খোদ মুখ্যমন্ত্রীর নিষেধাজ্ঞাতেও চিঁড়ে ভিজল না।
টালিগঞ্জের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ভাবমূর্তি রক্ষা করতে কখনওই শ্যুটিং বন্ধ করা যাবে না, বার বার বলে এসেছেন তিনি। কলাকুশলী-প্রযোজকদের মধ্যে যা-ই সংঘাত হোক, শ্যুটিং চালু রেখেই সমস্যা মেটাতে হবে বলে মনে করেন মমতা। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এর উল্টোটাই দেখা গেল। শাসক দলের ঘনিষ্ঠ প্রযোজকদের একাংশ ও কোনও কোনও নেতার অনুগত কলাকুশলীদের সংঘাতে বেশ কয়েকটি সিরিয়ালের শ্যুটিং ভেস্তে গেল। সমস্যা মেটাতে বুধবার সকালে বৈঠকে বসছে প্রযোজক ও কলাকুশলীদের সংগঠন।
এ যাত্রায় সংঘাত বেধেছিল মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভাই স্বরূপের অধীনে থাকা ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ান্স অ্যান্ড ওয়ার্কাস-এর সঙ্গে টিভি সিরিয়াল প্রযোজকদের একাংশের। সেই প্রযোজকদের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ভেঙ্কটেশ ফিল্মস, নিশপাল সিংহ রানে বা রাজ চক্রবর্তীর প্রোডাকশনও রয়েছে। শ্যুটিং বন্ধ হয়ে যাওয়ায় টিভি সিরিয়াল নির্মাতাদের সংগঠনের তরফে ফেডারেশনের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, যা ঘটেছে তা অনৈতিক। প্রয়োজক ও ফেডারেশনের মধ্যে চুক্তির লঙ্ঘন হয়েছে। অন্য দিকে, প্রোডাকশন ম্যানেজার গিল্ডের তরফে পাল্টা প্রযোজকদের বিরুদ্ধে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ করা হয়েছে।
প্রোডাকশন ম্যানেজার গিল্ডের সভাপতি শৈলেশ্বর চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘প্রযোজকদের সংগঠনের সঙ্গে দু’বছর আগে আমাদের চুক্তি অনুযায়ী ১০ ঘণ্টা কাজের পর সব কলাকুশলীকে ওভারটাইম দিতে হয়। কিন্তু প্রোডাকশন ম্যানেজার এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজাররা এই সুবিধা পাচ্ছেন না।’’ গিল্ডের সহ-কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘‘ভেঙ্কটেশ, রানে বা রাজের প্রোডাকশন আপত্তি করলেও টেন সিনেমা, রবি ওঝা প্রোডাকশন, শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় বা সানি ঘোষের প্রোডাকশন ওই ওভারটাইমের টাকা দিতে সমস্যা করছে না।’’ প্রোডাকশন ম্যানেজারদের দাবি, ওভারটাইমের টাকা না-পাওয়ায় অন্য কলাকুশলীদের থেকে তাঁরা কম টাকা পাচ্ছেন। শৈলেশ্বরবাবুদের দাবি, আগেই চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন, জুন-জুলাই মাসে ১০ ঘণ্টার ডিউটির পরে আর কাজ করবেন না তাঁরা ।
ইন্ডাস্ট্রি সূত্রের খবর, এ দিন সন্ধ্যায় শ্যুটিং বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দেখে ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের মহেন্দ্র সোনি ওরফে মণি ভারতলক্ষ্মী স্টুডিওয় ঢুকে কলাকুশলীদের বার বার বলেন— শ্যুটিং চালু রাখতে হবে। শ্যুটিং বন্ধ রাখলে তাঁরা প্রোডাকশন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। গোয়েন্দা গিন্নি, পটলকুমার গানওলা, কিরণমালা, ভুতু, বেদেনি মলুয়ার মতো বহু সিরিয়ালের শ্যুটিং বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধে ৭টার পরে আর একটি শটও নেওয়া যায়নি।
কেন এমন হল? নিজেদের মধ্যে আলোচনায় কেন মিটিয়ে ফেলা গেল না, এই সমস্যা? জবাবে ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস এ দিন রাতে বলেন, ‘‘একটা মিটিংয়ে আছি। পরে কথা বলব।’’ পরে আর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। প্রযোজক রাজ চক্রবর্তী বা মণির সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। নিশপাল সিংহ রানে বলেন, ‘‘অহেতুক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এতে ইন্ডাস্ট্রিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’’ শ্রীকান্ত শুধু বলেন, ‘‘আমি খোঁজখবর নিচ্ছি।’’
ফেডারেশন বনাম প্রযোজকের সংঘাতে এর আগে কলকাতা, বোলপুর থেকে লন্ডনে পর্যন্ত ফিল্মের শ্যুটিং ভেস্তে গিয়েছে। কখনও আউটডোর শ্যুটিংয়ে টেকনিশিয়ানের সংখ্যা, কখনও বা নাচের দৃশ্যে ‘একস্ট্রা’র সংখ্যা দিয়ে বিরোধ বেধেছে। মাঝে দেবের একটি ছবির জন্য তুরস্কে ক’জন টেকনিশিয়ান নিয়ে যাওয়া হবে, তা নিয়েও বিতর্ক বেঁধেছিল। টালিগঞ্জে তৃণমূল নেতাদের দখলে থাকা ফেডারেশন চুন-বালি-সিমেন্টের সিন্ডিকেটের আদলে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কলাকুশলী ঠিক করে দিচ্ছে বলে প্রযোজকরা অনেকেই অভিযোগ করেন। ফেডারেশনের জুলুমবাজিতে বার বার শ্যুটিং বন্ধের অভিয়োগ উঠেছে। আরও এক বার, কলাকুশলী ও প্রযোজকদের বিরোধে শ্যুটিং পণ্ড হতে দেখা গেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy