(বাঁ দিক থেকে) সুদীপ্তা চক্রবর্তী, অর্জুন চক্রবর্তী, চৈতি ঘোষাল, দিতিপ্রিয়া রায়। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
সরকারি হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় যদি তরুণী চিকিৎসকের নির্যাতন ও মৃত্যু হয়, তা হলে এ শহরে নারীদের নিরাপত্তা কোথায়? আরজি কর-কাণ্ডের পর প্রশ্ন উঠেছে রাজ্য জুড়ে।
বিষয়টি নিয়ে বৈঠকের পর ১৭ দফার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল নবান্ন। যেখানে রাতে মেয়েদের ডিউটি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বক্তব্য রেখেছিলেন। জানিয়েছিলেন, নিরাপত্তার খাতিরে রাতে মেয়েদের কাজ না করাই বাঞ্ছনীয়। সেই সময় এই বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন বাংলা বিনোদন দুনিয়ার খ্যাতনামীরা। জানিয়েছিলেন, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে হাসপাতাল— বহু বছর ধরে সর্বত্র রাতে কাজ করছেন মেয়েরা। এখন তাঁদের জন্য রাত নিষিদ্ধ হলে ফের পিছিয়ে যাবে সমাজ। সোমবার শুনানিতে একই প্রশ্ন তুলল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। ওই নির্দেশিকা সংশোধন করার জন্য রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নির্দেশ, রাজ্যকে ওই বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করতে হবে। তাঁর মন্তব্য, “নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আপনাদের। মহিলারা রাতে কাজ করতে পারবেন না, এ কথা বলতে পারেন না।” রাজ্য সরকারের জারি করা ওই বিজ্ঞপ্তির যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, “বিমান পরিষেবা, সেনায় অনেক মহিলা রাতে কাজ করেন। ফলে এই বিজ্ঞপ্তি কেন?”
আনন্দবাজার অনলাইন ফের অভিনয় দুনিয়ার ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। সুপ্রিম কোর্টের এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী, অর্জুন চক্রবর্তী, দিতিপ্রিয়া রায় ও চৈতি ঘোষাল।
সুদীপ্তার দাবি, “রাজ্য সরকারের এই বিজ্ঞপ্তিতে সুপ্রিম সিলমোহর পড়লে বিচলিত হতাম। একুশ শতকে এসে নারীর ভাগ্য যদি শুধুই দিন হয় তা হলে এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কিছুই হতে পারে না। সমানাধিকার চাইলে পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নারীও কাজ করবে। এটাই শুরু থেকে চেয়ে এসেছি। ভাল লাগছে, সেই মতে সুপ্রিম কোর্ট সমর্থন জানাল।” একই সঙ্গে নারী নিরাপত্তার কারণে ‘রাত্রি সাথী’ অ্যাপ চালুর কথা সে সময় ঘোষণা করেছিল রাজ্য। এই প্রসঙ্গে অভিনেত্রী জানিয়েছেন, মাথাপিছু প্রত্যেক নারী নিরাপত্তা দেওয়া কোনও রাজ্য সরকারের পক্ষেই সম্ভব নয়। সেই জায়গা থেকে তাঁর পরামর্শ, “এই ঘটনার পর রাতারাতি দুনিয়া বদলে ধর্ষণ, নারী নিগ্রহ বন্ধ হয়ে যাবে না। তাই সমাজের কিছু দায় থেকে যায়। প্রত্যেক পরিবারে রোজ বিষয়টি নিয়ে যদি আলোচনা হয় তা হলেও পুরুষ সদস্যেরা বুঝবেন, নারী শুধুই ভোগ্য নন। ঠিক যেমন ধর্ষক মাত্রেই পুরুষ হলেও সব পুরুষ ধর্ষক নন।”
প্রায় একই বক্তব্য অভিনেতা অর্জুন চক্রবর্তীরও। তিনিও খুশি সুপ্রিম রায় জেনে। বললেন, “রাজ্য সরকারের সে দিনের বিজ্ঞপ্তির পর সে দিনও বিরোধিতা করেছিলাম, আগামী দিনে এই ধরনের কোনও বিজ্ঞপ্তি বা নিয়ম চালু হলে বিরোধিতা করব। দিন-রাতের এই ভাগাভাগি আমার পছন্দ নয়।” পছন্দ নয় বলেই নারীদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও তাঁর আপত্তি আছে। অর্জুনের কথায়, “আজ আমি খুন হয়ে গেলে আমার পরিবার কি ন্যায়বিচার চাইবে না? অর্থাৎ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে নিরাপত্তার প্রয়োজন। কেবল নারীর জন্য বাড়তি সুরক্ষা মানেই লিঙ্গভেদ সমর্থন করা।” এ-ও জানিয়েছেন, নারীদের নিরাপত্তার বদলে যারা অপরাধী তাদের জন্য দ্রুত, কড়া শাস্তির ব্যবস্থা হোক। এটা হলেই ভাল থাকবেন নারী।
দিতিপ্রিয়ার কণ্ঠে রীতিমতো বিদ্রুপের সুর। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “ধর্ষণ বা নারী নিগ্রহ দিনে হবে না শুধুই রাতে হবে, আমাদের এমন নিশ্চয়তা কে দিতে পারেন?” তাঁর পাল্টা কটাক্ষ, এই ধরনের কথার কোনও সারবত্তা নেই। ফলে, হাসি পাচ্ছে তাঁর। একই সঙ্গে কষ্টও পাচ্ছেন। ২০২৪-এ এসে যদি রাতে মেয়েরা কাজ করতে না পারেন এর থেকে লজ্জার আর কিছুই হতে পারে না! কারণ, এখন প্রত্যেক ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি মেয়েরাও সমানতালে কাজ করেন। দিতিপ্রিয়া তাই খুশি সুপ্রিম-রায়ে। একই ভাবে অধীর অপেক্ষা তাঁর, কত দ্রুত রাজ্য সরকার এই বিজ্ঞপ্তিতে বদল আনবে।
প্রশ্ন তুলেছেন পরিচালক-অভিনেত্রী চৈতি ঘোষালও। অভিনেত্রীর কথায়, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও মহিলা। তিনিও প্রয়োজনে রাতে রাস্তায় বেরোন। তা হলে কি তিনি এই ধারা থেকে অব্যাহতি পাবেন?” চৈতির দাবি, তিনি যদি রাস্তায় বেরোতে পারেন তা হলে সাধারণ মানুষেরও এই অধিকার রয়েছে। উদাহরণ হিসাবে তিনি চিকিৎসক, নার্স, বিনোদন দুনিয়া, সেনাবাহিনী-সহ প্রত্যেক ক্ষেত্রের কথা বলেন। জানান, নারীদের রাতের ডিউটি বন্ধ হলে ‘সমানাধিকার’ শব্দটিই অভিধান থেকে মুছে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy