সারোগেসি নিয়ে অকপট টলিউডের নতুন প্রজন্ম।
প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার ঘরে সন্তান এল। আন্তর্জাতিক তারকার মা হওয়া নিয়ে বিস্তর চর্চা হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যাবতীয় আলোচনাকে ছাপিয়ে যাচ্ছে একটি শব্দ— সারোগেসি। অর্থাৎ যে পদ্ধতিতে প্রিয়ঙ্কা মা হয়েছেন, তা নিয়ে আগ্রহের পারদ ঊর্ধ্বমুখীই। কিন্তু তিনি একা নন, বলিউডে শাহরুখ খান, আমির খান, শিল্পা শেট্টি, প্রীতি জিন্টার মতো তারকারাও সন্তান পেয়েছেন সারোগেসির মাধ্যমে। এ নিয়ে লুকোছাপা তো দূর অস্ত, বরং প্রিয়ঙ্কার মতো তাঁরাও প্রকাশ্যে এই পদ্ধতি অবলম্বনের কথা স্বীকার করেছেন।
এ তো গেল বলিউডের কথা। কিন্তু টলিউড? সেখানে বিশেষ কাউকে এই পদ্ধতির সাহায্য নিতে দেখা যায়নি এখনও পর্যন্ত। আগামী দিনে কি বদলাবে সেই ছবি? অন্যের গর্ভে নিজের সন্তান ধারণে স্বাচ্ছন্দ্য হবেন অভিভাবক? কী বলছে নতুন প্রজন্ম?
এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ব্যক্তি স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দিয়েছেন দেবলীনা কুমার। নতুন মা প্রিয়ঙ্কার উদাহরণ দিয়ে তিনি বললেন, “উনি যদি এই পদ্ধতি অবলম্বন করে খুশি হন, তা হলে সেটাই আসল কথা। ওঁর নিজের জন্য যা ভাল মনে হয়েছে, তা-ই করেছেন। এই বিষয়টি নিয়ে বেশি জলঘোলা না করার অনুরোধ করেছেন প্রিয়ঙ্কা। আমি মনে করি, ওঁর সিদ্ধান্তকে আমাদের সম্মান করা উচিত।” কিন্তু ভবিষ্যতে কি দেবলীনাও কখনও প্রিয়ঙ্কার পথে সারোগেসির সাহায্য নেবেন? প্রশ্ন করতেই উত্তর, “আমি কখনও মা হওয়া নিয়ে কিছুই ভাবিনি। তাই এই বিষয়ে মন্তব্য করাটাও ঠিক হবে না।”
দেবলীনার সুরে গলা মিলিয়েছেন সন্দীপ্তা সেনও। মনোবিদ-অভিনেত্রী মনে করেন, একজন ব্যক্তি কী ভাবে তাঁর সন্তানকে পৃথিবীতে আনবেন, সেই সিদ্ধান্ত একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত। তাঁর কথায়, “বলিউডে সারোগেসি প্রচলিত হলেও, কোনও কারণে টলিউডে এই পদ্ধতিটি বিশেষ পরিচিত নয়। আমি আলাদা করে এ বিষয়ে কখনও কিছু ভেবে দেখিনি। এই পদ্ধতির সাহায্য নেব কি না, তা নির্ভর করবে আমার মানসিক এবং শারীরিক অবস্থার উপর।”
সারোগেসিকে ‘সুবিধাজনক’ বলে মনে করেন অভিনেত্রী তৃণা সাহা। তবে নিজে এই পদ্ধতি অবলম্বনের পক্ষপাতী নন। পর্দার গুনগুনের কথায়, “আমি নিজে সন্তানকে জন্ম দিতে চাই। মাতৃত্বের সেই সময়টাকে উপভোগ করতে চাই।” সারোগেসি নিয়ে তৃণার বক্তব্য, “যাঁরা এই পদ্ধতিতে মা হয়েছেন, তাঁদের সন্তান অন্যের গর্ভে থাকে ঠিকই কিন্তু তাদের লালনপালন তো অভিভাবকই করেন। আর যিনি এত যত্নে শিশুটিকে জন্ম দেন, তিনিও তো মা। একটি শিশু দু’জন মা পায়। এর থেকে ভাল আর কী হতে পারে!”
সারোগেসির মাধ্যমে প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার মা হওয়ার খবর গত রাতেই জেনেছেন অভিনেতা সৌরভ দাস । ‘দেশি গার্ল’-এর এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন তিনি। সৌরভের বক্তব্য, “প্রিয়ঙ্কা ব্যস্ত তারকা। অন্তঃসত্ত্বা হয়ে বাড়িতে বসে গেলে হয়তো কোটি কোটি টাকার লোকশান হত। তিনি অন্য একজনের সাহায্যে মা হয়েছেন ঠিকই। কিন্তু সন্তানকে তো তিনি নিজেই বড় করবেন। তাকে ভাল রাখার দায়িত্ব নেবেন।” তাঁর আশা, প্রিয়ঙ্কার মতো বড় মাপের তারকাকে দেখে অনুপ্রাণিত হবেন অনেকেই।
জানা গিয়েছে, বেশ কিছু দিন ধরেই নিক-প্রিয়ঙ্কা অভিভাবক হওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু তারকা-দম্পতির ব্যস্ত জীবন তাতে খানিক বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রিয়ঙ্কার শরীর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার অনুকূল থাকলে ৪০-এর কোঠায় পৌঁছে যাওয়ায় কিছু সমস্যা হতে পারত। এই ভাবনা থেকেই সারোগেসির সাহায্য নিয়েছেন তাঁরা। এ প্রসঙ্গে ‘মন্টু পাইলট’ বললেন, “শুধু সন্তানকে জন্ম দিলেই তো হল না। তাঁকে ভাল ভাবে মানুষ করাও একটা বড় বিষয়। আমাদের প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের নিজের পায়ে দাঁড়াতেই অনেক বয়স হয়ে যায়। আর একটু বয়স বাড়লেই অনেক সময় মহিলাদের গর্ভধারণের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা যায়। তখন সারোগেসির পথ খোলা থাকে।”
সৌরভের মতোই সারোগেসির নানা সুবিধার কথা স্বীকার করছেন সপ্তর্ষি মৌলিক। কিন্তু তিনি মনে করেন, এই পদ্ধতি নিয়ে ভারতীয়দের মধ্যে এখনও খানিক ‘লুকোছাপা’র প্রবণতা রয়েছে। তাই যে মহিলা তাঁর গর্ভে সন্তান ধারণ করেন, তাঁকে এখনও নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। থাকতে হয় সকলের চোখের আড়ালে। সপ্তর্ষির কথায়, “যাঁরা এই কাজটি করেন, তাঁরা অত্যন্ত ভাল একটি কাজ করছেন। কিন্তু এখনও তাঁদের তির্যক দৃষ্টিতে দেখা হয়। আসলে অনেকেই ভাবেন, নিজে সন্তানকে জন্ম না দিতে পারাটা এক ধরনের ব্যর্থতা। তাই এই পদ্ধতি অবলম্বনে সঙ্কোচ করেন। তবে আমার আশা সময়ের সঙ্গে এই ভ্রান্ত ধারণা কাটবেই। আর আমাদের নতুন ভাবে ভাবতে শেখাবেন প্রিয়ঙ্কার মতো মানুষরা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy