতে সাহায্য করবে। এ সব নিয়ে ভাবতে ভাবতে এক দিন ‘টি টেবলস’ অ্যাপ বানিয়ে ফেললাম। প্রথমে এটা উইনডোজ অ্যাপ ছিল। তার পর যখন ‘গ্রেড ফোরে’ উঠি তখন আই ফোন-য়ের জন্য ‘টি টেবলস’-এর আপডেটেড ভার্সন ‘টে টেবলস প্লাস’ তৈরি করে ফেলি। তবে ছোট্টবেলা থেকে কম্পিউটারের সঙ্গে হেব্বি বন্ধুত্ব আমার। কত সময় যে আমি ওর সঙ্গে কাটাই। আসলে ও আমার কাছে অনেকটা খেলনার মতো।
‘টি টেবলস’ অ্যাপ তো ‘অ্যাপল’-এ আছে।
(হেসে) হ্যাঁ। ‘অ্যাপল অ্যাপ স্টোরে’। অ্যাপ বানানোর নেশা থেকে আমি আরও ছ-ছটি অ্যাপ বানিয়ে ফেলি।
‘টিআইডিভল্ট’ দিয়ে তো পাস ওয়ার্ড সেট করা যায়।
বাবা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে জিনিস কেনে। আর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলেই দেখি পাসওয়ার্ড দেয়। পাসওয়ার্ড সেট করার ব্যাপারটা আমার খুব ইন্টারেস্টিং লেগেছিল। এই নিয়ে ঘাঁটতে ঘাঁটতে ‘টি আই ডি’-ভল্ট তৈরি করে ফেলি। আই ফোনে এই অ্যাপ দিয়ে পাসওয়ার্ড সেট করা যায়।
আজকাল তো সারাক্ষণ সবাই হোয়াটস অ্যাপে চ্যাট করছে। তুমিও তো এরকম অ্যাপ তৈরি করেছ।
হ্যাঁ। আমিও হোয়াটস অ্যাপে থাকি। ভাই-বোনরা অনেকেই তো কত দূরে থাকে। ওদের সঙ্গে গল্প করতে গেলেই হোয়াটস অ্যাপ খুলে বসি। আমি যে ‘আই ক্যান, উই ক্যান’ অ্যাপ তৈরি করেছি তাতেও সবাই আড্ডা দিতে পারবে। আইডিয়া শেয়ার বা ছবি আপলোড করতে পারবে।
‘আস্ক তন্ময়’র আইডিয়াটাও তো বেশ...
‘আস্ক তন্মে’ বলে ওপেন সোর্স সফটওয়্যার করেছি। সেখানে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী থেকে সফটওয়্যার ডেভেলপার সকলে তাঁদের প্রশ্ন রাখতে পারবেন। উত্তর মিলবে ঝটপট। কোনও বিষয়ে ইনপুট দেওয়ার হলে, তাও দিতে পারবেন।
ভিডিও গেম তো তোমার নেশা…
ভিডিয়ো গেম খেলতে বসলেই মা কী বকা দেয়। খালি বলে ওঠ, ওঠ। পড়তে বস। আমি এত রকম গেম খেলতে পারি, যে খেলা ছেড়ে উঠতে মন চায় না। এই নেশা থেকে তৈরি করে ফেলেছি গেম অ্যাপ ‘টি গেস’। আই ফোন এবং অ্যাপল ওয়াচের জন্য।
ইউটিউবে তোমার ৮৯টা ভিডিয়ো...
একদম ছোটবেলায় আমি টিচার সাজতাম। আমি যা শিখছি তা অন্যদের বলতে খুব ভাল লাগতো। সেই থেকে আমার এই ক্লাস নেওয়ার আইডিয়াটা মাথায় আসে। পাঁচ বছর ধরে ‘তন্মে টিচেস’ বলে অনলাইন ক্লাস নিই।
বারো বছরের বাচ্চা এতো কিছু করে ফেলেছো। ব্যাপারটা কী বলো তো, তুমি কি ভিন গ্রহের!
ভিন গ্রহের হব কেন! এই গ্রহেরই (হাসি)। আর সারাক্ষণ লেখাপড়া আর প্রোগ্রামিং নিয়ে বসে থাকি তাও নয়। বিকেল বেলায় বন্ধুদের সঙ্গে টেবল টেনিস খেলি। আর ভালবাসি বাইকিং। বেড়াতে যেতে আমার দারুণ লাগে জানেন। সময় সুযোগ পেলেই বাবা-মা আমায় নিয়ে বেড়াতে যায়।
ফেসবুক অ্যাডিক্টেড?
না না, আমি খুব বেশি ফেসবুকে থাকি না আমি। ট্যুইটার আমার বেশি পছন্দের।
‘ফেসবুক’য়ের জনপ্রিয়তা তো কমছে। সবাই ‘স্ন্যাপচ্যাটে’-এ মজে।
কে কোন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করবেন এটা তাদের ব্যপার। তবে আমার মনে হয় ‘ফেসবুক’, ‘ট্যুইটার’ অনেক বেশি রিয়েল সোশ্যাল মিডিয়া। স্ন্যাপচ্যাটে তো খালি ভিডিয়ো আর ছবি শেয়ার করা যায়। ‘ফেসবুক’কে অনেক কমপ্লিট লাগে, কত কী করা যায়।
সে সব তো হল, বল দেখি তোমার প্রিয় খাবার কী?
বাটার চিকেন আর আম।
প্রোগ্রামিং নেশা। কম্পিউটার তোমার কাছে খেলনার মতো। বড় হলে বিল গেটস-হবে নাকি?
কি জানি কী হব! তবে স্টিব জোভস আমার আইকন। খালি মনে হয় অ্যাপ তৈরি আর সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশনে কত কী শেখার আছে। সেগুলো শিখতে চাই। জানতে চাই।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা তো তোমায় পরামর্শদাতা করেছে।
(হেসে) এটা সাম্মানিক। কি ভাল যে লেগেছিল! ওই সংস্থায় আমার বেশ কয়েকজন মেন্টর আছেন। ওঁরা আমার উৎসাহটা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছেন। আরও কত কী করতে হবে...
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy