Advertisement
১৮ জানুয়ারি ২০২৫
Jatra

Jatra: গরিমা হারিয়েছিল আগেই, এ বার কোমর ভেঙে দিল কোভিড, বলছে যাত্রা পাড়া

যাত্রা তার পুরনো জৌলুস হারাচ্ছিল বেশ কয়েক বছর ধরেই। করোনা এসে ওলটপালট করে দিল বাকিটুকুও।

কোভিডের কোপে রুজি হারাচ্ছে যাত্রা পাড়া।

কোভিডের কোপে রুজি হারাচ্ছে যাত্রা পাড়া। প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৫:০০
Share: Save:

সে এক সময় ছিল। যাত্রার আসরে ভেঙে পড়ত গ্রামকে গ্রাম। রাত জেগে পালার পর পালা দেখা। যাত্রা তার পুরনো জৌলুস হারাচ্ছিল বেশ কয়েক বছর ধরেই। করোনা এসে ওলটপালট করে দিল বাকিটুকুও। যাত্রাদলের আয়োজক বা প্রযোজকরা তো বটেই, এ আফশোস এখন অভিনেতাদেরও কুরে কুরে খাচ্ছে!

গোটা দেশের পাশাপাশি বাংলাতেও অতিমারির দাপট বাড়তেই জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা। ফলে বিনোদনের বাকি ক্ষেত্রের মতোই লাগাম পড়েছিল যাত্রায়। শহর থেকে গ্রামগঞ্জ, প্রায় সর্বত্রই বছর দুয়েক বন্ধই ছিল যাত্রা। পুজোর সময়ে খানিক সাহস করে দু-একটা দল যাত্রা নিয়ে ফিরতে চেয়েছিল বটে, তবে লাভ হয়নি। এক দিকে রোগের ভয়, অন্য দিকে অতিমারিতে রোজগার হারানো মানুষের হাতে যাত্রা দেখার মতো ‘বিলাসিতা’র পয়সাটুকুও না থাকা। সেই সঙ্গেই কোভিড এড়াতে টিভির পর্দার চেনামুখদের যাত্রার আসরে যেতে না চাওয়া। অগত্যা লোকসানের খাতাই বহাল রইল যাত্রাপাড়ায়। তার মধ্যে নতুন করে ফিরে এল করোনাও। ওমিক্রনের দাপটে আবারও ঝাঁপ বন্ধ। প্রযোজকদের মাথায় হাত, শিল্পীদের অনেকেরই প্রায় না অনাহারের দশা! অগত্যা প্রাণে বাঁচতে অন্য পেশাতেও চলে যাচ্ছেন কেউ কেউ।

পেটের দায়ে অন্য পেশায় যাবেন যাত্রাশিল্পীরা?

পেটের দায়ে অন্য পেশায় যাবেন যাত্রাশিল্পীরা? প্রতীকী ছবি

সাঁইত্রিশ বছর ধরে যাত্রার পালাকার অনল চক্রবর্তী। অভিনয়ও করেন। যাত্রায় তাঁর এবং অভিনেত্রী কাকলি চৌধুরীর জুটি এ বার পঁচিশ বছরে পা দিল। গত আড়াই বছরে যাত্রা পাড়ার প্রায় পঁচাত্তর ভাগ ক্ষতি হয়ে গিয়েছে বলে জানালেন তিনি।

অভিনেতা-পালাকার বললেন, “এমনিতেই যাত্রার চরিত্র পাল্টে গিয়েছে। তার জৌলুস বা গরিমা এখন অনেকটাই ফিকে। যাত্রার ঐতিহ্য ফেরানো নিয়ে কারও ভাবনাচিন্তাও নেই তেমন। তার মধ্যেই এল অতিমারি। যাত্রার দ্বিতীয় সারি থেকে নিচুতলার শিল্পী, যাত্রার অন্যান্য কর্মীদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। পেটের দায়ে অনেকেই চলে যেতে চাইছেন অন্য পেশায়। করোনা এসে যাত্রাপাড়ার প্রায় মেরুদণ্ড ভেঙে দিল বলা যায়। এই তো কয়েক দিন আগে সরকার যাত্রা করায় ছাড় দিল। তার পরে একটু একটু করে বিভিন্ন দল শো করা শুরু করেছে বটে, তবে তা আগেকার অর্ধেকও হবে কি না সন্দেহ! এই অবস্থায় আমরা শিল্পীরা নিজেদের পারিশ্রমিক কমিয়ে লোকসান কমানোর চেষ্টা করছি, যেটুকু পারি।”

‘অগ্রগামী’, ‘নন্দী কোম্পানি’, ‘স্বর্ণাঞ্জলি অপেরা’— তিনটি যাত্রা দল রয়েছে প্রযোজক গৌতম নন্দীর। তাঁর কথায়, “সাধারণত পুজো থেকেই শুরু হয়ে যায় যাত্রার আসর। সে সব হয়ইনি। যাত্রা পুরোপুরি বন্ধই ছিল বলা চলে। এ বার সরকারি নির্দেশে পাড়ায় পাড়ায়, সরকারি অনুষ্ঠান বা উৎসবে যাত্রার আসর বসছে। আশা করছি, হয়তো একটু একটু করে হলেও পরিস্থিতি বদলাবে। সাধারণত যাত্রার অভিনেতাদের শো-এর অনেক আগে আগাম টাকা দিয়ে দেওয়া হয়, শো-এর সময়ে একটু একটু করে সেই টাকা অ্যাডজাস্ট করা হয়। এ বার সেখানে আগাম টাকা দেওয়া হয়েছে যাত্রাশিল্পীদের দলে ধরে রাখতে, যাতে তাঁরা পেটের দায়ে অন্য পেশায় চলে না যান! আবার সেই টাকা পরে কেটে নেওয়ারও সুযোগ নেই। ফলে প্রযোজকদের লোকসানও হচ্ছে অনেকটাই। কী করব!”

২০১২ সাল থেকে কোভিডের আগে পর্যন্ত নিয়মিত যাত্রা করতেন ছোট পর্দার চেনা মুখ রাজা গোস্বামী এবং মধুবনী গোস্বামী। অতিমারি শুরু হওয়ার পরে করোনার ভয়ে এবং বাড়িতে ছোট্ট সদস্য আসায় যাত্রার লোক সমাবেশ থেকে দূরে থাকারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই তারকা দম্পতি। যাত্রার এই করুণ দশা ভাবাচ্ছে তাঁকেও। “অনেক শিল্পী বা কর্মী আছেন, যাঁদের রোজগার শুধুমাত্র যাত্রার উপরেই নির্ভরশীল। আমাদের না হয় টেলিভিশন, ছবি বা ওটিটি-র হাত ধরে রোজগারের পথ খোলা আছে। এই মানুষগুলো কী অবস্থায় আছেন, ভেবেই শিউরে উঠি। কোভিড এসে যাত্রাপাড়ার কোমরটাই ভেঙে দিল।”

অন্য বিষয়গুলি:

Jatra Bengali Culture Jatra Troupe
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy