‘নাট্যরঙ্গ’-এ ফিরলেন সুরজিৎ
মান-অভিমানের পালা শেষ করে ‘নাট্যরঙ্গ’-এ ফিরলেন অভিনেতা সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। ফিরলেন একেবারে পরিচালক হয়ে। যে পদে তাঁকে মনোনীত করলেন এত দিনের দল-প্রধান স্বপন সেনগুপ্তই। স্বপন-সুরজিৎ জুটি যে এত সহজে ভাঙার নয়!
পর্দায় অভিনয় যতটা না জীবনস্পর্শী, তার চেয়ে সুরজিতের অনেক বেশি আপন ছিল ‘নাট্যরঙ্গ’। তাই হয়তো ঘটনার অভিঘাতও বেশি করে বুকে বেজেছে তাঁর। আনন্দবাজার অনলাইনকে সুরজিৎ বললেন, “আমি দেখছি নাট্যরঙ্গ-এর ৫০ বছর হচ্ছে, এ দিকে আমায় কোনও ভাবে জড়ানো হচ্ছে না...। অভিমান হয়েছিল! আগে থেকেই জমছিল বলা যায়। আমার মনে হয়েছিল দীর্ঘ দিন ধরে দলে আমাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। বোঝা হচ্ছে না। স্বপনের সঙ্গে আমার ভুল বোঝাবুঝি এক সময় এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, আমি পদত্যাগপত্র পাঠাই। তখনই পুরনো সুতোয় টান পড়ে। স্বপন অনুরোধ করে না যেতে এবং নাট্যরঙ্গ-এর পরিচালনার দায়িত্ব আমার হাতে তুলে দেয়।”
২৫ বছর আগে, নির্দেশক স্বপন সেনগুপ্তের ডাকে এই নাট্যদলে যোগ দিয়েছিলেন সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর থেকে দলের সঙ্গে এমন ভাবে জড়িয়েছিলেন, যেন এমন বন্ধন যেন আর কিছুতে নেই। ‘চেতনা’, ‘স্বপ্নসন্ধানী’, ‘মুখোমুখি’-র সঙ্গে বিভিন্ন প্রযোজনায় কাজ করেছিলেন তিনি। তবু মনে মনে কোথাও চেয়েছিলেন নিজের একটি দল। ‘নাট্যরঙ্গ’ সেই জায়গাটা পূরণ করেছিল। সুরজিতের অভিনয় দেখতে আসতেন শঙ্খ ঘোষ, তরুণ মজুমদার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, প্রসেনজিৎ, দেবশ্রী।
আর সেই দল ছেড়েই চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন অভিনেতা। এ কি পুরোটাই গুরুত্ব না পেয়ে? সুরজিৎ জানান, ধারাবাহিকে অভিনয় করার পাশাপাশি দলের জন্য অনেক কিছু করেছেন তিনি। নামী অভিনেতাদের এনেছেন। গ্রান্টের ব্যবস্থা করেছেন দলের। অজস্র নাটকও লিখেছেন। এখন বয়স হচ্ছে, তাঁরও জীবনে স্থিতি প্রয়োজন। কাজ প্রয়োজন। অহমিকাও আগের চেয়ে বেড়েছে। এর মধ্যে স্বপনের সঙ্গে মানসিক টানাপড়েন সহ্য করতে পারেননি তিনি। তাঁর কথায়, “যেমন ছিলেন শম্ভু মিত্র-কুমার রায়, অজিতেশ-রুদ্রপ্রসাদ আবার সিনেমার ক্ষেত্রে সত্যজিৎ রায়-সুব্রত মিত্র। সেই সম্পর্কগুলো ভেঙেছে। ভাঙনের ভিড়ে স্বপন সেনগুপ্ত-সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা থিয়েটারকে অনেক নাটক পরিবেশন করেছে। ‘সিরাজদ্দৌলা’-য় বিভাস চক্রবর্তী থেকে শুরু করে বহু মানুষ অভিনয় করেছেন। ‘শাহজাহান’-এ দেবশংকর, গৌতম হালদারকে একসঙ্গে দেখা গিয়েছে। এই ঐতিহ্য স্বপন-সুরজিৎ জুটির তৈরি।”
সেই জুটি ভেঙে যাওয়ার হাত থেকে কে বাঁচালেন? সুরজিৎ জানান, তাঁর স্ত্রীই আসলে তাঁকে ফিরিয়ে এনেছেন। স্বপন আর তাঁর মধ্যে যাবতীয় ভুল বোঝাবুঝি মেটানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন ‘নাট্যরঙ্গ’-এর সদস্য অনিন্দিতাই। তবে আরও এক জনের ভূমিকা রয়েছে স্বপন-সুরজিৎকে মেলাতে। তিনি ‘মুখোমুখি’-র মঞ্চস্থপতি বিলু দত্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy