Advertisement
৩০ নভেম্বর ২০২৪

সঙ্কটকে হারিয়ে সঙ্গীত

বাজারে পাঁচশো-হাজার পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু তাই বলে বিয়ের সাজ থামালে তো চলবে না। এই সিজনে কোন ড্রেসে মাথা ঘুরিয়ে দেবেন পাত্রপক্ষের? মেনুতে বিদেশি নতুন কোন আইটেম রাখলে সবাই ফিদা? এখনই প্ল্যানিংয়ের টিপস দিচ্ছে আনন্দplusবিয়েতে গোল্ডেন লেহেঙ্গা পরবেন ভাবছেন? তা হলে আপনি আউট অব ট্রেন্ড। বিয়েতে বাঙালি-অবাঙালি স্টাইল বলে আর আলাদা কিছু হয় না। এখন প্যান ইন্ডিয়ান ম্যারেজ-য়ের চল। বিয়েতে গ্ল্যাম কুইন হয়ে উঠুন লাল লেহেঙ্গায়।

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৬ ০০:১৩
Share: Save:

লেহেঙ্গা/ ক্রপ টপ = জেন ওয়াই

• বিয়েতে গোল্ডেন লেহেঙ্গা পরবেন ভাবছেন? তা হলে আপনি আউট অব ট্রেন্ড। বিয়েতে বাঙালি-অবাঙালি স্টাইল বলে আর আলাদা কিছু হয় না। এখন প্যান ইন্ডিয়ান ম্যারেজ-য়ের চল। বিয়েতে গ্ল্যাম কুইন হয়ে উঠুন লাল লেহেঙ্গায়

• শুধু লেহেঙ্গা নয়, জারা হটকে লুক-য়ে নজর কাড়তে চাইলে ব্লাউজের সঙ্গে টিম আপ করতে পারেন ধুতি স্কার্ট, হাই-ওয়েস্ট ট্রাউজার, মিড লেংথ স্কার্ট। শুধু ফ্রেবিকটা যেন ব্রাইডাল এফেক্ট দেয়, সেটা নজরে রাখুন। বাছুন ভেলভেট বা বেনারসি উইভ

• মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ আপনার বেশ পছন্দের। অফিসে এ ভাবেই ফ্যাশন করে অভ্যস্ত। বিয়ের ট্রেন্ডেও ইন মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ। আর ব্লাউজে থাকুক সাহসের ছোঁয়া। ক্রপ টপ, অফ-শোল্ডার বা কোল্ড শোল্ডার ব্লাউজে বিয়ের রাতেই হয়ে উঠুন হট অ্যান্ড সেক্সি

• শাড়ি, গাউন, ড্রেস, লেহেঙ্গা, কুর্তা, যাই পরুন না কেন, কেপ জড়িয়ে নিতে পারেন। সিঁদুর পরার আগে ছবি উঠুক শুধু শাড়িতে। পরে লুক বদলে কেপ গায়ে ছবি তুলুন আর পোস্ট করুন। দেখবেন ‘লাইক’য়ের ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়

• বেনারসির বদলে লেহেঙ্গা পরবেন ঠিক করেছেন। ছেলের বাড়িরও আপত্তি নেই। বিয়ের বাসরে লাল লেহেঙ্গায় নিজেকে নতুন করে চিনুন। আর ওড়না নেবেন না। ওটা আজকাল আর চলে না

• শাড়ি পরুন বা লেহেঙ্গা — লুক বদলাতে পারেন জ্যাকেট দিয়ে। গর্জাস লুক চাইলে শাড়ির ওপরেও পরে ফেলতে পারেন সিকোয়েন্স দেওয়া জ্যাকেট।

কে বলতে পারে শুধু লাইফ পার্টনার নন, গোটা শ্বশুরবাড়িই হয়তো আপনার ফ্যাশনে ফিদা হয়ে গেল!

পরামর্শ: রিতু কুমার, (ফ্যাশন ডিজাইনার)

ছবি তুলতে এ বার ড্রোন

•বিয়ে করছেন আর কোনও ছবি থাকবে না? কিন্তু তা বলে স্রেফ স্টিল ফোটোগ্রাফি! সে তো বড্ড সেকেলে। এ বারে বিয়ের বাজার কাঁপাতে শহরে হাজির বেশ কিছু ড্রোন। যার ওপর ক্যামেরা বসিয়ে বিয়েবাড়ির প্রতিটা মুহূর্তের ছবি তুলছেন ফোটোগ্রাফাররা

• আইবুড়ো ভাত থেকে বৌভাত— প্রতিটা রঙিন মুহূর্ত ধরে রাখতে প্রয়োজন নিত্যনতুন অ্যাঙ্গেল। ড্রোনের ওপর ক্যামেরা বসিয়ে দিলেই হল। এবং ড্রোন যে সব অ্যাঙ্গেল দেয় তা সাধারণ স্টিল ক্যামেরায় তোলা সম্ভব নয়।

• ড্রোনের সুবাদে অবশ্য শুধু ছবিনয়, তোলা যাবে ঝকঝকে ভিডিয়ো ফিল্মও। প্যাকেজ শুরু ষাট হাজার টাকা থেকে।

• বিয়ের আগে হবু কর্তা-গিন্নি ইচ্ছে করলে চলে যেতে পারেন প্রিয় কোনও জায়গায়। চন্দননগর রাজবাড়ি হোক কিংবা মন্দারমণির সমুদ্রসৈকত, প্রি ওয়েডিং ছবি উঠবে কয়েক সেকেন্ডেই

• তিন দিনের বিয়ের প্যাকেজ শুরু চল্লিশ হাজার টাকা থেকে। বুকিং করতে হবে মাসখানেক আগে

পরামর্শ: সম্বরণ কুমার পাল (ওয়েডিং ফ্রোটোগ্রাফার, ডি.উঙ্কার্স)

মেকআপ এখন প্যান ইন্ডিয়ান

• বিয়ের সাজে নতুন প্রজন্ম অনেক প্ল্যান করে চলে। আগের মতো দিদিমা-ঠাকুমার টিকলি, মায়ের কানবালা, পিসিমার দুল আছে বলেই পরে ফেললেন, এমনটা না

• প্রাদেশিক বিয়ের নিয়ম সরিয়ে বিয়ের মেক আপ এখন প্যান ইন্ডিয়ান। বাঙালি কনে যেমন আর চন্দন পরতে চান না। মহারাষ্ট্রের কনেরাও নথ পরা থেকে সরে এসেছেন।

• প্যান ইন্ডিয়ান ব্রাইডাল লুকের রং লাল। আর বরেরাও সাজ নিয়ে বেশ খুঁতখুঁতে। সালোঁতে গিয়ে মেক আপ-য়ের দিকে ঝুঁকছেন

• অনেকেই চাইছেন ন্যাচারাল লুক। ফাউন্ডেশন ছাড়া বিয়ের পিঁড়িতে বসতে রাজি জেন ওয়াই

পরামর্শ: অনিরুদ্ধ চাকলাদার, (মেকআপ আর্টিস্ট)

মেনুতে সিঙ্গাপুর চিলি প্রন

•বিয়েবাড়ি মানে এখন ফিশ ফ্রাই আর মটন কষা নয়। অনেকে চাইছেন শুরুতে বাঙালিয়ানার ছোঁয়া থাকলেও মাঝে থাকুক কন্টিনেন্টাল আইটেম

• বিয়ের পাতে সিঙ্গাপুর চিলি প্রন বা ড্রাই স্টার্টার রোস্ট ল্যাম্ব মালাক এখন হট ফেভারিট

• জেন ওয়াই চাইছে ষোলো আনা বাঙালিয়ানার মধ্যে মিশে যাক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার টেম্পোরা প্রন বা থাই কারি

• কারও আবার পছন্দ মেক্সিকান টাকো বা ফাহিতা। কেউ চাইছেন ভিয়েতনামিজ স্প্রিং রোল

• স্বাস্থ্য সচেতন কনে বা বর চাইছে মেনুতে থাকুক দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ডিশ গ্রিন পাপায়া স্যালাড

পরামর্শ: অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়,
(এম ডি, স্পেশালিটি রেস্টোর‌্যান্ট লিমিটেড)

হানিমুন ট্রাভেলস...

• ইন্টারন্যাশানাল ফ্লাইটে টিকিটের দাম বেশ কমে যাওয়ায় অনেকেই এখন হানিমুনের জন্য বিদেশি লোকেশন বেছে নিচ্ছেন। এ বছর সব থেকে চাহিদা কো সামুই (তাইল্যান্ড), বালি, মরিশাস, ফিজি, ম্যাকাও আর দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশের মধ্যে কুর্গ, সাউথ গোয়া আর আন্দামানও ভীষণ জনপ্রিয়

•হানিমুনে যাচ্ছেন যখন, তখন সস্তায় ভরসা করবেন না। নিজে সময় নিয়ে রিসার্চ করতে পারলে ভাল, না হলে নামী কোনও ট্যুর অপারেটরকে বেছে নিন। তবে তাদের সম্পর্কে রিভিউগুলো ইন্টারনেটে ভাল করে পড়ে নেবেন।

• অনেকেই হানিমুনে গিয়ে প্যারাগ্লাইডিং, রক ক্লাইম্বিং, স্কাই জাম্প বা স্কুবা ডাইভিংয়ের মতো অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসে অংশ নেন। সেক্ষেত্রে যে সংস্থার সঙ্গে যাচ্ছেন তাদের সার্টিফিকেট ভাল করে দেখে নেবেন। সেই দেশের ট্যুরিজম দফতরের ওয়েবসাইটে দেখে নিন সেই সংস্থা নথিভুক্ত আছে কি না। ঝুঁকি নিন, কিন্তু মেপে।

•ফ্লাইটের টিকিট না কেটে থাকলে এখনই কেটে নিন। ডিটেল প্ল্যানিং পরেও করতে পারবেন। এক মাসের কম সময় থাকলে টিকিটের দাম অনেক বেড়ে যাবে। কোনও কোনও ওয়েবসাইট টিকিটের দামের ওপর অ্যালার্টের ব্যবস্থা রাখে। সেখানে সাইনআপ করে রাখুন। দাম কমলেই আপনাকে জানিয়ে দেবে ইমেলের মাধ্যমে।

•অনেক দেশেই এখন ভিসা অন অ্যারাইভাল, তবু আগেই কনসুলেট থেকে ভিসা করে নেওয়াই ভাল। হানিমুনে গিয়ে এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশনে অযথা সময় নষ্ট করতে হবে না।

পরামর্শ: রাজীব কালে, (প্রেসিডেন্ট, থমাস কুক ইন্ডিয়া)

বিয়ে আছে... ক্যাশ নেই...

৫০০ আর ১০০০ টাকা বাজার থেকে উধাও হয়ে যাওয়ার পর হাহাকার নেমে এসেছে বহু বিয়েবাড়িতে। ক্যাটারার, ফুলের সাজ, গাড়ি, ডেকরেটর — বেশির ভাগেই যেহেতু ক্যাশের ব্যবস্থা তাই ঝামেলায় পড়ছে সবাই। ‘‘ দাদা, পুরোটা ধারে করতে হচ্ছে। সবাইকে বাবা-বাছা বলে কাজ করাচ্ছি,’’ বলছেন কলকাতার অন্যতম বড় ক্যাটারার সংস্থার কর্ণধার।

এমনকী লেক মার্কেটের মাছের দোকান, যেখানে বিয়ের দিনে ৩০ থেকে ৪০টা বড় মাছ শুধু বিয়েবাড়ির জন্য বরাদ্দ থাকে, সেখানেও এবার ভাটার টান। ‘‘যাঁরা অ্যাডভান্স বুকিং করে ৫০০-১০০০ টাকা দিয়ে গেছেন তাঁদের কাছ থেকে আর টাকা ফেরত চাইতে পারি না। কিন্তু নতুন অর্ডার এলে ১০০ টাকার নোট ছাড়া আর নিচ্ছি না। বুঝতে পারছি অসুবিধা হচ্ছে ‘পার্টি’র কিন্তু কী করব?’’ বলছেন এক মাছ বিক্রেতা।

অন্য দিকে বিয়ের মরসুমে মেক আপ আর স্টাইলিংয়ে ব্যস্ত থাকেন অনিরুদ্ধ চাকলাদার। তিনিও বলছেন, ক্লায়েন্ট যথেষ্ট ঝামেলায়। ‘‘আমি নিজে খুব একটা অ্যাফেক্টেড নই কিন্তু বিয়ে বাড়ির সবার মুখেই উৎকণ্ঠা রয়েছে,’’ বলছেন অনিরুদ্ধ।

বড় বড় বিয়েবাড়িতে বিয়ের দিন ফুলের বাজেট আজকাল লাখ টাকার কাছাকাছি পৌঁছে যায়। সেই ফুলের জোগান দেওয়া নিউ মার্কেটের ফুলের দোকানিরা পড়েছেন সমস্যায়। ‘‘আমাদের সব সময় ক্যাশ পেমেন্টে কাজ হতো। আমরা কাজ করে দিচ্ছি সম্পর্কের খাতিরে। পরে নর্মাল হয়ে গেলে পেমেন্ট যে পাওয়া যাবে সেই আশায়। তবে টাকার সমস্যা তাড়াতাড়ি না মিটলে, খুব বিপদ আমাদের,’’ বলছিলেন এক ফুল বিক্রেতা।

এ সবের মধ্যে নভেম্বরের শেষ দিকে মেয়ের বিয়ে টালিগঞ্জের দীপতোষ পালের। সব দেখেশুনে তাঁর বক্তব্য, ‘‘গত মঙ্গলবারের ঘটনার পর থেকে রাতে ঘুমের ওষুধ খাচ্ছি। আর পনেরো দিন পরে মেয়ের বিয়ে। মোদীজি যদি বিয়ে বাড়িতে ছাড় দিতেন, তা হলে বড় ভাল হতো,’’ হাসতে হাসতে বলছিলেন দীপতোষ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy